রান্না করা খাবার সম্পর্কে রসায়ন বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা
নতুন স্যাকা রুটির সুঘ্রাণ, ভূনা গোশতের আলাদা স্বাদ, মুড়ি ভাজার লোভনীয় রং এ সবের কারণ হল রান্নার ঐ বিশেষ কায়দার মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ সব বিক্রিয়ায় এমন কিছু যৌগ তৈরি হয় যা স্বাদ, ঘ্রাণ, রং ইত্যাদিতে অবদান রাখে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটি শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয়। নতুন সৃষ্ট এই যৌগগুলো খাদ্যের পুষ্টি গুণের উপরও প্রচুর প্রভাব রাখে; এমনকি এর কোন কোনটি খাদ্যকে বিষময়ও করে তুলতে পারে।
জার্মান বিজ্ঞানীদের গবেষণায় রান্নার মধ্যে সংঘটিত মাইলার্ড বিক্রিয়া নামে পরিচিত কিছু বিক্রিয়াকে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এ বিক্রিয়ায় যে সব যৌগ তৈরি হয় তার তাৎপর্য খুবই গুরুত্ববহ বলে প্রমাণিত হয়েছে। চিনির অণু যখন প্রোটিনের উপাদান এমাইনো এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তখনই এ সব যৌগ তৈরি হয়। সাকা খাবারের যে সুঘ্রাণ তা ফুরানোন নামক যৌগ দ্বারা সৃষ্টি হয়—সেটি এই মাইলার্ড বিক্রিয়ার ফলশ্রুতি। আবার পাউরুটির উপর যে বাদামী আস্তরণ সেটিও এরই ফলে সৃষ্ট। এ ধরনের অনেকগুলো যৌগের সামগ্রিক নাম আমাদোরী যৌগ।
আমাদোরী যৌগের সৃষ্টিতে এমাইনো এসিড প্রয়োজন যা প্রোটিনের উপাদান এবং পুষ্টির জন্য অতি প্রয়োজনীয়। রান্নার মাধ্যমে বা অন্যান্য প্রক্রিয়াকরণে এ যৌগ বেশি সৃষ্টি হলে জরুরি এমাইনো এসিডে ঘাটতি পড়ে। আবার ট্রিপটোফ্যান এমাইনো এসিড রান্নার সময় আমাদোরী যৌগ সৃষ্টি করে না। কিন্তু সেটি আরো ক্ষতিকর কিছু যৌগ তৈরি করে যা ক্যানসার সৃষ্টিতে সক্ষম। রান্নায় উত্তাপ ১৩০° সেলসিয়াসের উপরে উঠলে এগুলো তৈরি হবার সম্ভাবনা বাড়ে। যে সব দেশে স্বল্প রান্নার রীতি প্রচলিত যেমন জাপানে বা চীনে—যেখানে কোন কোন ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব কম দেখা যায়। খুব সম্ভব এ সব যৌগ সৃষ্টি না হওয়াটাই কারণ। অধিক সিদ্ধ বা অধিক ভাজা বা রোস্ট করা খাবারের অভ্যাস এদিক থেকে মোটেই ভাল নয়।
অবশ্য মাইলার্ড বিক্রিয়ার সবই খারাপ এমন নয়। সদ্য স্যাঁকা রুটির মন মাতানো ঘ্রাণ, রোস্ট করা মুরগীর এমন আকর্ষণীয় বাদামী চেহারা কখনোই হতো না। তা ছাড়া মাইলার্ড বিক্রিয়ার এমনো কিছু যৌগ পাওয়া গিয়েছে যা বরং ক্যানসার সৃষ্টির প্রবণতা রোধ করে। বর্তমান গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে এর খারাপ দিকগুলো প্রতিরোধ করে ভাল দিকগুলো কি করে বজায় রাখা যায় তা উদ্ঘাটন করা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions