পলিথিন ও টেরিলিন তৈরির ইতিহাস
পলিথিন ও টেরিলিন
একসময় মানুষের ধারণা ছিল রসায়নাগারে প্রকৃতিজাত জিনিষ তৈরী করা সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান যুগে মানুষ কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন এই কয়েকটি মৌলিক পদার্থের সহযোগে তৈরী করেছে লক্ষ লক্ষ জৈব পদার্থ। তুলা, পাট, রেশম এইসব প্রকৃতিজাত পদার্থগুলিই এক সময় মানুষের বস্ত্রের চাহিদা মেটাত, কিন্তু বর্তমানে প্রকৃতিজাত তন্তুর স্থান দখল করে নিচ্ছে কৃত্রিম তন্তু। এই কৃত্রিম তন্তুর মধ্যে টেরিলিনের চাহিদাই সবচেয়ে বেশী। টেরিলিনের নানা দেশে নানারকম নাম।
টেরিলিন তৈরী হয় অজৈব উপাদন থেকে। সেটি হল পলিস্টার নামক এক বহুযৌগিক পদার্থ। জৈব বা অজৈব অ্যাসিড ও অ্যালকোহলের ক্রিয়ায় যে যৌগিক পদার্থ তৈরী হয় তাকেই বলে এস্টার। বিভিন্ন ধরণের অ্যাসিড ও অ্যালকোহলের ক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরণের এস্টার তৈরী হয়। তার মধ্যে ইথিলিন টেরপথ্যালেট এস্টার থেকেই তৈরী হয় টেরিলিন। | কোনো এস্টার অণুকে একক করে বারবার সংযোজন করে শেষে উৎপন্ন হয় এক বিরাট এস্টার অণু, তখন সেটাকে বলে পলিএস্টার। টেরিলিন তৈরীর জন্য ইথিলিন টেরিপথ্যালেট এস্টার অণু তৈরী হয় টেরোপথ্যালিক অ্যাসিড ও ইথিলিন গ্লাইকলের বিক্রিয়ায়। এবার ইথিলিন টেরিপথ্যালেট এস্টারের অণুকে বারবার সংযোজন করে যে পলিএস্টার তৈরী হয় তার নাম টেরিলিন।
টেরিলিন তৈরী হওয়ার পর তাকে গলিত অবস্থায় যন্ত্রের অতি সূক্ষ্ম। ছিদ্রের ভেতর দিয়ে পাঠিয়ে সুতোর আকৃতি দেওয়া হয়। এবার এই রঙহীন তন্তুকে রঙ করার জন্য তন্তুর ওপর কোনো রঙের প্রলেপ লাগিয়ে গরম করা হয়, ফলে রঙের অণুগুলি তন্তুর মধ্যে ঢুকে পড়ে ও সহজে বের হতে পারে না। তাই রঙটাও পাকা হয়। এই রঙিন তন্তুকে প্যাকিং করে মেসিনের মাধ্যমে পাকিয়ে সুতো তৈরী হয়। সেই সুতো দিয়ে তৈরী হয় টেরিলিন কাপড়। কাপড় ছাড়াও টেরিলিন দিয়ে দড়ি, মাছ ধরার জাল, নৌকোর পাল, প্রভৃতি তৈরী হয়।
যখন কোনো রাসায়নিক এককের পুনঃপুনঃ সংযোগের ফলে একটি বৃহৎ অণু সৃষ্টি হয় তখন তাকে বলে পলিমার। ইথিলিন অণুতে আছে দুটি কার্বন ও চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু। এই একককে ৩০ থেকে ৪০ বায়ুমণ্ডল চাপে উত্তপ্ত ক্রোমিক অক্সাইড নামক প্রভাবকের উপস্থিতিতে ১২০° সেন্টিগ্রেড থেকে ১৫০° সেন্টিগ্রেডে উষ্ণতায় বারবার সংযোগের ফলে যে বৃহত্তম আণবিক ওজনের অতিকায় কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত অণু তৈরী হয় তারই নম পলিইথিলিন। এর ফর্মুলা হল (C2H4)n। n এখানে একটি অজানা বৃহত্তম সংখ্যা।
পলিথিন দিয়ে ব্যাগ, পাত্র, টেবিল ক্লথ, নল, খেলনা সব কিছুই তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে আজকাল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions