জলপ্রপাত (waterfall) / জলপ্রপাত কাকে বলে / জলপ্রপাত কি
জলপ্রপাত কি
জলপ্রপাত বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। যেমন- পানি খাড়াভাবে একটি সুস্ত উপত্যকার ওপর অথবা হিমবাহ উপত্যকায় পতিত হলে এ ধরণের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। বেশীর ভাগ জলপ্রপাতের ওপরে কঠিন শিলা এবং নিচে কোমল শিলা স্তর দেখা যায়। পার্বত্য অবস্থায় নদীস্রোত কোনো কঠিন শিলাস্তর হতে কোমল শিলাস্তরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে কোমল শিলাস্তরটিকে বেশী পরিমাণে ক্ষয় করে ফেলে। ফলে কঠিন শিলাস্তর কোমল শিলাস্তর অপেক্ষা অনেক উচ্চে অবস্থান করে এবং পানি ধারা খাড়াভাবে নিচে পড়তে থাকে। পানির এইরূপ পতনকে জলপ্রপাত (waterfall) বলে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে অবস্থিত নায়াগ্রা জলপ্রপাত পৃথিবীর বিখ্যাত জলপ্রপাত বাংলাদেশের মৌলভী বাজার জেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতটি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
নদী এভাবে কোমল শিলাস্তর ভেতরের দিকে ক্ষয় করতে থাকে। এক পর্যায়ে কঠিন শিলার তলদেশের সমস্ত শিলা ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় তা ওপর থেকে ঝুলতে থাকে। অবশেষে ঝুলতে ঝুলতে কঠিন শিলাস্তর ভেঙ্গে পড়ে এবং জলপ্রপাত পশ্চাদপসরণ করে।
র্যাপিডস্ ও কাসকেড (Rapids and Cascades)
পাহাড়ী খাড়া ঢালের ক্ষয় স্রোতকেই র্যাপিডস' বলে। অনেক সময় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নদী স্রোত নিচে চলতে থাকে। এরূপ ঢালু জায়গায় মাটি পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল থাকতে পারে। ফলে নদীর স্রোতে নরম মাটি অল্প অল্প করে ক্ষয় হয় এবং ছোট ছোট জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। এ জলপ্রপাতগুলো সারিবদ্ধভাবে ওপর থেকে নিচের দিকে অবস্থান করে এবং নদীস্রোত লাফাতে লাফাতে নিচে পড়তে থাকে। এরূপ প্রবহমান স্রোতকে বা সারিবদ্ধভাবে সৃষ্ট ছোট ছোট জলপ্রপাতকে খরস্রোত বা র্যাপিডস (Rapids) বলে। এ অপেক্ষা আরও ক্ষুদ্র জলপ্রপাতকে কাসূকেড (Cascades) বলে। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলপ্রপাতগুলো বেশী দিন স্থায়ী হয় না। মিসরের নীল নদের গতিপথে কাসকেড দেখা যায়।
বর্তুলাকার গর্ত (Potholes)
র্যাপিডস বা জলপ্রপাতের পাদদেশে নদীর পানিতে স্থানীয় ভাবে। অনেক আবর্তের সৃষ্টি হয়। এই অংশে নদীর পানি পাক খেয়ে খেয়ে আবর্তিত হতে থাকে বলে নদী মধ্যস্থিত শিলাচূর্ণের ঘর্ষণে নদীগর্ভের গোলাকৃতি গর্তের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে বর্তুলাকার গর্ত বলে। পর্বত বা মালভূমির উভয় অংশেই এরূপ বর্তুলাকার গর্ত দেখা যায়।
নদী বাঁক (Meander), ব্লাফস (Bluffs) ও নিম্নগামী চরা (Slip-off Slopes, Point Bar)
নদীর সব গতিতেই বাঁক দেখা যায় এবং উর্ধ্ব গতিতে এ ধরণের বাক তুলনামূলকভাবে কম। নদী প্রবাহ বাঁক ঘুরার সময় কেন্দ্রাভিগ বলের কারণে বাইরের দিকে ঝুঁকে গিয়ে পাড়ে আঘাত করে। ফলে, পাড়ের ভিত্তি তল ক্ষয় সাধিত হয় এবং এক পর্যায়ে তা সহজে ধ্বসে পড়ে। তখন নদী পাড় প্রায় খাড়াভাবে অবস্থান করে। এ ধরণের ভূমিরূপকেই ব্লাফ বলে। বাঁকের ভেতর পাড় বরাবর স্রোতের শক্তি কম থাকায় পলি সহজেই জমা হয়ে স্বল্প ঢাল বিশিষ্ট চরার সৃষ্টি করে তাকে বাঁকের চর বলে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো নদীর সঞ্চয় কাজের ফল হলেও উজানে কাজের পরিনতি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions