ওভেনে রান্না করা খাবারের স্বাদ কেমন? বিজ্ঞান ও বিশ্লেষণ কি বলে? জেনে নিন!
ওভেনে রান্না
আজকাল উন্নত দেশে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার রাঁধার প্রচলন হয়েছে। আমাদের দেশেও যে কিছু কিছু না হয়েছে তা নয়। তবে এই ওভেনে রান্না করা খাবারে অনেকের মন ভরছে না কোথায় যেন স্বাদের পার্থক্য ঘটে যাচ্ছে এতে সাধারণ ওভেনের তুলনায় । কেন এমনটি হয় এই গবেষণা করতে গিয়ে আমাদের রান্নায় স্বাদ-গন্ধের মূলে কি সেই বিষয়টিই আরো খোলাসা হয়েছে।
সাধারণ রান্নায় সৃষ্ট স্বাদ-গন্ধের মূলে প্রধানত রয়েছে মাইলার্ড বিক্রিয়া নামে পরিচিত কিছু রাসায়নিক ঘটনা। প্রোটিনে যে এমাইনো গ্রুপ রয়েছে তার সঙ্গে খাদ্যের চিনির একটি জটিল বিক্রিয়া এটি। অনেক ক্ষেত্রে এটি চিনিকে খয়েরি রঙের ক্যারামেলে রূপান্তরিত করে, যেমনটি পাউরুটির উপরটায় দেখি। মাইলার্ড বিক্রিয়ায় প্রধানত তিন রকমের রিং আকৃতির যৌগ অণু সৃষ্টি হতে পারে যেগুলোকে খাবারকে ভাল স্বাদ দেয় থিওজোল, ফুরান এবং পাইরাজিন। থিওজোল প্রধানত বিশেষ মাংসস্বাদ, ভুট্টা খইয়ের সুঘ্রাণ জাতীয় একটি স্বাদের জন্য দায়ী। ফুরান আনে ক্যারামেলের মিষ্টি স্বাদ, একটু বাদাম বাদাম অথবা মাখন জাতীয় স্বাদ-গন্ধ। কোন কিছু রোস্ট করলে যে এক আলাদা স্বাদের খোলতাই হয় তার সঙ্গে মিষ্টি বাদামী স্বাদ—এ সবের জন্য দায়ী পাইরিজিন। আবার অন্য দিকে রান্নার এমনও কিছু রিং আকৃতির যৌগ তৈরি হতে পারে যেগুলো অবাঞ্ছিত কিছু স্বাদ-গন্ধের সৃষ্টি করে। এভাবে অক্সাজোল যৌগ এক ধরনের মেছো গন্ধ দেয় যা সাধারণত সবুজ শাক সজিতে পাওয়া যায়। থিওফেন দেয় অবাঞ্ছিত ধরনের পেয়াজ-গন্ধ, পোড়া বা রাবার গোছের স্বাদ। পাইরোল সৃষ্টি করে তীব্র ঝাঝালো অথবা সেদ্ধ ভুট্টা বা খড়ের মত এক রকম স্বাদ গন্ধ।
গবেষকরা সাধারণ ওভেনে এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কেক, মাংস ও সজি রান্না করে উভয় ক্ষেত্রে সৃষ্ট প্রাসঙ্গিক স্বাদ-গন্ধের যৌগগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। আবার কম্পিউটারে অনুকরণে এ দুই ধরনের রন্ধন প্রক্রিয়ায় কি কি মাইলার্ড যৌগ উৎপন্ন হতে পারে তাও দেখা গেছে। উভয় ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সাধারণ ওভেন এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেন বিক্রিয়াগুলো ঠিক একভাবে ঘটে না। কেকের ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের কেকে স্বাদ-গন্ধদায়ী উদ্বায়ী বন্ধু অপেক্ষাকৃত কম সৃষ্টি হয়েছে। যারা কেক খেয়ে দেখেছেন তারাও নিশ্চিতভাবে বলেছেন এতে বাদামের ও ক্যারামেলের ঘ্রাণটি ঠিক আসেনি। অন্য দিকে এর মধ্যে এমন কিছু সজি সজি ভাব এসেছে যা কেকের জন্য বাঞ্ছিত নয়। গরুর গোশতকে উভয় ক্ষেত্রে সমান পরিমাণে রান্না হয়ে যাওয়া অবস্থায় যদি আনা হয়, তা হলে দেখা গেছে যে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে স্বাদ-গন্ধ দায়ী উদ্বায়ী বস্তু তৈরি হয়েছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।
গবেষকদের উপসংহার হল মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নাটি এত কম সময়ে ও কম উত্তাপে সম্পন্ন হয় যে তাতে মাইলার্ড বিক্রিয়া ঠিক সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না। তবে খাবারের অম্লতা কমিয়ে এবং লবণের পরিমাণ বাড়িয়ে মাইক্রোওয়েভের খাবারের স্বাদ গন্ধ উন্নত করা যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions