টেস্টিং সল্ট এর উপকারিতা ও টেস্টিং সল্ট এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে?
খাবারে টেস্টিং সল্ট এর ব্যবহার :
চাইনিজ খাবার তৈরি করতে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট নামে যে লবণ ব্যবহার করা হয় তার ক্ষতিকর দিক নিয়ে বহুদিন ধরে বহু বিতণ্ডা চলেছে। রান্নার সময় সামান্য পরিমাণে ব্যবহৃত এই উপাদান সাধারণত টেস্টিং সল্ট নামে পরিচিত। এ সম্পর্কে সাম্প্রতিকতম গবেষণাপত্র দাবি করছে যে পুরো ব্যাপারটিই কতকগুলো মনস্তাত্ত্বিক অভিযোগের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে, সঠিক শারীরবৃত্তীয় ঘটনায় নয়। টেস্টিং সল্ট চাইনীজ খাবারে ব্যবহৃত হয় এর স্বাদগন্ধের মান বাড়াবার জন্য । গুটামিক এসিডের মনোসোডিয়াম সল্ট হিসেবে এটি আমাদের শরীরের সাধারণ পরিপাক ক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আমরা নিজেরাই আমাদের শরীরে এটি তৈরি করি—অন্যান্য প্রাণীরাও করে। মাছ-মাংসের মধ্যে একটি নিত্য উপাদান হিসেবে আমরা সব সময় এটি পাচ্ছিও। কাজেই এ রকম একটি জিনিসের প্রতি কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া শরীরে থাকবে, সেটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
কাহিনীর শুরু ১৯৬৮ সনের এপ্রিল মাসে। জনৈক রর্বাট হো ম্যান কোক নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশ করেন যে, যখনই তিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খান তখনই অদ্ভুত কিছু লক্ষণ তাঁর শরীরে দেখা দেয়। ঘাড়ের পেছন থেকে শুরু করে এক রকম অবসাদ তাঁর হাতে ও পিঠে ছড়িয়ে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে দুর্বলতা দেখা দেয় ও নাড়ী দ্রুততর হয়। তিনি অনুমান করেন চাইনিজ খাবারে ব্যবহৃত কুকিং ওয়াইন, অতিরিক্ত লবণ অথবা মনোসোডিয়াম গুটামেট এর জন্য দায়ী। তাঁর প্রবন্ধটি প্রকাশের পর এ রকম আরো বেশ কিছু ঘটনার কথা জানা যায় এবং ক্রমে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটকেই এ জন্য দায়ী করা হতে থাকে। ১৯৬৯ সালে সায়েন্স পত্রিকায় এ সম্পর্কে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট এর শরীরগত প্রভাব এবং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোমে এর ভূমিকা”। বলাবাহুল্য পূর্ব প্রকাশিত ঐ লক্ষণগুলো ইতিমধ্যে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম (সংক্ষেপে সি, আর, এস) নামে পরিচিত হয়েছে। এই প্রবন্ধের মতে টেস্টিং সল্ট খাবার ১৪ মিনিটের মধ্যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় এবং ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে চলে যায়। তবে এর মতে এসব লক্ষণ পুরপরি দেখা যাবার ঘটনা অতি বিরল। তা ছাড়া প্রবন্ধটির সিদ্ধান্তগুলোকে ভিত্তি করা হয়েছে খুব কমসংখ্যক নমুনার উপর। ঐ বছরের ঐ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় যে নবজাত ইদুরের মধ্যে গুটামেট ইনজেকশন দিয়ে ঢােকানো হলে তার মস্তিষ্কে বিশেষ ঘা এর সৃষ্টি হয়। এর পরপর অবশ্য তিনটি ভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে মুখে খাওয়া গুটামেটের দ্বারা নবজাত ইদুরেরও কোন কিছু হয় না আর পূর্ণবয়স্ক ইঁদুরের ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই মস্তিষ্কের ঐ ঘা হয় না। অপরপক্ষে ১৯৭০ সনে সায়েন্স পত্রিকার এক রিপোর্টে দেখা যায় যে দৈনিক ১২০ গ্রাম করে বহু দিন ধরে গুটামেট খেয়েও মানুষের মধ্যে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বরং কিছু রক্ত চাপ হ্রাস ও রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা হ্রাসের মধ্যে উপকারী প্রভাবই দেখা গেছে। ১৯৭৮ সনের এক পরীক্ষায় অত্যন্ত ভারী ডোজে গুটামেট খাইয়ে ও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে কোন বিরক্তের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৯ সনে আর একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায় যে, শতকরা ৪৩ জন ব্যক্তি সাধারণত যে কোন খাবারের পরেই কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে শতকরা ১.৮ জন সি, আর, এস-এর মত লক্ষণে ভোগেন। আর তাঁদের মধ্যেও শতকরা মাত্র ০.০২ জন এসব লক্ষণে ভোগেন চাইনিজ খাবার খাওয়ার পর। আরো মজার ব্যাপার হল যারা সি, আর, এস সম্বন্ধে আগে শুনেছেন ভুক্তভোগীদের মধ্যে তাদের সংখ্যা যারা শুনেননি তাদের দশ গুণ।
এ সব নানা ধরনের পরীক্ষা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে সম্প্রতি কোন কোন বিজ্ঞানী মনে করছেন পুরো ব্যাপারটিই আসলে মনস্তত্ত্বিক। সরল বিশ্বাসী রোগীর সঙ্গে সরল বিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের যোগ হওয়ার ফলশ্রুতিতেই টেস্টিং সল্টকে এভাবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। আসলে এর সত্যিকার কোন দোষ নেই।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions