ভূমিকম্প কাকে বলে
ভূমিকম্প ভূ-পৃষ্ঠে দ্রুত পরিবর্তন সাধনকারী প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ । পৃথিবীর বহু অঞ্চলেই এর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সভ্যতার বহু ধ্বংশলীলার কারণ হিসেবে ভূমিকম্পকে সরাসরি দায়ি করা যায়। ধারণা করা হয়, গত ৪০০০ বছরে ভূমিকম্পের ধ্বংশলীলায় পৃথিবীর প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ লোক মারা গেছে। ভূমিকম্প সম্পর্কে অতীতের চেয়ে বিজ্ঞানীরা এখন অনেক বেশী তথ্য জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ ভূমিকম্প থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে এখনও প্রায় অসমর্থ। এর অন্যতম কারণ, ভূমিকম্প কখন সংঘটিত হবে তা পূর্ব থেকেই সঠিকভাবে এখনও অনুমান করা সম্ভব হয়নি। কোন ধরণের পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই তা সংঘটিত হয় বা হতে পারে। তাছাড়া ভূমিকম্প যেমন জানমালের ক্ষতি করে তেমনি অত্যন্ত স্বল্প সময়ে ভূ-পৃষ্ঠে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তাই ভূমিকম্প ভূবিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ভূমিকম্প কি ?
ভূমিকম্প কাকে বলে: ভূ-অভ্যন্তরে কোন কারণে বিপুল শক্তি মুক্ত হওয়ায় ভূ-পৃষ্ঠে যে প্রবল ঝাঁকুনি বা কম্পনের সৃষ্টি হয় তাকে ভূমিকম্প বলে। একটি শান্ত পুকুরে ঢিল ছুঁড়লে যে ঢেউ-এর সৃষ্টি হয় তা পুকুরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একইভাবে ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও ভূ-অভ্যন্তরের যেখানে শক্তি মুক্ত হয় সেখান থেকে পানির ঢেউয়ের মত শক্তি শিলায় তরঙ্গের সৃষ্টি করে এবং তা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূ-অভ্যন্তরে যেখানে শক্তিমুক্ত হয় তাকে কেন্দ্র বলে। কেন্দ্র থেকে লম্বালম্বিভাবে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিস্থিত বিন্দু উপকেন্দ্র নামে পরিচিত।
ভূ-কম্পনকেন্দ্র থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে ভূ-কম্পন শক্তি হ্রাস পায়। ভূকম্পন শক্তি সম্পন্ন এলাকাকে যুক্ত করে মানচিত্রের উপর যে রেখা পাওয়া যায় তাকে সমভূ-কম্পন রেখা (Isoseismal line) বলে।
ভূ-কম্প তরঙ্গের উৎপত্তি ও গতি
সাধারণত: ভূত্বকের কয়েক মাইল নীচেই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় এবং সেখান থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র হতে এই কম্পন প্রথমে উপকেন্দ্রে পৌঁছে। এই কম্পন কোন এক নির্দিষ্ট এলাকায় শেষ হয়ে যায় না। কয়েক হাজার মাইল পার হয়ে এই কম্পন মূল উৎস হতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্পের এই কম্পন যত দূরে পৌঁছাবে ততই এর তীব্রতা হ্রাস পাবে। বর্তমানে মানুষ ভূমিকম্প লিখ। (Seismograph) নামক যন্ত্রের সাহায্যে মৃদুতম কম্পনও ধরতে সক্ষম হয়েছে।
ভূমিকম্পের কারণ
নানাবিধ কারণে ভূমিকম্প হয়। সাধারণত: প্রাকৃতিক ভূমিকম্প আভ্যন্তরীন ও কৃত্রিম ভূমিকম্প বাহ্যিক কারণে হয়। বৈজ্ঞানিকগণ গবেষণা করে ভূমিকম্পের নিম্নলিখিত কারণসমূহ নির্ণয় করেছেন:
১. কোন কারণে ভূ-অভ্যন্তরে বড় রকমের শিলাচ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়। চ্যুতির ফলে কোন অংশ নীচে ধ্বসে যায় বা উপরে উঠে আসে। নীচের অংশ যতই তলদেশে যায় ততই তাপে গলে শক্তি বের হয়ে ফাটল সৃষ্টি করে বলে উপরের অংশে কম্পণ হয়।
২. ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবল ফ্রিকশান (friction) হয়ে কতক অংশ ধসে পড়ে (landslip), ফলে ভূ-ত্বক কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।
৩. ভ-অভ্যন্তর উত্তপ্ত । তাই তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হচ্ছে। ফলে শিলাস্তর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য স্থান পরিবর্তন। | করলে ভূ-ত্বক কম্পিত হয়।
৪. ভূ-গর্ভে সঞ্চিত বাষ্প-চাপ বেশী হলে নিম্নভাগে প্রবলভাবে ধাক্কা দেয়, এতে ভূমিকম্প হয়।
৫. ভূ-গর্ভে চাপ হ্রাস পেলে এর অভ্যন্তরস্থ উত্তপ্ত কঠিন পদার্থ গলে নিচের দিকে অপসারিত ও আলোড়িত হতে থাকে, এতে ভূ-ত্বক কেঁপে ওঠে।
৬. Elastic Rebound এর কারণে শিলাস্তর নিচের দিকে পতিত হলেও ধাক্কা খেয়ে পূর্বের স্থানে ফিরে ভূত্বক-এ ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।
৭. আগ্নেয়গিরির অগ্নৎপাতের সময় বহির্মুখী বাষ্পরাশির চাপে ভূমিকম্প হয়।
৮. পাহাড় পর্বত থেকে বড় রকম শিলাচ্যুতি হলে ভূমিকম্প হয়।
৯, হিমবাহ অঞ্চলে হিমানী সম্প্রপাত হলে (Analanche) তুষার খন্ডের আঘাতে ভূমিকম্প হয়।
১০. ভূ-ত্বকের পানি ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে উত্তপ্ত হয়ে বাষ্পে পরিণত হয় এবং এই বাষ্পের উর্ধমুখী চাপের ফলে | ভূকম্পন হয়।
১১. খনি অঞ্চলের ভূ-পৃষ্ঠের নিম্নের কতক অংশ হঠাৎ ধ্বসে পড়লে ভূ-কম্পন হয়।
২. ভূ-গর্ভস্থ আগ্নেয় পদার্থের উর্ধমুখী চাপের ফলে ভূকম্পন হয়।
উপরের কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে প্রধানত: দুটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন:
ক. প্লেট সমূহের সংঘর্ষের ফলে ভূ-ত্বকে যে ফাটলের সৃষ্টি হয় তা ভূকম্পন ঘটিয়ে থাকে।
খ. ভূ-অভ্যন্তরে বা ভূ-ত্বকের নীচে ম্যাগমার সঞ্চারণ অথবা চ্যুতি রেখা বরাবর চাপ মুক্ত হওয়ায় ভূ-কম্পন হয়ে থাকে।
জন্ হপকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিদ H. F. Reid ১৯০৬ সালে সানফ্লাসিকো শহরে যে ভূমিকম্প হয় তার বিস্তারিত জরিপ শেষে ভূমিকম্প কিভাবে সংঘটিত হয় সে সম্পর্কে একটি মতবাদ প্রকাশ করেন। এই মতবাদ ইলাষ্টিক রিবাউন্ড (Elastic Rebound) মতবাদ নামে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে-
কোন স্থানের শিলার উপর প্রাকৃতিক কারণে উভয় দিক থেকে বিপরীতমূখী চাপ প্রয়োগ হয়। এই কারণে প্রয়োগকৃত চাপ অনুভূমিক ভাবে পরস্পর বিপরীত দিকে অথবা উলম্বভাবে পরস্পর বিপরীত দিকে ক্রিয়াশীল হয়। ফলে ঐ স্থানের শিলা প্রয়োজনমত আকার পরিবর্তন করে এই চাপ সহ্য করে যতক্ষন না চাপ পিড়নমাত্রা অতিক্রম করে। শিলাস্তরগুলি খুব শক্তভাবে বিন্যাস্ত থাকে বলে যথেষ্ঠ চাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে দুই বিপরীতমুখী চাপ শিলার যে স্থানে সমান হয় সেখানে চতি (Fault line) তৈরী হয়। চাপ যখন পীড়নমাত্রা অতিক্রম করে তখন হঠাৎ চ্যুতির স্থান বরাবর শিলা স্তর বিযুক্ত হয়ে যায় এবং এক স্তর উপরে এবং অন্য স্তর নিচে নেমে আসে। শিলার এই বিযুক্ত হওয়ার সময় নির্গত শক্তিই ভূমিকম্প ঘটায় । চ্যুতির ফলে সংঘটিত ভূমিকম্পের সময় আমরা দেখি যে কিছুক্ষণ পরপর বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হয়। কারণ কোন স্থানে শিলাচ্যুতির ফলে চ্যুতিরেখা বরাবর পার্শ্ববর্তী স্থানে বিপরীত মুখী চাপ বাড়ে এবং চ্যুতি দীর্ঘায়িত হয়। এই চ্যুতির ফলে শিরাস্তরের স্তর বিন্যাস একই থাকে শুধু স্থান পরিবর্তীত হয় মাত্র।
ইলাস্টিক রিবাউন্ড মতবাদ ভিত্তিক শিলায় স্থিতিস্থাপক শক্তি মুক্তির বিভিন্ন ধাপ:
(i) কোন স্থানের শিলাস্তরের উপর বিপরীত দিক থেকে চাপ প্রয়োগ করা হলে। এই চাপ আনুভূমিক বা উলম্ব হতে পারে।
(ii) শিলাস্তরের আকার পরিবর্তনের মাধ্যমে চাপকে পীড়ন মাত্রা পর্যন্ত ঠেকানো যায়। এরপর যে স্থানে শক্তির ভারসাম্য রক্ষিত হয় সে স্থানে চ্যুতি (Faultline) তৈরী হয়।
(ii) এখানে চ্যুতি সৃষ্টি হয় এবং নির্গত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভূমিকম্পের ফলাফলঃ
ভূ-ত্বকের আকষ্মিক পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প একটি। ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠে এবং ভূ-অভ্যন্তরে নানারূপ পরিবর্তন দেখা দেয়। নীচে ভূমিকম্পের ফলাফল উল্লেখ করা হল:
i) ভূমিকম্পের ফলে ভূ-ত্বকে ভাঁজের সৃষ্টি হতে পারে;
ii) নদ-নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে;
iii) ভূ-ত্বকে ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হতে পারে;
v) সমূদ্র তলের পরিবর্তন হতে পারে;
v) ভূমির উত্থান ও পতন হতে পারে;
vi) হিমানী সম্প্রপাত হতে পারে;
vii) ঘর-বাড়ী, রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা ধ্বংস হতে পারে;
viii) জীবজন্তু ও গাছপালার ধ্বংস হতে পারে;
ix) জন-জীবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
ভূ-কম্পন তরঙ্গ
পুকুরের মাঝে পাথর ছুঁড়লে তরঙ্গ যেমন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক একইভাবে ভূমিকম্পের তরঙ্গগুলি তার মূল উৎস থেকে সবদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভূ-কম্পন থেকে তিন ধরণের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, এর প্রতিটি তরঙ্গ বিভিন্ন গতিবেগে পৃথিবীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে ভূমিকম্প তরঙ্গ কেন্দ্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভূমিকম্পলেখ যন্ত্রে এসে পৌছে।
ভূমিকম্পের পূর্বের অবস্থা
ক) প্রাথমিক তরঙ্গের মাধ্যমে ভূ-কম্পন হয়। ঢেউ বরাবর বস্তুর সংকোচন ও প্রসারণ হয়। প্রাথমিক তরঙ্গ ভূমির যে কোন স্তর অতিক্রম করতে পারে।
খ) দ্বিতীয় পর্যায়ের তরঙ্গ S এর মাধ্যমে ভূ-তরঙ্গ কম্পন হয়। তরঙ্গ ঢেউ বরাবর সমকোনে বস্তুকে আগে পিছে আন্দোলিত করে থাকে। এ তরঙ্গ শুধুমাত্র কঠিন পদার্থ ভেদ করে থাকে।
গ) পৃষ্ঠ তরঙ্গ বা L তরঙ্গের মাধ্যমে গতি সৃষ্টি হয়। বস্তু ভূ-পৃষ্ঠে চক্রাকারে আন্দোলিত হয়। গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমূদ্র তরঙ্গের ন্যায় গতি হ্রাস পায়।
ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র ও ভূ-কম্পন তরঙ্গ :
ভূমিকম্প লেখ (Seismograph) যন্ত্রের মাধ্যমে ভূ-কম্পন তরঙ্গ পরিমাপ করা যায় । যন্ত্রটি একটি ভারি আড় দন্ডের সঙ্গে মুক্তভাবে ওপরে ঝুলানো থাকে এবং এর তলদেশ ভূমির সঙ্গে যুক্ত থাকে। যখন ভূকম্পন তরঙ্গ এ যন্ত্রে পৌছে তখন ঐ ভারি ঝুলন্ত বস্তুর স্থিতি জড়তা (Inertia) বস্তুটিকে স্থির রাখে, কিন্তু ভূমি এবং আড়কাঠি দুলতে থাকে। ঝুলন্ত বস্তুর মাথায় সহজে দাগ কাটা যায় এমন একটি কলম লাগান থাকে এবং গ্রাফ কাগজ ভূমির কম্পন অনুযায়ী দাগ কাটতে থাকে। গ্রাফে অঙ্কিত এ দাগ থেকে ভূ-কম্পনবিদগণ ভূ-কম্প শক্তি পরিমাপ করে থাকেন।
এই তরঙ্গগুলি উৎস থেকে গন্তব্য স্থানের দিকে তিনটি ভিন্ন ধাপে গমন করে।
এই তরঙ্গ গুলি হচ্ছে—
i) প্রাথমিক তরঙ্গ
i) গৌন তরঙ্গ এবং
iii) পৃষ্ঠ তরঙ্গ বা দীর্ঘ তরঙ্গ
i) প্রাথমিক তরঙ্গ (Primary Wave) :এই তরঙ্গকে সংক্ষেপে p-wave বা p-তরঙ্গ বলে। p-তরঙ্গ ভূমিকম্প কেন্দ্র থেকে প্রথমেই ভূ-কম্পলেখ যন্ত্রে এসে পৌছে। প্রথমেই পৌঁছে বলে একে প্রাথমিক তরঙ্গ বলে। এই প্রকার তরঙ্গ সাধারণত ধাক্কা প্রদান করে। এটা মাটির মধ্য দিয়ে সোজা পথে গমন করে। এ তরঙ্গ আনুভূমিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে আন্দোলিত হয়। এর ফলে শিলার সামান্য স্থান পরিবর্তন হয়।
কোন তরঙ্গই হােকনা তার জন্য মাধ্যমের কোন স্থানান্তর হয় না। মাধ্যমের সাহায্যে এরা বাহিত হয় মাত্র। ভূমিকম্পের পরে যে কোন স্থানে এই তরঙ্গ আগে পৌঁছায়। এই তরঙ্গের গতিবেগ ঘনত্বের সাথে সমানুপাতিক। তাই মহাদেশীয় ভূ-ত্বকে এর গতিবেগ উপরি ভূ-ত্বকে ৬.১ কি.মি./সেকেন্ড, নিম্ন ভূ-ত্বকে ৬.৯ কি.মি./সেকেন্ড, সামুদ্রিক ভূত্বকে ৮ কি.মি./সেকেন্ড। স্বল্প বেগের স্তরে (low velocity layer) এর গতি ৭.৮ কি.মি./সেকেন্ড। মেন্টাল এ ১১ কি.মি./সেকেন্ড।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঘনত্বের তারতম্যের মাধ্যমে কতগুলো অঞ্চল (Zone) বা স্তরের (layer) সৃষ্টি হয় এবং এই তরঙ্গ ঘনত্বের পার্থক্য সোজাসুজি পার হয়ে যেতে পারে না বিধায় উপকেন্দ্রের সাথে ১০৩°-১৪২° পর্যন্ত এই p-wave সোজাসুজি পৌছাতে পারে না। একে Shadow Zone for direct p-wave বলে। মাধ্যম সমূহ হলে এই তরঙ্গ সোজাসুজি চলতে পারে নতুবা এটা পৃথিবীর কেন্দ্রের সাথে উত্তল আকারে চলে।
ii) গৌন তরঙ্গ (Secondary Wave): এই তরঙ্গকে S-wave বা দ্বিতীয় পর্যায়ের তরঙ্গও বলে। প্রাথমিক তরঙ্গ P এর পরই দ্বিতীয় পর্যায়ের তরঙ্গ ভূমিকম্প তরঙ্গ কেন্দ্র থেকে ভূ-কম্পলেখ যন্ত্রে এসে পৌছে। এই তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য P-wave এর মতই হবে। প্রধান পার্থক্য যে এই তরঙ্গ P-wave এর তুলনায় ধীর গতি সম্পন্ন এবং এটা তরল মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। এ তরঙ্গ ঢেউ বরাবর বস্তুকে সামনে পিছনে সমকোণে দোলাতে থাকে। তাছাড়া এই তরঙ্গ উত্তল পথে প্রতিফলিত এবং প্রতিসরিত হতে পারে। তরলের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না বিধায় উপকেন্দ্রের ১৪২°-২১৮° পর্যন্ত সরাসরি এই তরঙ্গ যেতে পারে না। একে shadow Zone for direct S-wave বলে। এছাড়া P-wave এর মত একই কারণে S-wave (১০০°-১৪২°) সরাসরি যেতে পারে না। একেও সাধারণ Shadow Zone for direct P & S wave বলে। তবে প্রতিফলিত হয়ে ঐ জায়গায় যেতে পারে। ভূ-কম্পলেখ যন্ত্র শক্তিশালী কম্পন চিহ্ন রেকর্ড করে। S তরঙ্গ দালানের কাঠামোর জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হয়।
iii) পৃষ্ঠ তরঙ্গ (Surface wave): সাধারণ তরঙ্গের মধ্যে এই তরঙ্গ সবচেয়ে কম গতিবেগ সম্পন্ন। এই তরঙ্গকে দীর্ঘ তরঙ্গ (Long wave বা L-wave) বলে। এর বিশেষ ধর্ম হচ্ছে যে এটা শুধুমাত্র পৃথিবীর উপরিভাগ বা বহিরাবরণ দিয়ে চলতে পারে। তাই এর গতিবেগও অত্যন্ত কম অর্থাৎ ৪.৮-৬.২ কি.মি./সেকেন্ড। এই তরঙ্গ তরল মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলতে পারে না এবং মাধ্যমের ঘনত্বের পার্থক্যে প্রতিসরিত বা প্রতিফলিত হতে পারে না। গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় এই তরঙ্গের গতি হ্রাস পায়।
ভূ-কম্পন তীব্রতা ও শক্তি
একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে ভূমিকম্পের তীব্রতা নির্ভরকারী বিষয়গুলো হচ্ছে:
ক) কেন্দ্র থেকে মুক্তি প্রাপ্ত শক্তি মাত্রা; খ) উপকেন্দ্র থেকে অবস্থানের দুরত্ব; গ) শিলার ধরণ ও দৃঢ়তা।। সাধারণত নরম ও আলগা শিলার ক্ষেত্রে ভূমিকম্প অনেক বেশি ক্ষতিসাধন করে। যে কোন ভূমিকম্পের সময় ভূমিকম্প কেন্দ্র হতে যে পরিমাণ শক্তি মুক্তি পায় তাকে ভূ-কম্পন শক্তির মাত্রা (Magnitude of Earth Quake) বলে। এর পরিমাপ ভূমিকম্প তীব্রতার চেয়ে অনেক বেশী নির্ভর যোগ্য এবং পরিমাপ ভিত্তিক। ভূ-কম্পন তরঙ্গের বিস্তার এবং উপকেন্দ্র থেকে ভূ-কম্পলেখ যন্ত্রের অবস্থানের দূরত্বের ভিত্তিতে একটি ভূমিকম্প থেকে কি পরিমান শক্তি মুক্ত হয়েছে তা পরিমাপ করা যায়।
স্কেল ভূমিকম্পের কারণে ভূ-পৃষ্ঠে কম্পন বা ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। এই কম্পন বা ঝাঁকুনির মাত্রাকে ভূ-কম্পন তীব্রতা বলে। ভূমিকম্প যে পরিমান ক্ষতি করে থাকে তার উপর নির্ভর করে এই মাত্রাগুলো ঠিক করা হয়ে থাকে। এগুলোকে প্রকাশের জন্য তাই স্কেল তৈরী করা হয়েছে।
এই স্কেল গুলোর মধ্যে দুইটি উল্লেখযোগ্য স্কেল হচ্ছে— মারকেল্লী তীব্রতা স্কেল- ইতালীয় ভূকম্পবিদ জি, মারকেল্লী ভূ-কম্পন তীব্রতা পরিমাপের জন্য ১৯০২ সালে মারকেল্লী তীব্রতা স্কেল প্রবর্তন করেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত মারকেল্লী তীব্রতা স্কেল সারনি নং ৪.২.১ এ দেয়া হল।
রিকটার স্কেল
ভূমিকম্পবিদগণ শক্তি পরিমাপের জন্য রিকটার স্কেল ব্যবহার করেন। চার্লস, এফ, রিকটার ১৯৩২ শালে ভূমিকম্প শক্তি পরিমাপের জন্য এ স্কেল ব্যবহার করেন। ভূমিকম্পের শক্তির মাত্রার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়। কাজেই এর মান প্রকাশের জন্য সাধারণ স্কেল এর পরিবর্তে লগ বিশিষ্ট স্কেল ব্যবহার করা হয়। এই স্কেলে তরঙ্গ বিস্তারের প্রতি ১০ গুন বৃদ্ধির জন্য ১ মাত্রার পরবর্তী উচ্চমান ধরা হয়। অর্থাৎ ২ মাত্রার ভূমিকম্প ১ মাত্রার চেয়ে ১০ গুন বেশি তরঙ্গ বিস্তার সৃষ্টি করবে। এছাড়া রিকটার স্কেলের মান প্রতি এক ইউনিট বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৩০ গুন বেশি ভূ-কম্পন শক্তি যুক্ত হয়। এ স্কেল অনুযায়ী ২ মাত্রার শক্তি সম্পন্ন ভূমিকম্পে ১ মাত্রার চেয়ে ৩০ গুন বেশি শক্তি মুক্তি পায়। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ শক্তি সম্পন্ন যে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে তার মান রিকটার স্কেলে ৮.৮। ধারণা করা হয় শিলা এর চেয়ে বেশি শক্তি ধারণ করতে পারে না। তার পূর্বেই ফেটে (fracture) যায়।
ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল
পৃথিবীতে বেশ কিছু স্থান আছে, যেখানে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেশী। বেশির ভাগ ভূমিকম্প (শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ) পৃথিবীর অল্প কিছু জায়গায় সংঘটিত হয়, এগুলো আয়তনে দীর্ঘ ও সরু। এদের মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলো হল পৃথিবীর বৃত্ত চাপীয় দ্বীপমালা যেমন ফিলিপাইন, জাপান ইত্যাদি। এছাড়াও নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালা ও সামুদ্রিক শৈলশিরা সমূহ এ অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত। ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এখন আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানব।
i) প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের বাইরের দিকের সীমানা বরাবর ভূমিকম্প প্রবণতা সবচাইতে বেশী। এটি একটি মালার মত এই প্লেটকে ঘিরে আছে। এই অংশের আওতায় জাপান, ফিলিপাইন, চিলি, অ্যালিউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, আলাস্কা প্রভৃতি প্রধান ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল। এ সমস্ত অঞ্চলে অগভীর, মাঝারি ও গভীর কেন্দ্র বিশিষ্ট ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
ii) ভূ-মধ্যসাগরীয় হিমালয় অংশ এই অংশের বেশীর ভাগই স্থল ভাগ। এই অংশটি আল্পস পর্বত থেকে শুরুকরে ভূ-মধ্যসাগরের উত্তর তীর হয়ে ককেশাস, ইরান, হিমালয়, ইন্দোচীন ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ হয়ে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। অগভীর ও মাঝারী কেন্দ্র বিশিষ্ট ভূমিকম্প এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই ধরণের ভূমিকম্প বিশেষত স্থলভাগে দেখা যায়।
iii) মধ্য আটলান্টিক ভারত মহাসাগরীয় শৈলশিরা অংশ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা এবং ভারত মহাসাগরীয় শৈলশিরা মিশে তা আফ্রিকার লোহিত সাগর বরাবর ভূমধ্যসাগরীয় অংশের সঙ্গে মিশেছে। এই অংশের ভূমিকম্প প্রায় সবই অগভীর কেন্দ্র সম্পন্ন। এ সমস্ত অগভীর ভূমিকম্প কেন্দ্র বেশিরভাগ স্বাভাবিক চ্যুতিতে (Normal fault) সংঘটিত হয়।
ভূমিকম্পক্রিয়া
পৃথিবীতে সংঘটিত সব ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। চীনে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে এক নম্বর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রায় ২০টি বড় মাপের ভূমিকম্প প্রতিবছর পৃথিবীতে ঘটে থাকে। এর থেকে ১টি বা ২টি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। বিশেষ করে বড় ধরণের ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ভূমিকম্পের প্রচন্ড শক্তি ভূ-পৃষ্ঠে প্রচন্ড ঝাঁকুনির সৃষ্টি করে। এতে করে ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এই ধরণের ঝাকুনির তীব্রতা, স্থায়ীত্ব ও এতে যে শক্তি ব্যয়িত হয় তার পরিমাণের ওপর কোন এলাকার ধংসের মাত্রা নির্ভর করে। এছাড়াও ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার ধ্বংসের মাত্রা নির্ভর করে ঐ এলাকার শিলার প্রকৃতি, ঘরবাড়ি তৈরীর সামগ্রী ও কাঠামোর ওপর। এছাড়াও ভূমিকম্পের প্রভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।
ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি
ভূমিকম্পের ফলে ভূ-ত্বকে অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। এই ফাটল এর মধ্য দিয়ে কাঁদা, উষ্ণ পানি, বালু প্রভৃতি নির্গত হয়। চ্যুতির সৃষ্টি হলে দুই চ্যুতির মধ্যবর্তী ভূমি বসে গিয়ে সুস্ত উপত্যকা (Rift valley) এবং উঠে যাওয়ায় হর্স্ট (Horst) বা স্থূপ পর্বত সৃষ্টি হয়।
ভাঁজের সৃষ্টি ভূমিকম্পের ঝাকুনিতে অনেক সময় ভূ-পৃষ্ঠে ভাঁজের সৃষ্টি হয়। এই ভাঁজ সাধারণত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হয় না।
ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে সাধারণত কেমন এলাকা জুড়ে ভাঁজ হয়? নদ-নদীর গতিপথে পরিবর্তন নদ-নদীর গতির ওপর ভূমিম্পের প্রভাব ব্যাপক। ভূমিকম্পের ফলে মাটি, বালু, পাথর প্রভৃতি জমা হয়ে নদীর গতি পরিবর্তিত হয়। অনেক সময় নদী শুকিয়েও যায় বা জলাভূমির সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ১৭৮৭ সালে ভারতের আসাম রাজ্যে যে ব্যাপক ভূমিকম্প হয় এর ফলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তলদেশ কিছুটা উঁচু হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশে নদীটি তার গতিপথ পাল্টে বর্তমান যমুনা খাত দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে।
সমুদ্র তলের পরিবর্তন
ভূমিকম্প সমুদ্র তলদেশে সংঘটিত হলে তখন সেখানে ভূমি নিচু হয়ে যায় বা উঁচু হয়ে উঠে। যেমন ১৯২৩ সালে জাপানের সাগামী উপসাগরের আংশিক ২১৫ মিটার ওপরে উঠে যায়। এর ফলে সাগরে অত্যন্ত উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি করে, যা উপকূলে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিল। ভূ-কম্পন সৃষ্ট এ সমুদ্র ঢেউ ‘সুনামী’ নামে পরিচিত। এই সুনামী লোকালয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করে। যেমন ১৭০৩ সালে সুনামী থেকে জাপানের উপকূলে যে বন্যা হয়েছে তাতে প্রায় ১০০,০০০ এর বেশী লোক প্রাণ হারায়।
ভূমির উত্থান ও পতন ভূমিকম্পের ফলে ভূমির উত্থান ও পতন হয়। যেমন কখনো কখনো উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয় অথবা সমভূমি অঞ্চল বসে গিয়ে সেখানে পানি জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। আবার সমুদ্রের তলদেশের কোন কোন স্থান উঁচু হয়ে সমুদ্রের মধ্যে দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
হিমানি সম্প্রপাত ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে পর্বতের গা থেকে বড় বড় বরফের খন্ড হঠাৎ নিচে পড়ে এবং পর্বতের পাদদেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ধ্বংশলীলা
ভূমিকম্প কোন জনবহুল এলাকায় হলে তা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পানি, গ্যাস সরবরাহ এবং অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ভূমিকম্পের ফলে অসংখ্য ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। গাছ-পালা নষ্ট হয়। অগনিত জীবজন্তু ও মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। যেমন ১৯৩৪ সালে বিহার প্রদেশে, ১৯৩৫ সালে বেলুচিস্তানের কোয়েটা শহরে এবং ১৯৫০ সালে আসামে ব্যাপক ভূমিকম্প হয়েছিল। এতে বহু গ্রাম ও নগর ধ্বংস হয় এবং কয়েক হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৩৯ সালে চিলিতে, ১৯০৬ সালে সানফ্রান্সিসকোতে এবং ১৯০৮ সালে মদীনাতে যে ভূমিকম্প হয় তাতে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে জুলাই মাসে ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্পে প্রায় ৫ হাজার লোক মারা যায়। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইরানের বাম শহরে ভূমিকম্পে প্রায় ত্রিশ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।
ভূমিকম্প পূর্বাভাস (Earthquake Prediction) :
কোন ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে যদি আগে থেকে জানা যায় তবে ঐ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ করে দুর্যোগের উৎপত্তির স্থল, সময়, স্থায়ীত্বকাল এবং এর শক্তি মাত্রা ও সম্ভাব্য কবলিত এলাকা সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকম্পও একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ। বিজ্ঞানীরা পূর্বে থেকে এ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। তবে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এই দূর্যোগের প্রকৃতি একটু ভিন্ন। এটির হঠাৎ করে আবির্ভাব ঘটে। বিশেষত এটি অকস্মাৎ সংঘটিত হয়, খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং ভূ-অভ্যন্তরে ঘটে থাকে। তাই এটি সরাসরি পর্যবেক্ষণের উপায় নেই। তবুও কিছু পদক্ষেপ বিজ্ঞানীরা নিয়েছেন যার মাধ্যমে ভূমিকম্প সম্পর্কে অনুমান করা সহায়ক হবে।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে, যে সমস্ত অঞ্চলে গত ১০০ বছরে ভূমিকম্প হয়নি অথচ এগুলো ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত, সে সমস্ত অঞ্চলে ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনা বেশী। এই স্থান গুলোর মধ্যে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, মধ্য জাপান, মধ্য চিলি, তাইওয়ান, এবং সুমাত্রার পশ্চিম উপকূল উল্লেখযোগ্য। এ সমস্ত অঞ্চলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে রিকটার মানে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions