বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি
বাংলাদেশ মিশ্র অর্থনীতির দেশ। এ দেশের উৎপাদন ব্যবস্থাকে ক্ষীয়মান আধা সামন্ততান্তিক এবং পুঁজিবাদমুখী বলা যেতে পারে। বাংলাদেশ একসময় ছিল সমৃদ্ধ অর্থনীতির জনপদ। কিন্তু প্রায় সোয়া দু’শ বছরব্যাপী ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণে বাংলাদেশকে নিঃস্ব করেছে। সপ্তদশ শতকে বাংলাদেশ পশ্চিম ইউরোপের সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মতোই সম্পদশালী ছিল। সম্ভবত তখন বাংলাদেশের মাথাপিছু বাস্তব আয় ফ্রান্স, জার্মানী ও ইটালির মাথাপিছু বাস্তব আয় থেকে বেশি ছিল। গ্রামগুলো স্বাভাবিক পণ্য বিনিময়ে স্বনির্ভর ছিল। কৃষিতে উদ্বৃত্ত ছিল। বিকাশমান বণিক শ্রেণির প্রাচুর্য, সম্রাটদের বিলাসী চাহিদা নিম্নমানের শ্রমউৎপাদনশীলতার কারণে পুনরুৎপাদন সম্ভব ছিল না। ফলে এ অঞ্চলে পুঁজিবাদ বিকশিত হতে পারেনি। পনেরো, ষোল ও সতেরো শতকে ইউরোপের বহু পর্যটক বাংলাদেশকে ভারতবর্ষের সবচেয়ে ও বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল বলে বর্ণনা করেছেন।
ব্রিটিশ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এ অঞ্চলের লুণ্ঠিত সম্পদ। পরবর্তীকালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ডটি। যুদ্ধে বিধস্ত লুণ্ঠিত অর্থনীতি, ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিপুল জনসংখ্যার চাপ, সম্পদ ব্যবহারে অদক্ষতার কারণে যদিও বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি তারপরও অফুরন্তপ্রাণশক্তির অধিকারী এদেশের কৃষকের উৎপাদন ক্ষমতা, স্বল্প শিক্ষিত ও নিরক্ষর পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের কল্যাণে পোশাক শিল্পের প্রসার, মানব সম্পদ রপ্তানি এবং বর্তমানে অগ্রসরমান বেসরকারি খাতের প্রসার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করেছে সমৃদ্ধ। দারিদ্র বিমোচনসহ জাতিসংঘ ঘোষিত MDG (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনে বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বিশ্বসভায় সমাদৃত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions