Home » » অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ইতিহাস

অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ইতিহাস

অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ইতিহাস

অণুবীক্ষণ যন্ত্র (১৬৭৩) -অ্যান্টনি ভ্যান লীবেন হুক (১৬৩২-১৭২৩)

ষোড়শ শতাব্দীতে গ্যালিলিও দূরবীণ আবিষ্কার করলেন এবং তার দূরবীণ নিয়ে নানা পরীক্ষা করতে করতে তিনি না জেনেই লেন্সগুলির ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলেন। তার ফলে দূরবীণে যেখানে দূরের জিনিসকে বড় করে দেখা যায় সেখানে কাছের জিনিসকে বড় করে দেখা যেতে লাগল। এর থেকে তার মাথায় অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরীর চিন্তা আসে। পনেরো বছর ধরে তিনি যন্ত্রটিকে নিখুঁত করার নানা চেষ্টা করেন। তবু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আধুনিক রূপ তিনি দিতে পারেননি। ১৫৯০ সালে জাকারিয়াস জ্যানসন যে যন্ত্রটি তৈরী করেন সেটির সঙ্গে বর্তমানের আধুনিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের অনেক মিল পাওয়া যায়। তবে এই যন্ত্রটিযে বিজ্ঞান জগতে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিতে পারবে এবং কত প্রয়োজনীয় কাজে এ যন্ত্রটিকে লাগানো যেতে পারে সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। | অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রকৃত আবিষ্কার হয় সপ্তদশ শতাব্দীতে। এক ওলন্দাজ চশমার দোকানদার অ্যান্টনি ভ্যান লীবেন হুক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের গুরুত্ব বিজ্ঞান জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

চশমার দোকানদার হলেও লীবেন হুকের আকর্ষণ ছিল দৃষ্টিতত্ত্ব বা আলোক বিজ্ঞানের প্রতি। কাচকে সযত্নে ঘষে ঘষে তিনি নানা ধরনের লেন্স বানাতেন এবং তামার পাতের তৈরী নলের মুখে লেন্স বসিয়ে এটা ওটা পরীক্ষা করে দেখতেন। এভাবে কাচ ঘষে লেন্স বানাতে তিনি এতই দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। যে তার তৈরী বিবর্ধক কাচ দিয়ে যে জিনিসকে তিনি দেখতে চাইতেন তা

সেই জিনিসের নিজস্ব আকারের ২০০ গুণ বড় করে দেখা যেত। তার এই যন্ত্রটি দিয়ে তিনি প্রাণীর চামড়া, ললাম, চুল সব কিছুই পরীক্ষা করে দেখতেন। হঠাৎ তার একদিন কি খেয়াল হল খোলা জায়গায় পড়ে থাকা কিছুটা পচা জল এনে কাচের ওপর রেখে ঐ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করলেন। দেখে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। জলের মধ্যে কত কি কিবিল্ করছে। এবার কিছুটা পরিষ্কার জল কাচের ওপর রেখে তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন তাতেও কিসব কিলবিল করছে বটে তবে পচা জলের তুলনায় তাদের পরিমাণ অনেক কম। এবার তিনি কিছুটা স্বচ্ছ পরিষ্কার জলকে কিছুদিন খোলা জায়গায় রেখে তারপর পরীক্ষা করে দেখলেন পরিষ্কার জলের তুলনায় অনেক বেশী। কিসব কি বিল করছে। এবং সেগুলি নানা আকারের ও নানা মাপের। আবার একে অন্যের সাথে অদ্ভুত ভাবে ধাক্কা খেয়ে সরে যাচ্ছে। এর থেকে তার ধারণা হয় যে জলে অনেক ছোট ছোট জীব বাস করে। এগুলি অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখা যায় না। দূষিত জলে এরা আপনা থেকে জন্মায় তাই পরিষ্কার জলের তুলনায় দূষিত জলে এদের পরিমাণ বেশী থাকে। তার দেখা ঐ ছোট ছোট জীবগুলির মধ্যে সবচেয়ে ছোটগুলিকেই পরবর্তীকালে জীবাণু নাম দেওয়া হয়েছিল। | লীবেন হুক তো বৈজ্ঞানিক ছিলেন না, আর বিদ্বান লোকেদের লিখিত ভাষা ল্যাটিনও তিনি জানতেন না, তাই বিজ্ঞানের আলোচনা বিষয়ক বই পড়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। অথচ এই নতুন জীব সম্পর্কে তার জানার উৎসাহ ক্রমশই বেড়ে চলছিল।

সকলে তাকে পরামর্শ দিল লণ্ডনের রয়্যাল সোসাইটীর সাথে যোগাযোগ করে তার আবিষ্কারের কথা লিখে জানাতে। ১৬৭৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি লেন্সের | মধ্য দিয়ে যেসব অদ্ভুত জীব দেখেছিলেন তার বিশদ বিবরণ দিয়ে রয়্যাল সসাসাইটীতে চিঠি লেখেন। সে সময় বহু বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা ছিলেন রয়্যাল সসাসাইটীর সদস্য, তারা এমন আশ্চর্য আবিষ্কারের কথা জানতে পেরে অবাক হলেন আবার লীবেন হুক এক অতি সাধারণ দোকানদার বলে তাঁকে পাত্তাও দিলেন না, তবু একেবারেই নিরুৎসাহিত করলেন না তাকে। তারা লীবেন হুককে তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কিত লেখা চালিয়ে যেতে বললেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *