ভিটামিন
ভিটামিন একটি জৈব রাসায়নিক উপাদান যা দেহে খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ভিটামিন খাদ্যে অতি সামান্য পরিমাণে থেকে শর্করা, আমিষ, চর্বি জাতীয় খাদ্য বিপাকে সাহায্য করে। তাই মানবদেহের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য ভিটামিন অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান।
ভিটামিন কত প্রকার নিম্নে দেয়া হলো:
দ্রবণ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ভিটামিনকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
১। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন- ভিটামিন-বি কমপেস্নক্স ও ভিটামিন-সি
২। স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিন-এ, ভিটিামিন-ডি, ভিটামিন-ই এবং ভিটামিন-কে
১। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন :
পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো হলো ভিটামিন-বি কমপে স্নক্স ও ভিটামিন-সি। ১২টি বি ভিটামিনকে একত্রে ভিটামিন বি কমপে স্নক্স বলা হয়। ভিটামিন-বি কমপ্লেক্সের মধ্যে ভিটামিন বি ১ (থায়ামিন), ভিটামিন বি২ (রিবোফ লাভিন), ভিটামিন বি৫ (নিয়ামিন), ভিটামিন বি ৬ (পিরিডক্সন), ভিটামিন বি ১২ (কোবলামিন) গুরুত বপূর্ণ। দেহের স্বাভাবিক সুস্থতা, বৃদ্ধি, সণায়ু ও মসিত্মষ্কের কাজ, বিপাক, প্রজনন ইত্যাদি কাজে ভিটামিন বি কমপে স্নক্স আবশ্যক। ভিটামিন সি, বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিডকে স্কার্ভি প্রতিরোধক ভিটামিন বলে।
থায়ামিন বা ভিটামিন বি ১
উৎস : ঢেঁকি ছাঁটা চাল, সিদ্ধ ধানের চাল, গম, অংকুরিত ছোলা, মটরশুঁটি, চীনাবাদাম, যব, ঈস্ট, চালের কুঁড়া ইত্যাদি থায়ামিনের ভালো উৎস।
অভাবজনিত অবস্থা : দীর্ঘদিন থায়ামিনের অভাবে বেরি বেরি রোগ দেখা দেয়। এছাড়া সণায়ুর দুর্বলতা, অরুচি, মানসিক অবসাদ, ক লামিত্মইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
দৈনিক চাহিদা: শিশুদের ০.৫-০.৭ মিলিগ্রাম, বড়দের ১.২-১.৫ মিলিগ্রাম এবং গর্ভবতী মায়েদের ১.৫-১.৭ মিলিগ্রাম।
রিবোফ্লাভিন বা ভিটামিন বি ২
উৎস : কমলা ও হলুদ বর্ণের শাকসবজি যেমন মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে, কুমড়োর ফুল, ডিমের কুসুম, দুধ, বাদাম, যকৃত রিবোফ্লাভিনের ভালো উৎস।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে জিহবায়, ঠোঁটের কোণায় ও মুখের ভিতরে ঘা দেখা দেয়। ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
দৈনিক চাহিদা : প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক ১.৭ মিলিগ্রাম ও নারীর ১.৩ মিলিগ্রাম প্রয়োজন। শিশুদের দৈনিক ০.৮ মিলিগ্রাম এবং কিশোর কিশোরীদের যথাক্রমে ২.০ মিলিগ্রাম ও ১.৩ মিলিগ্রাম প্রয়োজন। ভিটামিন বি ২ অভাবে মুখে ঘা হতে পারে।
নিয়াসিন বা ভিটামিন বি ৫
উৎস : মাংস, কলিজা, গম বা আটা, ডাল, বাদাম, তৈলবীজ, ছোলা ইত্যাদি নিয়াসিনের ভালো উৎস।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে পেলেগ্রা রোগ হয়। ফলে, ত্বকে লালচে দাগ পড়ে ও খসখসে হয়ে যায়।
দৈনিক চাহিদা : প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষের ১৮ কিলোগ্রাম, নারীর ১৩ মি. গ্রাম, গর্ভবর্তী মায়ের ১৫ মি. গ্রাম এবং প্রসূতি
মাতার ১৮ মি. গ্রাম রিবোফ্লাভিন প্রয়োজন হয়।
পিরিডক্সিন বা ভিটামিন বি ৬
উৎস : চাল, আটা, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, ছোলা, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে অরুচি, বমিভাব ও রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
দৈনিক চাহিদা : প্রাপ্ত বয়স্কদের চাহিদা দৈনিক ১.৪-২.০ মি. গ্রাম।
কোবালামিন বা ভিটামিন বি ১২
উৎস : কলিজা, দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, পনির ইত্যাদি।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে রক্তশূন্যতা হয় ও সণায়ুতন্ত্রের ক্ষয় সাধিত হয়।
দৈনিক চাহিদা : প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ৪-৮ মি. গ্রাম প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
উৎস : ভিটামিন সি টক স্বাদ বিশিষ্ট। টাটকা শাকসবজি ও ফলে ভিটামিন সি থাকে। আমলকি, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, কাঁচা, মরিচ, লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, টমেটো, আনারস, কামরাঙা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। শুকনা ফল ও টিনজাত খাদ্যে ভিটামিন সি থাকে না।
কাজ :
১। দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখে
২। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে
৩। ক্ষতস্থান দ্রুত পুনর্গঠন করে
৪। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে
৫। আমিষ ও সেণহ পদার্থ বিপাকে সাহায্য করে
অভাবজনিত অবস্থা : দীর্ঘদিন ধরে এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়, ত্বকে ঘা হয়, ক্ষত শুকাতে দেরি হয়। দাঁত দুর্বল হয়ে অকালে ঝরে পড়ে, অস্থির গঠন মজবুত হয় না, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় ও সহজে ঠান্ডা লাগে। এছাড়া চুল পড়ে ও অরুচি হয়।
দৈনিক চাহিদা : দৈনিক শিশুদের ২০ মি. গ্রাম, প্রাপ্ত বয়স্কদের ৩০ মি. গ্রাম এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ৫০-৬০ মি. গ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
২। স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিন :
ভিটামিন-এ, ডি, ই ও কে সেণহে দ্রবণীয় ভিটামিন। এসব ভিটামিন কেবল ফ্যাটেই দ্রবীভূত হয়, পানিতে নয়।
ভিটামিন এ
উৎস : ভিটামিন এ এর ভালো প্রাণিজ উৎসগুলো হলে-ডিম, দুধ, ছানা, মাখন, ঘি, পনির, কলিজা, ও কড মাছের তেল। গাজর, মিষ্টিকুমড়া, পাকা আম, গাঢ় সবুজ শাক, পাকা পেঁপে, কাঁঠাল এবং লাল শাক, কচু শাক, পুঁই শাক, পাট শাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক, পুদিনা পাতা ইত্যাদি ভিটামিন এ এর উদ্ভিজ্জ উৎস।
কাজ :
১। দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
২। দাঁত ও অস্থি গঠনে সহায়তা করে
৩। দেহের বিভিন্ন আবরককলা যেমন- ত্বক, চোখের কর্ণিয়া, বৃক্ক ইত্যাদি স্বাভাবিক ও সজীব রাখে।
৪। রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। দীর্ঘদিনের অভাবে ব্যক্তি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভিটামিন ডি
উৎস : সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে আমাদের ত্বকের নিচে কোলেস্টেরল নামক সেণহ পদার্থ থেকে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। একমাত্র প্রাণিজ উৎস থেকেই এই ভিটামিন পাওয়া যায়। সামুদ্রিক মাছের তেল, যকৃত, প্রাণিজ তেল, চর্বি, ডিম, মাখন, ঘি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
কাজ : হাঁড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কাজে সহায়তা করে।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে দাঁত উঠতে দেরি হয়, অস্থি বা হাঁড় গঠন সুদৃঢ় হয় না। শিশুদের রিকেট রোগ হয়। শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে।
দৈনিক চাহিদা : ১-৫ বছরের শিশুদের ৪০০ আই.ইউ (ও.ট.)। প্রাপ্ত বয়স্ক ও অন্যান্য বয়সের ছেলে মেয়েদের ২০০ আই.ইউ এবং গর্ভবতী ও প্রসূতিমায়েদের ৪০০ আই. ইউ।
ভিটামিন ই
উৎস : বাদাম, অংকুরিত ছোলা, বীজ জাতীয় খাদ্য, পামতেল, সূর্যমুখী তেল, লেটুস পাতা ইত্যাদি ভিটামিন ই এর ভালো উৎস।
কাজ : এটি একটি এ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ধমনীতে চর্বি জমা রোধ করে, ত্বক সুস্থ রাখে, সন্তান জনমদান ক্ষমতা দেয়।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে জরায়ুর মধ্যে ভ্রূণের মৃত্যু হতে পারে।
দৈনিক চাহিদা : প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ৫-১০ মিলিগ্রাম এবং শিশু কিশোরদের ১০-৩০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন কে
উৎস : সবুজ শাক সবজি, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা, ডিমের কুসুম, কলিজা, মাছ, মাংস-এর ভালো উৎস।
কাজ : রক্তপাত নিরাময়ে সাহায্য করে।
অভাবজনিত অবস্থা : এর অভাবে গর্ভবতী মহিলাদের রক্তপাত বেশি হয়।
দৈনিক চাহিদা : শিশুদের দৈনিক ২০ মাইক্রোগ্রাম, প্রাপ্ত বয়স্কদের ৪০ মাইক্রোগ্রাম এবং গর্ভবতীদের ১-২ মিলিগ্রাম প্রয়োজন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions