লাভা কি
লাভা কি: আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে সাধারণত যে গ্যাসীয়, তরল ও কঠিন এই তিন প্রকার পদার্থ নির্গত হয়, তাকে লাভা বলে। আগ্নেয়গিরি থেকে উদৃগিরিত লাভায় বিপুল পরিমাণে অতি উত্তপ্ত শিলা টুকরা, বিস্ফোরন্মুখ লাভা, সূক্ষ ভস্ম, ও গ্যাসীয় পদার্থ মিশ্রিত থাকে। আগ্নেয়গিরির উদগিরণ প্রকৃতিতে বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমন, প্রথমে ব্যাসল্ট জাতীয় লাভা, পরে অ্যাড্রেসাইট এবং শেষে শিলাটুকরা উদগিরিত হয়ে আগ্নেয়গিরি গঠন করে।
ম্যাগমার প্রকৃতি ও এর গ্যাসীয় মিশ্রণের ভিত্তিতে লাভাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) ব্লক লাভা (Block Lava) :
লাভা ঠান্ডা হওয়ার সময় এর গ্যাসীয় পদার্থসমূহ দ্রুত বের হয়ে যাওয়ায় খুবই এবড়ো থেবড়ো আকৃতির স্তুপ তৈরী হয়। হাওয়াই জাতীয় আগ্নেয়গিরির এ ধরণের লাভা ‘আ আ (Ah Ah) নামে পরিচিত।
(খ) দড়ির ন্যায় লাভা (Ropy Lava)
গ্যাসীয় বুদবুদ বিশিষ্ট গলিত লাভা থেকে এর সৃষ্টি। এ সমস্ত লাভা যখন নিচের দিকে নামতে থাকে, তখন এ দ্রুত ঠান্ডা হয়ে কোঁকড়ান ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে জমাট বাঁধে। একে তখন অনেকটা পাকানো দড়ির ন্যায় দেখায়। হাওয়াই দ্বীপে এ জাতীয় লাভাকে 'পা হো হো বলে। এগুলো দ্রুত জমে ব্যাসাল্টিক শিলায় পরিণত হয়।
গ) বালিসাকৃতির লাভা (Pillow lava) :
এক্ষেত্রে দড়ির ন্যায় লাভা পানির সংস্পর্শে এসে দ্রুত ঠান্ডা হওয়ায় বালিসের স্তুপের ন্যায় আকৃতি ধারণ করে। এই লাভা পানির নীচের আগ্নেয়গিরিতে বেশী দেখা যায় ।
ঘ) দন্ডাকৃতির লাভা (Columnar Lava) :
দন্ডাকৃতির লাভা ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা থেকে সৃষ্টি হয়। পুরু ম্যাগমা স্তুপ সমানভাবে ঠান্ডা ও সংকুচিত হয়ে দন্ড বা খুঁটির ন্যায় জমাট বাঁধে। চিত্রে কলাম্বিয়া নদীর কাছে মাউরি পর্বতের দন্ডাকৃতির লাভা দেখা যাচ্ছে।
বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে লাভাকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায় : লাভার মূল উপাদান সিলিকা। বিভিন্ন লাভায় সিলিকার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে লাভাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
(ক) অম্লীয় লাভা (Acidic Lava) : জালকা বর্ণের (felgic) ম্যাগমায় গঠিত এই লাভার মধ্যে ৭০% ভাগের অধিক সিলিকা থাকে।
(খ) মধ্যবর্তী লাভা (Intermediate lava) : মধ্যম বর্ণের (intermediate) ম্যাগমায় তৈরী এ ধরণের লাভায় ৫০%৭০% সিলিকা থাকে।
(গ) ক্ষারীয় লাভা : গাঢ় বর্ণের ম্যাগমায় গঠিত এই লাভায় ৫০% এর কম সিলিকা থাকে।
লাভা ছাড়াও আগ্নেয়গিরি থেকে যে সব পদার্থ নির্গত হয় সেগুলো নিম্নরূপ:
অগ্নিমন্ডিত শিলা: (Pyroclastic) বিস্ফোরণমূলক (explosive) অগ্নৎপাতের সময় লাভার সাথে আগ্নেয়গিরির নলের ভাঙ্গা টুকরা, জ্বালামুখের ভাঙ্গা অংশ এবং লাভার যে সব অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে কঠিন আকার ধারণ করে তাদের অগ্নিমন্ডিত শিলা বলে। আকার ও গঠণ হিসাবে এদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।
i) ব্লক (Block) : এর ওজন কয়েকটন হতে পারে। এগুলো সাধারণত জ্বালামুখের কাছাকাছি পড়ে। তবে ইতালীর স্ট্রম্বলীর অগ্নৎপাতের সময় ২০০০ কে. জি. ওজনের একটি ব্লক ৩.২ কিলোমিটার দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল।
ii) বম্ব (Bombs): উৎক্ষেপনের সময় ম্যাগমিয়া প্লাষ্টিক (Magnetic) এর মত থাকে। পরে উড়ন্ত অবস্থায় কঠিন আকার ধারণ করে। এটা সাধারণত: ৩.২ কি.মি. বা এর বেশী হয় না।
iii) ল্যাপিলী (Lapili) : এই সকল পাইরোক্লাস্ট ভঙ্গুর হয়। এদের ব্যাস ৪-৩২ মি.মি. হয়ে থাকে।
iv) সিন্ডার (Cinders) : ছােট, ধাতুমল (slage) এর মত কঠিন টুকরা, প্লাগ বা কোনের ভাঙ্গা অংশ। এদের ব্যাস ৪২০ মি. মি.।
v) ভস্ম (Ash) : সূক্ষ আকৃতির হয়। ব্যাস সর্বোচ্চ ৪ মি. মি.। বাতাসের মাধ্যমে ১০০ কি. মি. পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
vi) ধুলা (Dust) : ইহা ১/১৬ মি. মি. অপেক্ষা কম ব্যাস সম্পন্ন। ধুলা বাতাসের মাধ্যমে ভেসে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। এমনকি ইতালীর আগ্নেয়গিরির ধুলা উত্তর আমেরিকায় পাওয়া গেছে। অনেক সময় বাতাসের উর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে ধুলা উধ্বমন্ডলে পৌঁছে যায় এবং সূর্যালোকের পথে বাধার সৃষ্টি করে। ১৯১২ সালে আলাস্কায় কামাই (Mountain katmai) এর নির্গত ধুলায় পৃথিবীতে সূর্যালোকের পরিমাণ ২০% কমে যায়। বাতাসের বেগ বেশী হলে সকল পাইরোক্লাস্টই দূরে চলে যায়। নয়তাে এগুলো আগ্নেয়গিরির মুখে কাছাকাছি অংশেই পড়ে । লাভায় পাইরোক্লাস্ট বেশী থাকলে আগ্নেয়গিরি খাড়া আকৃতির হয়।
vii) গ্যাস (Gas): প্রায় প্রত্যেক অগ্নৎপাতের সময়ই বিপুল পরিমাণ আগ্নেয় গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাস অগ্নৎপাত বন্ধ হবার পর জ্বালামূখ বা পার্শ্বছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসে। এই গ্যাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণই বেশী থাকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions