Home » » জীবন সঙ্গীত কবিতা

জীবন সঙ্গীত কবিতা

জীবন সঙ্গীত কবিতা

ভূমিকা:
‘জীবন সঙ্গীত’ কবিতাটি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদমূলক রচনা থেকে গৃহীত। কবিতাটি মার্কিন কবি Henry Wadsworth Longfellow (১৮০৭-১৮৮২)-এর 'A Psalm of life' শীর্ষক ইংরেজি কবিতার ভাবানুবাদ। কবিতাটিতে অত্যন্ত মূল্যবান ও ক্ষণস্থায়ী মানবজীবনের প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে যথার্থ কর্মের মাধ্যমে জগতে টিকে থাকার ধারণা লাভ করা যাবে। জীবনের প্রকৃত মূল্য অনুধাবন করে সংসারে নিজ নিজ দায়িতব পালনে মহান ব্যক্তিদের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে বরণীয় হওয়ার প্রক্রিয়া কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে।


কবিতা:

জীবন সঙ্গীত

-হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

বলো না কাতর স্বরে বৃথা জনম এ সংসারে
এ জীবন নিশার স্বপন,
দারা পুত্র পরিবার, তুমি কার কে তোমার
বলে জীব করো না ক্রন্দন;
মানব-জনম সার, এমন পাবে না আর
বাহ্যদৃশ্যে ভুলো না রে মন;
কর যত্ন হবে জয়, জীবাত্মা অনিত্য নয়,
ওহে জীব কর আকিঞ্চন।
করো না সুখের আশ, পরো না দুখের ফাঁস,
জীবনের উদ্দেশ্য তা নয়,
সংসারে সংসারী সাজ, করো নিত্য নিজ কাজ,
ভবের উন্নতি যাতে হয়।
দিন যায় ক্ষণ যায়, সময় কাহারো নয়,
বেগে ধায় নাহি রহে স্থির,
সহায় সম্পদ বল, সকলি ঘুচায় কাল,
আয়ু যেন শৈবালের নীর।
সংসারে-সমরাঙ্গনে যুদ্ধ কর দৃঢ়পণে,
ভয়ে ভীত হইও না মানব;
কর যুদ্ধ বীর্যবান, যায় যাবে যাক প্রাণ
মহিমাই জগতে দুর্লভ।
মনোহর মূর্তি হেরে, ওহে জীব অন্ধকারে,
ভবিষ্যতে করো না নির্ভর;
অতীত সুখের দিন, পুনঃ আর ডেকে এনে,
চিন্তা করে হইও না কাতর।
মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন,
হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য করে স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে
আমরাও হব বরণীয়
সমর-সাগর-তীরে, পদাঙ্ক অঙ্কিত করে
আমরাও হব হে অমর;
সেই চিহ্ন লক্ষ করে, অন্য কোনো জন পরে,
যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।
করো না মানবগণ, বৃথা ক্ষয় এ জীবন,
সংসার-সমরাঙ্গন মাঝে;
সঙ্কল্প করেছ যাহা, সাধন করহ তাহা,
রত হয়ে নিজ নিজ কাজে।



কবিতার সারসংক্ষেপ:
মানুষের জীবন পরম মূল্যবান। এ জীবন স্বপ্ন বা মায়া নয়; অকারণও নয়। দুঃখের জন্য হা-হুতাশ বা সুখের জন্য কাতরতা দেখিয়ে লাভ নেই। বরং কর্তব্যকর্মে অগ্রসর হয়ে বাধাবিঘ্ন জয় করাই সফলতার উপায়। মহাপুরুষদের অনুসরণ করা জরুরি। তাহলে আমরাও তাঁদের মতো হতে পারব। জীবনে সাফল্য লাভের জন্য দরকার বিপদ মোকাবেলা করা আর সঙ্কল্পে দৃঢ় থাকা।

নির্বাচিত শব্দের অর্থ ও টীকা :
অনিত্য- অস্থায়ী; যা চিরকালের নয়। আকিঞ্চন- চেষ্টা; আকাঙক্ষা। আয়ু যেন শৈবালের নীর- শেওলার ওপর পানির ফোঁটার মতো ক্ষণস্থায়ী। আশ- আশা। কাতর স্বরে- দুর্বল কণ্ঠে; করুণভাবে। ক্রন্দন- কান্না। ঘুচায়- অতিবাহিত বা অতিক্রান্ত হওয়া। জীবাত্মা- মানুষের আত্মা; আত্মা যদিও অমর, কিন্তু মানুষের মৃত্যু অনিবার্য, কাজেই দেহ ছেড়ে আত্মা একদিন চলে যাবে, চিরকাল দেহকে আঁকড়ে থাকতে পারবে না। দারা- স্ত্রী। দুর্লভ- দুষ্প্রাপ্য; পাওয়া কঠিন। দৃঢ়পণে-অটল সংকল্প। ধ্বজা- পতাকা; নিশান। নিশার স্বপন- মিথ্যা বা অসার ভাবনা। পদাঙ্ক- কোনো মহৎ ব্যক্তির কৃতকর্ম বা চরিত্র। প্রাতঃস্মরণীয়- সকাল বেলায় স্মরণ করার যোগ্য; অর্থাৎ সকলের শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। ফাঁস- ফাঁসি; ইচ্ছা অনুযায়ী শক্ত বা শিথিল করা যায় এমন রজ্জু বা দড়ির বাঁধন। বরণীয়- সম্মানের যোগ্য। বাহ্যদৃশ্যে- বাইরের জগতের চাকচিক্যময় রূপে বা জিনিসে। বীর্যবান- শক্তিমান। বৃথা- ব্যর্থ। মহাজ্ঞানী মহাজন- কীর্তিমান মহৎ ব্যক্তি। ভবের-জগতের; সংসারের। মহিমা- গৌরব। যশোদ্বার- খ্যাতির দ্বার। সমরাঙ্গনে- যুদ্ধক্ষেত্রে (কবি মানুষের জীবনকে যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন)। সংসারে-সমরাঙ্গনে- যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী সৈনিকের মতো সংসারেও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হবে। সার- একমাত্র সম্বল। স্বপন- রাতের স্বপ্নের মতোই মিথ্যা বা অসার। স্বীয়- নিজ; আপন।

কবি পরিচিতি:
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ১৭ এপ্রিল হুগলি জেলার গুলিটা রাজবলস্নভহাট গ্রামে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। হেমচন্দ্রের পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলির উত্তরপাড়া গ্রামে। তাঁর পিতা কৈলাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন খুব দরিদ্র। হেমচন্দ্র কলকাতার খিদিরপুর বাংলা স্কুলে পড়াকালে আর্থিক সংকটে পড়েন ও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর অত্যন্ত মেধাবি হেমচন্দ্র কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারীর আশ্রয়ে ইংরেজি শেখেন এবং হিন্দু স্কুলে ভর্তি হয়ে জুনিয়র ও সিনিয়র উভয় পরীক্ষায় বৃত্তি পান। পরে তিনি ১৮৫৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সণাতক ও ১৮৬৬ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬১ সালে হাইকোর্টের উকিল হন। ১৮৬২ সালে মুন্সেফ হিসেবে নিয়োগ পেলেও তা ছেড়ে দিয়ে আবার ওকালতি শুরু করেন। ১৮৯০ সালে হাইকোর্টের সরকারি উকিল হন। কর্মজীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও শেষজীবনে আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। হেমচন্দ্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো তিনি যেমন গুরুগম্ভীর আখ্যায়িকা কাব্য রচনা করেছিলেন তেমনি আবার সহজ সুরের খ-কবিতা, ওজস্বিনী স্বদেশসঙ্গীত এবং লঘু কবিতাও রচনা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর রচনার অনুরাগী ছিলেন এবং কিশোর রবীন্দ্রনাথের লেখায় তাঁর ছায়া পড়েছিল। তাঁর জনপ্রিয়তার মূলে ছিলো স্বদেশচিন্তা ও উনিশ শতকের বাঙালির সমাজ ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের বলিষ্ঠ রূপায়ণ, ভাষা ও ছন্দের অনর্গলতা। শেষজীবনে তিনি অন্ধ হয়ে যান এবং ১৯০৩ সালের ২৪ মে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ :
চিন্তাতরঙ্গিণী (১৮৬১), বীরবাহু (১৮৬৪), বৃত্রসংহার (১৮৭৫), আশাকানন (১৮৭৬), ছায়াময়ী (১৮৮০)।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Video Editing Course

Adobe Premiere Pro

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 12,000/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Advanced Excel

VLOOKUP, HLOOKUP, Advanced Functions and many more...

Duration: 2 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 6,500/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*