Home » » জাতিসংঘ কি

জাতিসংঘ কি

জাতিসংঘ কি?

পৃথিবীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মাত্র ২৫ বছরের ব্যবধানে। প্রথমটি ছিল ১৯১৪-১৯১৮ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়টি ১৯৩৯-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত । বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বযুদ্ধ দুটি ছিল মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিরাট বাধা। সেজন্য যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চলেছে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯২০ সালে গঠিত হয়েছিল জাতিপুঞ্জ বা লিগ অব নেশনস। কিন্তু বিভিন্ন দেশের স্বার্থ সংঘাতের কারণে এ সংস্থাটি স্থায়িত্ব লাভ করেনি। ফলে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে গ্রাস করে। এ যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পারমাণবিক বোমার আঘাতে জাপানে দুটি শহর (হিরোশিমা ও নাগাসাকি) সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। মারা যায় কয়েক কোটি মানুষ। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা দেখে বিশ্ববাসী শঙ্কিত ও হতবাক হয়ে যায়। তাদের মনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাক্ষা দানা বাঁধে। এছাড়া তারা অনুভব করেন যে, মানবকল্যাণের জন্য যুদ্ধকে পরিহার করতে হবে। দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বের শান্তিও সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে হবে। ফলে ১৯৪১ সাল থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হাতে নেয়। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইণস্টন চার্চিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট স্ট্যালিন তেহরানে এক সম্মেলনে সমবেত হন। বিশ্বের ছোট বড় সকল জাতির পরস্পর সহানুভূতি ও সমবায়ের মাধ্যমে সর্বপ্রকার অত্যাচার, নিপীড়ন, দাসত্বের অবগঠন ঘটিয়ে বিশ্বে এক বৃহত্তর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সংকল্প তেহরান ঘোষণায় প্রকাশ করা হয়। তেহরান ঘোষণার পর জাতিসংঘ গঠনের প্রচেষ্টা চালানা হয় ওয়াশিংটনের ডাম্বারটন ওক্স সম্মেলনে। ১৯৪৪ সালের অক্টোবর মাসে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের একটি সাধারণ সভা, একটি নিরাপত্তা পরিষদ, একটি দফতর ও একটি আন্তর্জাতিক বিচারালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর ভেটো ক্ষমতা নিয়েও এ সম্মলনে আলোচনা করা হয়। অতপর বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৫ সালে ২৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রান্সিসকো শহরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা পরবর্তী বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় জাতিসংঘের জন্ম। শুরুতে জাতিসংঘের সদস্যসংখ্যা ছিল ৫০। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। জাতিসংঘের মহাসচিব হচ্ছেন এর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা। নরওয়ের অধিবাসী ট্রিগভেলি ছিলেন জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব। বর্তমান মহাসচিবের নাম হচ্ছে আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি পর্তুগালের অধিবাসী। ১লা জানুয়ারি ২০১৭ সালে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের দ্বায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। পতাকাটি হালকা নীল রঙের মাঝখানে সাদা জমিনের মধ্যে বিশ্বের বৃত্তাকার মানচিত্র রয়েছে। এর দু'পাশ দুটি জলপাই পাতার ঝাড় দিয়ে বেষ্টিত। জাতিসংঘের রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থা। জাতিসংঘের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থার মধ্যে ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্ব মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

জাতিসংঘের উদ্দেশ্য

বিশ্বশান্তিও সহযোগিতার মহান লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ : 

১. শান্তির প্রতি হুমকি ও আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করে বিশ্বশান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 

২. সকল মানুষের সমান অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশন সৃষ্টি করা। 

৩. অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবসেবামূলক সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা। 

৪. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলা এবং 

৫. আন্তর্জাতিক আইনের সাহায্যে আন্তর্জাতিক বিবাদের মীমাংসা করা। 

জাতিসংঘের নীতি

জাতিসংঘ কতকগুলো নীতি অনুসরণ করে থাকে এ নীতিগুলো নিম্নরূপ:

১. সকল সদস্য রাষ্ট্রকে জাতির মর্যাদা দিতে হবে। 

২. চার্টার অনুযায়ী গৃহীত দায়িত্ব সকল সদস্য রাষ্ট্রই পালন করবে। 

৩. আন্তর্জাতিক বিবাদ ও বিসম্বাদসমূহ সংশ্লিষ্ট সকল রাষ্ট্র মিলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের জন্য প্রস্তুত থাকবে। 

৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কেউ বল প্রয়োগ করবে না। 

৫. বর্তমান চার্টার অনুযায়ী জাতিসংঘ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হলে সকল রাষ্ট্রই যথারীতি সাহায্য করবে। 

৬. যে সকল রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য নয় তারাও যাতে জাতিসংঘের নির্দেশ মেনে চলে তা লক্ষ্য রাখতে হবে এবং 

৭. কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে না।

জাতিসংঘের গঠন

জাতিসংঘের কর্তব্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে ছয়টি প্রধান সংস্থা নিয়ে জাতিসংঘ গঠিত হয়েছিল। এই সংস্থার অধীনে নানা প্রকার শাখা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শাখাগুলো হলো নিম্নরূপ :

# সাধারণ পরিষদ 

# নিরাপত্তা পরিষদ 

# অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ 

# অছি পরিষদ 

# আন্তর্জাতিক আদালত 

# জাতিসংঘ সচিবালয়

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *