Home » » নদী কাকে বলে

নদী কাকে বলে

নদী / River / নদী কাকে বলে / নদী কি

নদী কাকে বলে 

একটি সুনির্দিষ্ট খাতে নিম্নঢ়লাভিমুখী পানি প্রবাহকে নদী বলে। নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত কোথাও উপনদী মূল  নদীতে এসে মিলে, আবার কোথাও মূল নদী বিভক্ত হয়ে শাখা নদীর সৃষ্টি করে। মূল নদী, এ ধরণের উপনদী ও শাখা নদীসহ একত্রে নদী অববাহিকা গড়ে তোলে। ইংরেজী River শব্দটি উভয় লিঙ্গে ব্যবহৃত হলেও বাংলা এবং পুংলিঙ্গ এবং নদী স্ত্রী লিঙ্গ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নদীর শলা নদী থাকে। ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, নীল নদ এবং গঙ্গা, পদ্মা, মিসিসিপি নদীর উদাহরণ। প্রতিটি নদী অববাহিকার একটি নিজস্ব ভৌগােলিক এলাকা আছে যা অববাহিকা বা পানি পর্যঙ্ক (water basin) নামে পরিচিত। প্রতিটি নদী অববাহিকা পার্শ্ববর্তী অববাহিকা থেকে পানি বিভাজিকা (water divide) দ্বারা পৃথক থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি নদী অববাহিকা শুধুমাত্র তার নিজস্ব ভৌগােলিক সীমানার পানি নিষ্কাষণ করে। নদীর উৎপত্তির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও ঢালু জায়গা। পাহাড়িয়া অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টির পানি ও বরফগলা পানি পাওয়া যায় বলে পৃথিবীর অধিকাংশ নদীই পার্বত্য অঞ্চল হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। হিমালয় পর্বতে বৃষ্টি, বরফ গলা পানি ও প্রস্রবণের পানি মিলিত হয়ে গঙ্গা বা পদ্মা নদীর সৃষ্টি হয়েছে।  

একটি সুনির্দিষ্ট খাতে নিম্নাল অভিমুখী পানি প্রবাহকে নদী বলে।

মূল নদী, উপনদী ও শাখা নদী একত্রে নদী অববাহিকা গড়ে তোলে। নদীর উৎপত্তির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও ঢালু জায়গা। প্রতিটি নদী একটি খাতে প্রবাহিত হয় এবং এ প্রবাহ নিম্নোক্ত নিয়ামক যেমন নদীর প্রস্থ, গভীরতা, ঢাল, বেগ ও পানির ধারণকৃত অংশের সীমানা দ্বারা প্রভাবিত। নদী খাতের আকৃতি (Channel Form): প্রতিটি নদী একটি খাতে প্রবাহিত হয় এবং এ প্রবাহ বিভিন্ন ধরনের নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়। 

১) প্রস্থ ও নদী খাতের দুই তীরের মধ্যবর্তী দূরত্ব। এটি মিটারে প্রকাশ করা হয়।

২) গভীরতা : এটি নদী খাতের তলদেশ থেকে খাড়াভাবে পানির উপর পর্যন্ত দূরত্ব, যা মিটারে প্রকাশ করা হয়।

৩) ঢাল : অনুভূমিক ও নদীতলের কৌণিক অবস্থান।  

৪) বেগ ও নদী খাতে যে গতিতে পানি প্রবাহিত হয় তাকে বেগ বলে। নদীর বেগ ওপরিভাগে সবচেয়ে বেশী এবং দুই তীর ও তল বরাবর ঘর্ষণের কারণে কম হয়। 

৫) পানির ধারণকৃত অংশের সীমানা (Wetted perimeter) : নদীখাত এবং পানির সংযোগ রেখার দৈর্ঘ্য।


নদী প্রবাহ (Channel flow) 

প্রাকৃতিক নদী প্রবাহে পানি দুই ভাবে বয়ে যায়। যেমন- (ক) পত্রবৎ প্রবাহ (Laminar flow)- যেখানে পানি অনুভূমিক ভাবে তলদেশ বরাবর প্রবাহিত হয় এবং (খ) ঘূর্ণী প্রবাহ (Turbulent flow)- যেখানে পানি ঘূর্ণায়মান অবস্থায় নিম্ন ঢালে অগ্রসর হয়। পত্রবৎ প্রবাহ প্রাকৃতিক নদীতে খুব বেশী দেখা যায় না, তবে ভূ-গর্ভস্থ পানি প্রবাহের এটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নদীর পানি প্রবাহ অনেকগুলো নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণগুলো নিম্নরূপ: 

১) পানির পরিমাণ (Volume of water) 

২) বেগ (Velocity)।

৩) নদী খাতের আকার ও আকৃতি (Channel form and shape) 

৪) ঢাল (slope)

৫) নদী খাতের ভিত্তি তল (Base level), সর্বনিম্নল যার নীচে নদী ক্ষয় করে না। 

৬) পলির পরিমাণ ও ধরণ


পত্রবৎ প্রবাহ প্রাকৃতিক নদীতে খুব বেশী দেখা যায় না। নদীর প্রবাহ নিম্নোক্ত নিয়ামক দ্বারা প্রবাহিত হয়। যথা- পানির  পরিমাণ, বেগ, নদী খাতের আকার ও আকৃতি, ঢাল, নদী খাতের ভিত্তি তল, পলির পরিমাণ ও ধরন।


উৎস হতে মোহনায় পতিত হওয়া পর্যন্ত নদীর গতি পথকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়।

যেমন- (১) পার্বত্য অবস্থা বা ঊর্ধ্বগতি, (২) সমভূমি অবস্থা বা মধ্যগতি এবং (৩) ব-দ্বীপ অবস্থা বা নিম্নগতি।

১) পার্বত্য অবস্থা বা ঊর্ধ্বগতি বা যৌবন অবস্থা (Mountain or Upper Course or Young Stage): পার্বত্য অবস্থা নদীর প্রাথমিক অবস্থা। পর্বতের ওপরে উৎপত্তি স্থল হতে সমভূমিতে পৌছানো পর্যন্ত অংশকে নদীর পার্বত্য অবস্থা বা উর্ধ্বগতি ধরা হয়। গঙ্গা নদী গঙ্গোত্রী হতে হরিদ্বার পর্যন্ত ৩২০ কি.মি. (২০০ মাইল) অংশ এর পার্বত্য বা ঊর্ধ্ব। প্রবাহ। পার্বত্য অবস্থায় ক্ষয় সাধনই নদীর প্রধান কাজ। 

পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিভাগ খুব ঢালু ও উঁচু-নিচু হয়। সেজন্য নদী উচ্চ স্থান হতে খাড়া পর্বত গাত্র বেয়ে প্রচণ্ড গতিতে নেমে আসে। এ সময় নদীর গতিবেগ ঘন্টায় ২৪ কি.মি. থেকে ৩২ কি.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রবল স্রোতের আঘাতে ভূ-ত্বক হতে শিলা খণ্ড ভেঙ্গে পড়ে এবং তা স্রোতের সঙ্গে নিম্নদিকে গড়িয়ে অগ্রসর হতে থাকে। এ অবস্থায় যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় প্রকার ক্ষয়সাধনই সাধিত হয়ে থাকে। পার্বত্য অবস্থায় নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয়ই বেশী হয়ে থাকে। ফলে গিরিখাত, ক্যানিয়ন, খরস্রোত, জলপ্রপাত প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। 

পার্বত্য প্রবাহে নদী স্থল ভাগকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়িত অংশ পরিবহন করে। পার্বত্য অবস্থায় নদীর প্রধান কাজ ক্ষয়সাধন ও বহন হলেও অনেক সময় নদীর ঢাল হঠাৎ কমে নদীর গতি হ্রাস পেলে অথবা হঠাৎ অধিক পরিমাণ প্রস্তরখণ্ড আসলে নদী তা সম্পূর্ণরূপে বহন করতে না পেরে কিছু কিছু সঞ্চয় করে। এভাবে নদীবাহিত বিভিন্ন পদার্থগুলো অল্প ঢালু অঞ্চলে সঞ্চিত হয়। নদী হঠাৎ উচ্চ ভূমি হতে নিম্ন ভূমিতে পতিত হলে সেখানে পলি জমা হয়ে পলল পাখা বা পলল কোণ গঠিত হয়। কখনও কখনও পাহাড়ের পাদদেশে প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, বালুকা প্রভৃতি জমা হয়ে একটি বিস্তীর্ণ সমভূমির সৃষ্টি করে। ভারতের শিবালিক পর্বতের পাদদেশে এরূপ সমভূমি গঠিত হতে দেখা যায়।


২) সমভূমি অবস্থা বা মধ্যগতি (Plain or Middle Stage): পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে নদী যখন সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন তার প্রবাহকে সমভূমি অবস্থা বা মধ্যগতি বলে। মধ্যগতিতে নদীর বিস্তার বেশী হয়। নদী অববাহিকা প্রশস্থ হয় ও উপত্যকাগুলোর গভীরতা কমে আসে। এই অংশে নদীর পানির পরিমাণ বেশী হয়। বহু উপনদী এ অংশে এসে মূল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। নদী উপত্যকার গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়। ফলে বর্ষাকালে নদী স্ফীত হয়ে তার দুদিকের নিম্ন ভূমিসমূহকে বন্যায় প্লাবিত করে। নদী বাহিত পলি দ্বারা ঐ নিম্ন ভূমিসমূহ ধীরে ধীরে উঁচু হয় এবং সমভূমির আকার ধারণ করে। একে প্লাবন ভূমি বলে। এ প্রবাহে নদী ক্রমশ ধীরগতি সম্পন্ন হয় এবং বাঁধা এড়িয়ে আঁকাবাঁকা পথে চলতে থাকে। সমভূমি অবস্থায় নদীর ক্ষয় ও পরিবহন কার্য ততো প্রবল হয় না। এ অবস্থায় নদীর সঞ্চয় কার্য শুরু হয়। গঙ্গা নদীর হরিদ্বার হতে রাজমহল পর্যন্ত অংশ এর মধ্য প্রবাহ।


৩) ব-দ্বীপ অবস্থা বা নিম্নগতি (Deltaic or Lower Stage) : নদীর শেষ অংশ বা নদীর নিম্নগতিকে ব-দ্বীব অবস্থা বলা হয়। এ সময় নদীর স্রোতের বেগ খুবই কম হয়। নদীর নিম্নক্ষয় বন্ধ হয়ে যায় এবং স্বল্প পরিমাণে পার্শ্বক্ষয় হতে পারে। ফলে নদীর উপত্যকা খুব চওড়া ও অগভীর হয়। নদীর এ অংশে স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় নদীবাহিত বালুকা, কর্দম ও পলি মোহনায় সঞ্চিত হয়ে নদীর গতিপথে বাধার সৃষ্টি করে। নদীর গতি বাধা পেয়ে তা একাধিক দিক দিয়ে চলে যায়। কালক্রমে নদীমুখে এ পলি সঞ্চিত করে ভূ-ভাগ উচ্চ হয়ে ব-এর আকার ধারণ করে ত্রিকোণাকৃতি দ্বীপের সৃষ্টি করে। এটি ব-দ্বীপ নামে পরিচিত। ব-দ্বীপ গঠন ব্যতীত এ অংশে নদীর খাত পরিবর্তন, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, প্লাবন সমভূমি প্রভৃতি বিভিন্ন ভুমিরূপ দেখতে পাওয়া যায়। গঙ্গা নদীর নিম্নগতি রাজমহল হতে মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত।


নদীর কাজ 

নদী তার অববাহিকার উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে ক্ষয়সাধন, বহন ও অবক্ষেপন - এই তিন প্রকার কার্য করে থাকে। প্রধান নদীগুলো এত দীর্ঘ হয় যে, কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে নদীর এই তিনটি কাজ এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে সম্বন্ধ লক্ষ্য করা সম্ভব হয় না। তবে একটি নদীর গতিপথকে তিনটি নির্দিষ্ট অংশে বিভক্ত করা যায়। যেমন- (ক) ধারণ অববাহিকা (Catchment Basin), (খ) নদীখাত (Channel) এবং (গ) পলি সঞ্চিত ত্রিকোণাকার ভূ-খণ্ড (Deltaic Alluvial cone)।

ধারণ অববাহিকা নদী তার জলধারা এবং প্রস্তর খণ্ড (Rock waste) সমূহ সংগ্রহ করে থাকে। নদীখাত বা উপত্যকায় নদী তার উধ্ব অংশের দ্রব্যসমূহ বহন করে নদীখাতকে পরিষ্কার রাখে। ক্ষুদ্র পার্বত্য জলধারা যে সকল দ্রব্য প্রধান নদীতে বহন করতে পারে না, তা নিম্ন প্রবাহে ক্রমশ: সঞ্চিত হয়ে পলি সঞ্চিত ত্রিকোণাকার ভূ-খণ্ড গঠন করে। নদী বা পার্বত্য জল ধারার এই তিনটি অংশ কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। একটি অংশ অপর একটি অংশের ওপর নির্ভরশীল। নদীর গতিপথে ক্ষয়সাধন, বহন ও অবক্ষেপন কার্যের জন্য শক্তির প্রয়োজন। নদীর শক্তি নির্ভর করে তার (১) পানির পরিমাণ (Volume) ও (২) পানির গতিবেগের (Velocity) ওপর। এই দুটিকে একত্রে নদীর প্রবাহ (Discharge) বলে। নদীর এই শক্তি নদীখাত ও নদীতীর ঘর্ষণে, ক্ষয়কার্যে, বিভিন্ন ক্ষয়প্রাপ্ত দ্রব্য বহনে এবং অবক্ষেপনে ব্যবহৃত হয়।


নদীর ক্ষয়সাধন (Erosion of River) 

নদীর ক্ষয়কার্য প্রধানত: চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেমন- (১) পানি প্রবাহ ক্ষয়, (২) অবঘর্ষ, (৩) ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় ও (৪) দ্রবণ। নদীর এসকল ক্ষয় ক্রিয়া তিন উপায়ে সম্পাদিত হয়। যথা- (ক) পশ্চাত্মখী ক্ষয় সাধন, খ) খাড়াভাবে ক্ষয় সাধন এবং (গ) পার্শ্বক্ষয়। 

ক) পানি প্রবাহ ক্ষয় (Hydraulic Action) : প্রবহমান নদীর পানি নদীখাত ও নদীপার্শ্ব প্রচণ্ড বেগে আঘাত করলে অপেক্ষাকৃত কোমল ও অসংলগ্ন প্রস্তর খণ্ডগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ভেঙ্গে যায় এবং নদীর স্রোতের সঙ্গে বহু দূরে নীত হয়। একে পানি প্রবাহ ক্ষয় বলে। 

খ) অবঘর্ষ (Corrasion) : নদী খাতের সঙ্গে নদীবাহিত প্রস্তর খণ্ডের সংঘর্ষের ফলেও নদী ক্ষয়সাধন করে। নদী বাহিত প্রস্তরখণ্ডগুলো নদীর স্রোতে ঘুরতে ঘুরতে চলে এবং নদীখাতের সাথে সংঘর্ষের ফলে নদীখাতে ছোট ছোট গর্ত বা বর্তুলাকার গর্তের (Potholes) সৃষ্টি করে। এইরূপ গর্তের সৃষ্টির ফলে নদীখাত আরও দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে অবঘর্ষ বলা হয়।

গ) ঘৰ্ষণ ক্ষয় (Attrition) : নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ড (Boulders) একটি অপরটির সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তর খণ্ডে এবং অবশেষে বালুকণায় পরিণত হয়। ফলে নদী অতি সহজেই এগুলো বহন করতে পারে।

ঘ) দ্রবণ ক্ষয় (Solution or Corrosion) : নদীর পানিতে অনেক সময় প্রস্তরখণ্ড দ্রবীভূত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। চুনাপাথর অঞ্চলে এ প্রকার ক্ষয়কার্য বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। একে দ্রবণ বলা হয় । উপরােক্ত চার প্রক্রিয়া একত্রে একটি নদীর ক্ষয়কাজ সম্পন্ন করে। নদীর এ সমস্ত ক্ষয় প্রক্রিয়া তিন উপায়ে সম্পাদিত হয়। যথা: ক) পশ্চাত্মখী ক্ষয়সাধন (Headward Erosion) খ) খাড়াভাবে ক্ষয়সাধন (Downcutting Erosion) এবং গ) পার্শ্বক্ষয় (Lateral Erosion)


পশ্চাত্মখী ক্ষয়সাধনের মাধ্যমে নদী তার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। ভূ-গর্ভস্থ বা অন্ত:প্রবাহের কারণে পাহাড়ের গায়ে যে ঝর্ণার সৃষ্টি হয় তা নদীর একটি অংশ। ঝর্ণার উৎস অঞ্চল ক্রমাগত ক্ষয় সাধনের কারণে দৈর্ঘ্য ওপরের দিকে বাড়তে থাকে। নদী খাড়া ক্ষয় সাধনের মাধ্যমে তলদেশের গভীরতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া নদীর পার্শ্বক্ষয়ও নদীর প্রশস্ততা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে নদী তার এক পাড়ে ক্ষয়সাধন করে এবং বিপরীত পাড়ে এ ক্ষয়িত শিলা/মাটি সঞ্চয় করে থাকে।


নদীর পরিবহন কাজ (Transport work of a River)

নদীর মোট শক্তির শতকরা ৯৫ থেকে ৯৭ ভাগই ঘূর্ণী ও ঘর্ষণজনিত কারণে ব্যয় হয়ে যায়। বাকী অংশ শুধু পরিবহন কাজে ব্যয় হয়। যে কোন বৃহৎ নদী প্রস্তর খণ্ড, বালুকা, কর্দম প্রভৃতি তার বোঝা (load) রূপে বহন করে থাকে। নদী তার এই বোঝা চারটি প্রক্রিয়ায় বহন করে। যথা:

১. দ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহন (Solution), 

২. ভাসমান অবস্থায় বহন (Suspension), 

৩. লম্ফ প্রক্রিয়ায় বহন (Saltation) ও 

৪. আকর্ষণ বা টানের মাধ্যমে বহন (Traction)। 

১. নদী তার গতিপথে অনেক সময় কোন কোন প্রস্তর খণ্ডকে পানির সাথে দ্রবীভূত করে তা পানি স্রোতের সঙ্গে বহন করে থাকে। চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে নদী এই দ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভার বহন করে থাকে। নদীর দ্রবীভূত বোঝার (Dissolved load) পরিমাণে খুব তারতম্য হয়। নদীতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এর ঘনত্ব হ্রাস পায়। পৃথিবীর প্রধান নদীসমূহের গড় দ্রবীভূত বোঝার পরিমাণ ১১৫ থেকে ১২০ পি.পি.এস.। প্রতি বছর এ সমস্ত নদী থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) মেট্রিক টন দ্রবীভূত পদার্থ সমুদ্রে পতিত হয়। 

২. ভাসমান বোঝা (Suspended load) বেশীর ভাগ নদীর মোট বাহিত পদার্থের প্রধান অংশ। নদীর ঘোলা পানি থেকে সহজেই ভাসমান বোঝার ঘনত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভাসমান বোঝার প্রধান অংশ মূলত বালি, পলি ও কর্দম আকৃতির পদার্থে গঠিত। অনেক সময় ক্ষুদ্রাকার প্রস্তরখণ্ড নদীর স্রোতে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে ভেসে যায়, একে ভাসমান বোঝা বলে। 

৩. তুলনামূলকভাবে বৃহদাকার স্রোতের বেগে নদীর তলদেশে (bed) ঠেকে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে থাকে। একে লক্ষ প্রক্রিয়ায় (Saltation process) বহন বলে।

৪. নদীর বোঝার বড় আকৃতির পদার্থ বোল্ডার থাকতে পারে যা ভাসমান অবস্থায় রাখা সম্ভব হয় না। এ ধরনের ভারী ও বড় পদার্থসমূহ নদীর তলদেশীয় ভার (Bed Load)। নদী-বাহিত বিভিন্ন দ্রব্যসমূহ নদীর তলদেশ দিয়ে স্রোতের টানে বাহিত হয় বলে একে নদী গর্ভ বোঝা (Bed load) বা টান বা আকর্ষণ ভার বলা (Traction load) হয়। এই টান বা আকর্ষণের দ্বারাও নদী বহন করে থাকে। ধারণা করা হয়, নদীর তলদেশীয় ভার মোট ভারের শতকরা ১০ ভাগের বেশী হয় না।

নদী তার ভার চারটি প্রক্রিয়ায় বহন করে। যেমন- (১) দ্রবণ প্রক্রিয়ায়, (২) ভাসমান অবস্থায় বহন, (৩) লম্ফদান প্রক্রিয়ায় বহন ও (৪) আকর্ষণ বা টানের মাধ্যমে বহন।

নদীর বহন করার ক্ষমতা নিম্নলিখিত কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন- (ক) নদীতে পানি কমে গেলে, (খ) নদী-ঢালের পরিবর্তন হলে, (গ) নদীর শক্তির তুলনায় অধিক পরিমাণ প্রস্তরখণ্ড (load) নদীতে আসলে (ঘ) নদী কোনো হ্রদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে। এরূপ অবস্থায় নদীর তলদেশে কিছু কিছু প্রস্তরখণ্ড জমা হতে থাকে। বৃহদাকার প্রস্তরগুলো নদীর উচ্চ প্রবাহে এবং ক্ষুদ্রাকার প্রস্তর খণ্ড, বালুকা, কর্দম প্রভৃতি নদীর নিম্ন প্রবাহে অর্থাৎ মোহনার নিকট জমা হয়। একে নদীর অবক্ষেপন (Deposition) বলে।


নিম্নলিখিত অবস্থাসমূহের ওপর নদীর ক্ষয়কার্য নির্ভরশীল 

১. জলবায়ু ও নদীর ক্ষয়কার্যের ওপর নদীর গতিবেগের প্রভাব অধিক, কিন্তু নদীর গতিবেগ আবার প্রবল বারিপাতের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য জলবায়ু নদীর ক্ষয়কার্যকে পরিচালিত করে।

২. নদীগর্ভের শিলার উপাদান ও নদীগর্ভ কোমল শিলা দ্বারা গঠিত হলে নদীর ক্ষয়কার্য প্রবল হয়। কিন্তু কঠিন শিলা অংশে ক্ষয় খুবই কম হয়ে থাকে। 

৩. বাহিত শিলার কঠিন্যতা : নদীবাহিত পদার্থগুলো অধিক কঠিন হলে নদীর ক্ষয়কার্য বেশী হয়। কিন্তু পদার্থগুলো নরম হলে সহজেই গলে যায় এবং ক্ষয়কার্য খুবই কম হয়। 

৪. নদীর পানির গলানো শক্তি ও অনেক সময় নদীর পানির কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ও অন্যান্য পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকায় নদীর ক্ষয়কার্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। 

৫. নদীগর্ভে ফাটল ও সন্ধির অবস্থান : নদীগর্ভে বহু ফাটল (cracks) ও সন্ধি joints) থাকলে তাদের ভেতর পানি প্রবেশ করে এবং শেষে নদীগর্ভের এক বিরাট অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। 


নদীর ক্ষয়কার্য নিম্নোক্ত নিয়ামকসমূহের ওপর নির্ভর করে। যেমন- জলবায়ু, নদীগর্ভে শিলার উপাদান, বাহিত শিলার কাঠিন্যতা, নদীর পানি গলানোর শক্তি, নদীগর্ভে ফাটল ও সন্ধির অবস্থান।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *