Home » » বারিমন্ডল কাকে বলে

বারিমন্ডল কাকে বলে

Hydrosphere / বারিমন্ডল / জলমন্ডল

বারিমন্ডল কাকে বলে

পৃথিবী পৃষ্ঠে স্থলভাগের চেয়ে পানিরাশির পরিমাণ অনেক বেশী। এর শতকরা প্রায় ৭১ ভাগ পানি রাশির অন্তর্গত এবং স্থলভাগের পরিমান ২৯ শতাংশেরও কম। এই পানির আয়তন প্রায় ৩৬ কোটি ২৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। ভূ-ত্বকের অবনত অংশে অবস্থিত এই বিশাল পানিরাশিকে বারিমন্ডল (Hydrosphere) বলে। সাগর-মহাসাগরের পানিরাশি ছাড়াও স্থলভাগের অন্তর্গত হ্রদ নদী-খাল-বিলের পানিও বারিমন্ডলের আওতায় পড়ে। তবে সাগর মহাসাগরের তুলনায় স্থলভাগের পানি রাশির পরিমাণ খুবই কম। এজন্য বারিমন্ডল বলতে প্রধানত সাগর মহাসাগরের পানি রাশিকে বুঝায়।

মহাসাগর, সাগর, উপসাগর, হ্রদ ইত্যাদির সমন্বয়ে বারিমন্ডল গঠিত। উন্মুক্ত বিস্তৃত পানিরাশিকে মহাসাগর (Ocean), স্বল্প আয়তন বিশিষ্ট উন্মুক্ত পানিরাশিকে সাগর (Sea), তিনদিক স্থল দ্বারা বেষ্টিত পানিরাশিকে উপসাগর (Bay বা Gulf) এবং চারদিক স্থল দ্বারা বেষ্টিত ও প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বৃহৎ পানিরাশিকে হ্রদ (Lake) বলে। এই বারিমন্ডল মানুষের পেষা ও খাদ্যাভাস এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার উপর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বারিমন্ডলের গড় গভীরতা প্রায় ৩,৮১০ মিটার। এর উপরিভাগের পানি সূর্যতাপে উত্তপ্ত হয়। উষ্ণমন্ডলে সারাবছর বেশী সূর্য তাপ লাভ করে এবং নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে ও হিমমন্ডলে সূর্য তাপের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে। ফলে ক্রান্তীয় অঞ্চলের সাগর মহাসাগরের পানির উপরিভাগ বেশী উত্তপ্ত হয়। অক্ষাংশ ও গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বারিমন্ডলের পানির উষ্ণতা হ্রাস পায়। সমূদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৬৬ মিটার গভীরতা পর্যন্ত এলাকায় পানির তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। এরপর ২,১৯৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত পানির। তাপমাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। অবশ্য সাগর তলের আরও গভীর অংশে পানির তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তীত থাকে।

অক্ষাংশভেদে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সমূদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার তারতম্য হওয়ায় এবং শীতল ও উষ্ণ সমূদ্র স্রোত বর্তমান থাকায় বায়ুমন্ডলের নিচের অংশে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি করে। এর ফলে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। সমূদ্রের উপরিভাগ উত্তপ্ত হলে পানি বাষ্পীভূত হয়ে উর্ধর্গামী হয় ও মেঘে পরিণত হয়ে বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে। হিমমন্ডলে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে তুষারপাত হয়। এমন কি নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলেও গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত  এবং শীতকালে তুষারপাত হয়।

বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হওয়ার ফলে ঝর্না, নদী, প্রভৃতির প্রবাহ অব্যাহত থাকে। এই পানি প্রবাহিত হয়ে আবার সাগরে ফিরে আসে। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠে একটি পানি চক্রের সৃষ্টি হয় (Water Cycle)।

বৃষ্টিপাতের ফলে পৃথিবীর মাটি উর্বর হয়। ফলে উদ্ভিদ ও প্রানীর বৃদ্ধির সহায়ক হয়। মানুষ চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করে। নদী পথে ও সাগর বক্ষের উপর দিয়ে পরিবহন ও ব্যবসা-বানিজ্যের সুবিধা হয়। ফলে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়, সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। সুতরাং বারিমন্ডল পৃথিবী পৃষ্ঠের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করছে এবং মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা নির্ধারণ করছে।

0 comments:

Post a Comment

Comment below if you have any questions

Contact form

Name

Email *

Message *