ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে
উত্তর ও দক্ষিণ আয়নবায়ুর বয়ে আনা বায়ুপুঞ্জ যেখানে মিলিত হয়ে তাৎক্ষণিক যে ঝড়ের সৃষ্টি করে তাকে বলে ঘূর্ণিঝড়।
সকল প্রকার বায়ুমন্ডলীয় গোলযোগের মধ্যে সবচাইতে প্রলয়ঙ্করী গোলযোগ হলো ঘূর্ণিঝড়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। এদের নাম ভারত মহাসাগরে সাইক্লোন cyclone), চীন ও জাপান উপকূলে হলো টাইফুন (Typhoon), ফিলিপাইনের উপকূলে বাগুই (baguio), অষ্ট্রেলিয়ার উপকূলে উইলি উইলিছ (willy willies) এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও মেক্সিকো উপসাগর অঞ্চলে হলো হারিকেন (hurricane)।
ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি
ঘূর্ণিঝড় (Cyclones) ও প্রতীপ ঘূর্ণিঝড় অনিয়মিত বায়ুর উদাহরণ। ওপরের ও নিচের বায়ু স্তরের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে ঘূর্ণিঝড়ও প্রতীপ ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় অত্যন্ত পরিচিত শব্দ। প্রতি বছর সাধারণত মার্চ ও নভেম্বর মাসে এই ঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানে।
ঘূর্ণিঝড়ের বৈশিষ্ট্য
১. ঘূর্ণিঝড়ে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ৬৫ ঘন্টায় ১৯km বা তার বেশী হয়ে থাকে;
২. ঘূর্ণিঝড় প্রবল নিম্নচাপের ফলে সৃষ্টি হয়;
৩. পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর ৮০টির মতো ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। সে তুলনায় মধ্য অক্ষাংশে গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০টি চলমান নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
৪. উত্তর গোলার্ধে প্রবল ঘূর্ণিবায়ু বামাবর্তে কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয় এবং প্রচন্ড শক্তিতে বায়ু আবর্তের মাধ্যমে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। বায়ু আবর্তের কেন্দ্রকে চোখ বলে ।
৫. দ্রুত উর্ধ্বগামী বায়ু জলীয় বাষ্পপূর্ণ থাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ঘূর্ণিঝড় প্রচন্ড শক্তিতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে, ফলে ব্যাপক প্রাণহানী ঘটে এবং সম্পদের বিশেষ ক্ষতি হয়।
বায়ুচাপ
ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়সমূহের ব্যাস ২০০-৭০০ কি.মি. হয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের সমচাপ রেখাগুলি মোটামুটি বৃত্তাকার হয়ে থাকে। বাহির থেকে ভিতরের দিকে বায়ুর চাপ দ্রুত কমতে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ে বায়ু চারপাশ থেকে পেঁচিয়ে কেন্দ্রের দিকে প্রবেশ করে এবং কেন্দ্রের কাছে এসে সে বায়ু উপরের দিকে উঠতে থাকে। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের গভীরতা ১২ থেকে ১৬ কি.মি. হয়ে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি
উত্তর ও দক্ষিন আয়নবায়ুর বয়ে আনা বায়ুপুঞ্জ (Air Mass) যেখানে মিলিত হয় সেখানেই এ ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত আন্ত:ক্রান্তীয় এলাকাতে সংঘটিত হয়। ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রের ওপর সৃষ্টি হয়। বায়ুপুঞ্জ সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসায় এর বায়ুর নিম্নস্তর উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে। ওপরের বায়ুস্তর এসময় শীতল ও শুষ্ক থাকে। দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যের বায়ুস্তর যখন মুখোমুখি হয় তখন একটি স্তর অপর স্তরের ওপরে উঠে যায়। এ উর্ধ্বগামী বায়ু দ্রুত শীতল হয় এবং এর আর্দ্রতা ঘনীভূত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ঘনীভবনের ফলে যুক্ত হয়ে সুপ্ততাপ ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণনের শক্তি যোগায়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সাধারণত পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। ভূমিতে পৌছবার পর উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘূর্ণীঝড় দুর্বল হয়ে ক্রমে নি:শেষ হয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পেছনে কিছু শর্ত থাকে:
১. সমুদ্র পৃষ্ঠের কাছাকাছি কমপকেষ ২৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিশিষ্ট পর্যাপ্ত উষ্ণ ও আর্দ্রবায়ু।
২. বায়ুর প্রবাহ ভেতরের দিকে এবং উর্ধ্বগামী হয়ে খাড়া মেঘপুঞ্জের সৃষ্টি করে, ফলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
৩. উধ্বস্তরে বায়ু বহির্গামী হবে।
ঘূর্নিঝড়ের ফলে সৃষ্ট আবহাওয়া
১. ঘূর্ণিঝড়ের আগের বায়ু শান্ত থাকে, বায়ুর উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বেশী হয়।
২. ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশে পৌছবার সঙ্গে সঙ্গে দমকা বাতাসের সৃষ্টি হয় এবং ঘন ঘন মেঘ দেখা দেয়।
৩. ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ আসার ফলে প্রবল ঝড়ো বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। এসময় ঘন মেঘে আকাশ ছেয়ে থাকে এবং মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে।
৪. ঘূর্ণিঝড়ের চোখে এসে শান্ত অবস্থা ফিরে আসে।
৫. ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চাদ্ভাবে পৌছানোর পর পুনরায় ঝড়ো বাতাস প্রবাহিত থাকে, ঘন মেঘ ও প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়। এ পর্যায়ে বায়ু অগ্রবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয় ।
টর্নেডো (Tornado):
ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে টর্নেডোর পার্থক্য হল ইহা স্থলভাগে সৃষ্টি হয়। টর্নেডো ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে অনেক বেশী ধ্বংসাত্বক। বাংলাদেশে এপ্রিল-মে সে মাসে প্রায়সই টর্নেডো ঘটে থাকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions