বিচূর্ণীভবন কাকে বলে
বিচুর্ণীভবন ও নগ্নীভবন মূলত: পৃথিবীর ধীর পরিবর্তনকারী শক্তি। প্রাকৃতিক উপায়ে সংঘটিত হয় বলে এদের দ্বারা সংঘঠিত পরিবর্তনকে ধীর প্রাকৃতিক পরিবর্তন বলে। নানা প্রকার বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে দীর্ঘদিন ধরে যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে ধীর প্রাকৃতিক পরিবর্তন বলে। ভূ-পৃষ্ঠের অতি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ধীর পরিবর্তনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। নদী, বৃষ্টি, বায়ু, হিমবাহ, তুহিন, উত্তাপ, সমূদ্র প্রভৃতি ধীর পরিবর্তনের সহায়ক শক্তি। এদের দ্বারা পরিবর্তন এত ধীর গতিতে সংঘটিত হয় যে, দুই চারশত বৎসরেও উহাদের কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। ধীর পরিবর্তনকারী প্রাকৃতিক শক্তিগুলি দীর্ঘ দিনের ক্ষয়সাধনের দ্বারা বৃহৎ ভূমিরূপ হতে নানা প্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। বাহ্যিক শক্তি গুলি দ্বারা আকষ্মিক পরিবর্তন কদাচিৎ সংঘটিত হয়। বাহ্যিক শক্তিগুলির প্রধান কার্যই হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে ধীর পরিবর্তন। পরিবর্তনের সাথে ক্ষয় ও গঠণের কাজও চলে থাকে। নিচের একটি ছকের সাহায্যে এই পরিবর্তনের ধরণ এবং প্রকার দেখানো হল:
ক্ষয় ক্রিয়ার ফলে যেমন একদিকে ভূমিক্ষয় হয় অপরদিকে ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থগুলি অন্যত্র সঞ্চিত হয়ে নতুন ভূমি গঠন করে। এই দিক দিয়ে নিম্ন লিখিত দুইটি প্রক্রিয়া ধীর পরিবর্তনের অন্তর্ভূক্ত। যথা:
১. নগ্নীভবন (Denudation)
২. বিচূর্ণীভবন (Weathering)
বিচূর্ণীভবন (Weathering) কাকে বলে
বিচূর্ণীভবন বা আবহবিকার বলতে নানা প্রকার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলাসমূহের চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়াকে বুঝি। বিভিন্ন যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়াগুলি ভূ-পৃষ্ঠে অনবরত কার্যকর রয়েছে এবং তাদের দ্বারা সেখানকার শিলা রাশি প্রতিনিয়ত চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছে। পৃথিবীর সব স্থানের আবহাওয়া সবসময়ে সমান থাকে না। এমনকি যে কোন স্থানের যে কোন দিনের বিভিন্ন সময়ের আবহাওয়ার মধ্যে যথেষ্ঠ তারতম্য ঘটে। সময়ের পরিবর্তনে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের অর্থাৎ বৃষ্টিপাত, বায়ুর উষ্ণতা, চাপ প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে। অধিক তাপে শিলাসমূহ প্রসারিত হয় আবার তাপ কমে গেলে তা সংকুচিত হয়। অতএব যে সব স্থানে বিশেষ করে দিবা-রাত্রির উষ্ণতার পার্থক্য এবং শীত গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশী সে সব স্থানে শিলাসমূহের একবার প্রসারিত ও একবার সংকুচিত হওয়ার কাজ ক্রমাগত চলতে থাকে। এভাবে সেখানকার শিলাসমূহ ক্রমশ: দূর্বল হয়ে পড়ে এবং কালক্রমে ঐ সব শিলা ধীরে ধীরে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নরম ও আলগা হয়। এভাবেই বিচূর্ণীভবন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। মনে রাখতে হবে যে, বিচূর্ণী ভবন বা আবহবিকার বলতে কেবলমাত্র বিচূর্ন প্রক্রিয়াকেই বুঝায়, এ দ্বারা বিচূর্ণীত বা। ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাসমূহের স্থানান্তরও বুঝায় না। সে জন্য বিচূর্ণভবনের মাধ্যমগুলি সুনির্দিষ্ট। সুতরাং বিচূর্ণীভবন ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, ক্ষয়ীভবন শিথিল শিলাখণ্ডসমূহ দূর দেশে অপসারিত করে। কিন্তু বিচূর্ণীভবনে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা শিলাখণ্ড সামান্য স্থানচ্যুত হয়। কিন্তু শিলাখণ্ডের দূর দেশে অপসারণ হয় না।
বিচূর্ণীভবনের শ্রেণীবিভাগ
১। যান্ত্রিক বা প্রাকৃতিক বিচূর্ণীভবন (Mechanical or Physical weathering) :
যেখানে ভূ-পৃষ্ঠের শিলাসমূহ উত্তাপের তারতম্যে, তুষারের কার্যে এবং আংশিকভাবে গাছপালা ও জীবজন্তুর ক্রিয়াকলাপে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
২। রাসায়নিক বিচূর্ণীভবন (Chemical weathering) :
যেখানে বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত পানি, অক্সিজেন, কার্বন-ডাইঅক্সাইড এবং জৈব পদার্থ ও এগুলোর অবশিষ্ঠাংশের দ্বারা শিলার খনিজ দ্রব্যসমূহ বিয়োজিত ও দ্রবীভূত হয়ে আলগা হয়ে পড়ে।
৩। জৈবিক বিচূর্ণীভবন (Biological weathering):
জীবজন্তু ও বিভিন্ন জৈব পর্যায়ের দ্বারা সংঘটিত বিচূর্ণীভবনকে অনেক সময় জৈবিক বিচূর্ণীভবন নামে অভিহিত করা হয়। জৈবিক বিচূর্ণীভবন যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ করে থাকে। জৈবিক বিচূর্ণীভবন যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ করে থাকে ।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সামান্যতম জলীয়বাষ্পের অবস্থান, রাসায়নিক বিচূর্ণীভবনকে পৃথিবীর সর্বত্র কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions