মোগল বিজয়ের ভারতের অবস্থা
মুখ্য শব্দমালা : ক্ষুদ্র রাজ্য, ইব্রাহিম লোদী, রাজপুত, মোগল
মুখ্য শব্দমালা : ক্ষুদ্র রাজ্য, ইব্রাহিম লোদী, রাজপুত, মোগল
মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা
মধ্য এশিয়া থেকে রাজ্যজয়ের নেশায় বেরিয়েছিলেন বাবর। ১৯১৪ সালে কাবুল অধিকারের পর বাবর ভারত বিজয়ের পরিকল্পনা করেন। ১৫১৯ সালে ভারত অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এসময় ভারতের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন লোদী সুলতানরা। ভারতের পথে ছোট খাট আরো কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করতে কয়েকটি বছর কেটে যায়। বাবরের আক্রমণের পূর্বে ভারতের শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদী (১৫১৭-২৫ খ্রি.)। দিল্লি ও আশেপাশের অঞ্চলগুলোর উপর তার অধিকার ছিল। ইব্রাহিম লোদী খুব দক্ষ শাসক ছিলেন না। সামন্ত রাজা ও প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অনেকেই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তাছাড়া ভারতবর্ষের হিন্দু রাজন্যবর্গ ও রাজপুতদের সম্পূর্ণ রূপে পরাজিত করতে পারেন নি দিল্লির সুলতানগণ। ফলে তুঘলক বংশের শাসনের (১৩২০-১৪১৩) শেষের দিকে দিল্লির কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যের উত্থান ঘটে। ভারতে সুদূর দক্ষিণে বাহমনী ও বিজয়নগর রাজ্য, উত্তর ভারতে কাশ্মীর ও জৌনপুর রাজ্য, পূর্বাঞ্চলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা এবং পশ্চিমে পাঞ্জাব, মালব ও গুজরাটে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজাগণ ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও স্বাধীনতা প্রিয়। এদের সাথে বিরোধের ফলে দিল্লির কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল ও সংকুচিত হয়ে পড়ে। ভারতের কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে বাবর এদেশে মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বাবরের ভারত বিজয়ের প্রাক্কালে পাঞ্জাবে দৌলত খান লোদী স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদী দৌলত খানের স্বাধীন শাসনের বিরোধিতা করায় উভয়ের মধ্যে দারুণ শত্রুতা দেখা দেয়। সুলতান ইব্রাহিম লোদীর খালাত ভাই আলম খান লোদী বিদ্রোহী দৌলত খান লোদীর সাথে যোগ দিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বিহারের শাসনকর্তা দরিয়া খান ও দৌলত খানের সাথে যোগদান। করেন। তাঁরা দিল্লির লোদী শাসনের অবসানের জন্য কাবুলে অবস্থানরত বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান।
দিল্লির লোদী সাম্রাজ্যের বাইরে কয়েকটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মালব। মালব রাজ্যটি ছিল। রাজপুতনা ও বুন্দেলখণ্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। ফিরোজ তুঘলকের রাজত্বকালে (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি.) মালব স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৬ শতকে মালবের সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদ শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার রাজপুত সামন্তরা ক্ষমতা দখল করে নেয়। সামরিক দিক থেকে মালবের অবস্থান ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া গুজরাটেও একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এ রাজ্যটি ছিল সমৃদ্ধশালী। গুজরাটের বন্দর থেকে বহু পণ্য পশ্চিম এশিয়ায় রপ্তানি হতো। এ জন্য পর্তুগিজ বণিকরা। গুজরাটের উপকূলে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করে। গুজরাটের সুলতান শেষ পর্যন্ত পর্তুগিজদের দমন করতে সক্ষম হন। রাজপুতনায় অনেকগুলো স্বাধীন রাজ্য ছিল। দিল্লির সুলতানের দুর্বলতার সুযোগে এসব রাজ্য শক্তিশালী হয়ে উঠে। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে মেবার ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। সংগ্রাম সিংহ বা রানা সংগ্রাম সিংহ ছিলেন মেবারের শাসনকর্তা। তিনি রাজপুতদের নেতা ছিলেন। মধ্যপ্রদেশ পর্যন্ত তার প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তৃত ছিল। ইব্রাহিম লোদীর দুর্বলতার সুযোগে সংগ্রাম সিংহ দিল্লি অধিকারের ইচ্ছা পোষণ করেন।
দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগর রাজ্যের রাজা কৃষ্ণদেব খুব উচ্চাভিলাষী ছিলেন। দাক্ষিণাত্যে নিজ প্রভুত্ব স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ করলে বাহমনী রাজ্যের সাথে তাঁর সংঘাত শুরু হয়। অন্যদিকে উত্তর ভারতে কাশ্মীর রাজ্যেও তখন গোলযোগপূর্ণ অবস্থা বিরাজমান ছিল। পূর্ব ভারতের বাংলায় সুলতান হুসেন শাহের পুত্র নুসরত শাহ রাজত্ব করতেন। তাঁর রাজ্য সীমানা বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ভারতবর্ষ একটি বিশাল দেশ। এদেশে কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতা রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ। এমন পরিস্থিতি বাবরের। জন্য সুযোগ এনে দেয়। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তিনি চূড়ান্ত আক্রমণ পরিচালনা করেন। আক্রমণ করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions