নাইট্রোগ্লিসারিন আবিষ্কার এর ইতিহাস
নাইট্রোগ্লিসারিন (১৮৪৭) -সোব্রেরা
বিস্ফোরক পদার্থ হিসেবে মানুষ একসময় কেবল বারুদকেই বুঝত। এই বারুদে আগুন দিলেই ঘটত বিস্ফোরণ। এরপর ১৮৩২ সালে রসায়ন বিজ্ঞানী হেনরী ব্রেকনন্ট তরল পদার্থ নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে পেলেন এক বিস্ফোরক পদার্থ। এই পদার্থে বিস্ফোরণ ঘটান জন্য আগুন দেবার দরকার হত না। নাইট্রিক অ্যাসিড থেকে বিস্ফোরক পদার্থ তৈরী হতে পারে এটা জানার পরে নাইট্রিক অ্যাসিড নিয়ে গবেষণাও বেড়ে গেল।
১৮৩৯ সালে ডুমাস ও পেলিউস নামক দুজন বিজ্ঞানী তুলা ও কাগজের সাথে নাইট্রিক অ্যাসিড মিশিয়ে একটি বিস্ফোরক পদার্থ তৈরী করলেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখানেই না থেমে আরো উন্নত বিস্ফোরক আবিষ্কার করার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
১৮৪৭ সালে একদিন ইটালীর দুই রসায়ন বিজ্ঞানী অ্যাস্কানি ও সোব্রেরা। নাইট্রিক অ্যাসিড ও ধূমায়মান সালফিউরিক অ্যাসিডের মিশ্রণে ফোঁটা ফোঁটা গ্লিসারিন ফেলে পরীক্ষা চালাছিলেন। কিছুক্ষণ এভাবে গ্লিসারিন ফেলার পর তাঁরা দেখলেন মিশ্রণ থেকে হাল্কা হলুদ রঙের একটি তৈলাক্ত তরল পদার্থ পাত্রের তলায় আলাদাভাবে জমা হতে লাগল।
ঐ পদার্থের কি বৈশিষ্ট্য তা জানার জন্য সোব্রেরা একটুখানি মুখে দিয়ে দেখলেন পদার্থটিতে মুখ জ্বালা করে। পদার্থটি যে বিষাক্ত এটিও তিনি পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন। পদার্থটির কোন ভৌত বা রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে কি না জানার জন্য তিনি পদার্থটিকে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করতে লাগলেন। পদার্থটির উষ্ণতা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশী হতেই হলুদ রঙ পরিবর্তিত হয়ে পদার্থটি লাল রঙের হয়ে গেল। বর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করার সময় হঠাৎ ঘটে গেল প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। অবশ্য প্রাণে বেঁচে গেলেন সোব্রেরা। তিনি বুঝলেন পদার্থটি আঘাত পেলে বা উত্তপ্ত হলে বিস্ফোরণ ঘটায়। নতুন এই পদার্থটির নাম দেওয়া হল নাইট্রোগ্লিসারিন।
পরবর্তীকালে এই নাইট্রোগ্লিসারিনকেই নিরাপদভাবে ব্যবহার করার উপায় আবিষ্কার করেছিলেন আলফ্রেড বারনার্ড নোবেল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions