ফনোগ্রাফ কে আবিষ্কার করেন?
ফনোগ্রাফ (১৮৭৭)
-টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী, মা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা, তাঁদের বারো বছরের ছেলে স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়ে স্বনির্ভর হওয়ার আশায় শুরু করল গ্র্যাণ্ড ট্র্যাঙ্ক রেল রোডে খবর কাগজ ফেরিওয়ালার কাজ। পনেরো বছর বয়সে একটি মুদ্রণ যন্ত্র কিনে রেল গাড়ীর পড়ে থাকা কামরার মধ্যে নিজেই হেরাল্ড’ নামে কাগজ প্রকাশ করতে লাগল। পাশাপাশি চলতে লাগল রাসায়নিক গবেষণার কাজ। এক ভদ্রলোকের সাহায্যে টেলিগ্রাফ পদ্ধতি শিখে নিয়ে একুশ বছর বয়সে বোস্টনের ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন টেলিগ্রাফ কোম্পানীতে কাজও পেয়ে গেল ছেলেটি। পরবর্তীকালে এই দস্যি ছেলেই হল ফনোগ্রাফের আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন। | টেলিগ্রাফ কোম্পানীতে এডিসনের কাজ ছিল দিনেরবেলা যে খবর আসে সেগুলো সংগ্রহ করা। কিন্তু দিনেরবেলার থেকেও রাতেই বেশী খবর আসে। তাই রাতের কাজে টাকা পাওয়া যায় বেশী। এডিসন সেজন্য দিনের কাজের সাথে রাতের কাজও যোগাড় করে ফেললেন ঐ কোম্পানীতেই। রাতে যিনি ঐ কোম্পানীতে খবর পাঠাতেন তিনি হঠাৎ বদলী হয়ে যেতে এলেন অন্য এক লোক। তিনি খুব দ্রুত খবর পাঠাতেন, সেই খবর সংগ্রহ করতে এডিসনের একটু অসুবিধা হত। তক্ষণি এক কৌশল বের করলেন তিনি। যোগাড় করে নিলেন স্যামুয়েল মোর্সের বানানো দুটো বাড়তি টেলিগ্রাফ যন্ত্র। কারণ খবর আসত মোর্স কোড টরে টক্কার মাধ্যমে। মোর্স টেলিগ্রাফের একটিতে খুব পাতলা কাগজের ফালি কেটে ঢুকিয়ে দিয়ে কাগজের ফালির অপর প্রান্তটি জুড়ে দিলেন কোম্পানীর টেলিগ্রাফ যন্ত্রটির সাথে। ফলে যেই দ্রুত খবর আসতে লাগল সঙ্গে সঙ্গে আপনা থেকে কাগজের ওপর বিভিন্ন সংকেতের দাগ পড়তে লাগল। খবর নেওয়া শেষ হতে অপর মোর্স টেলিগ্রাফ যন্ত্রতে কাগজটি ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে টানতে শুরু করতেই টরে টক্কা শব্দ পুনরাবৃত্তি হতে লাগল। ফলে দ্রুত সংবাদ সংগ্রহ করতে কোনো অসুবিধা রইল না।
বেশ কিছুদিন চলছিল এভাবেই, এদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। নানা দিক থেকে আসছে নানা খবর। এমন সময় একটা মোর্সের টেলিগ্রাফ যন্ত্র খারাপ হয়ে গেল। তাই রাতদিন পরিশ্রম করেও সব খবর দিতে পারলেন না এডিসন। কোম্পানীর মালিক ক্ষুব্ধ হয়ে চাকরী থেকে বরখাস্ত করলেন এডিসনকে। পেটের দায়ে পথে পথে চাকরীর আশায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ালেন। শেষমেষ কাজের দক্ষতার জন্য নিউইয়র্কের এক টেলিগ্রাফ অফিসের অফিস পরিদর্শকের কাজ হাতে এসে গেল! এইসময় এডিসনের মনে হয়েছিল যদি টেলিগ্রাফের 'টরেটক্কা' শব্দ থেকে কাগজে দাগ কাটা যায় এবং সেই দাগ থেকে আবার টরেটক্কা’ শব্দ বের করা যায়, তবে কণ্ঠস্বর থেকে দাগ কেটে সেই দাগ থেকেও নিশ্চয় অন্যরূপ কণ্ঠস্বর পাওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকেই ১৮৭৭ সালের ১৮ জুলাই একটা পাতলা চামড়াকে একটা গোলাকার চোঙের সঙ্গে টান টান করে বাঁধলেন। চোঙের সাথে একটা হাতল লাগালেন। এবার পাতলা চামড়ার সঙ্গে একটা লোহার পিনকে শক্ত করে আটকালেন। পিনের তলায় একটা মোম মাখানো কাগজ এমনভাবে রাখলেন যাতে পিনটা কাগজে গিয়ে ঠেকে। এবার চোঙের হাতলটা ঘুরিয়ে চোঙের সামনে মুখ রেখে বললেন -
Mary had a little lamb. Its fleece was white as snow.
সঙ্গে সঙ্গে কাগজের ওপর দাগ পড়ে গেল। এবার ওই দাগের ওপর পিন বসিয়ে হাত ঘোরাতেই অস্পষ্টভাবে বেরিয়ে এল সেই শব্দ। আবিষ্কৃত হল ফনোগ্রাফ। মোমের কাগজের থেকেও রাংতা ও টিনের পাতে আরো স্পষ্ট শব্দ পাওয়া গেল। এই ফনোগ্রাফেরই বর্তমান নাম গ্রামোফোন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions