বাবরের ভারত অভিযান
জহিরউদ্দীন মুহম্মদ বাবর ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার দিক থেকে বাবর ছিলেন বিখ্যাত তুর্কি তৈমুর লং-এর অধস্তন পঞ্চম পুরুষ এবং মায়ের দিক থেকে তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন বিখ্যাত মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান। উপমহাদেশে বাবরের প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ মোগল বংশ নামে পরিচিত হয়েছে মোঙ্গলদের সাথে তার সম্পর্ক থাকার কারণেই। বাবর ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্য এশিয়ার ফারগানায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ওমর মির্জা ফারগনার শাসনকর্তা ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর বাবর বার বছর বয়সে ফারগানার অধিপতি হন। তিনি তাঁর বিখ্যাত পূর্বপুরুষ তৈমুরের রাজধানী সমরখন্দ একাধিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দখল করেন। কিন্তু অচিরেই বাবরের নিকট আত্মীয় পরিজন, রাজন্যবর্গ এবং উজবেক নেতা সাইবানি খানের বিরুদ্ধাচারণের ফলে ফারগানা ও সমরখন্দ তাঁর হাত ছাড়া হয়ে যায়। তিনি রাজ্য হারা হয়ে ভাগ্যান্বেষণে বের হন। এভাবেই এক সময় হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করেন তিনি। ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে উজবেক শাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রথম বারের মতো বাবর কাবুল জয় করেন। কাবুল বিজয়ের পরও বাবর পিতৃসিংহাসন পুনরুদ্ধার ও রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করেন।
বাবরের ভারত অভিযান আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। ঐতিহাসিকদের মতে মধ্য এশিয়ায় বাবরের যে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছিল তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই তিনি ভারত অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ছাড়াও ভৌগোলিকভাবে হিন্দুস্তানের অবস্থান ছিল কাবুলের পাশেই। অন্যদিকে ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভারতীয় কোনো কোনো শাসকের আমন্ত্রণ বাবরকে ভারত আক্রমণে উৎসাহ যুগিয়েছিল। দিল্লির শাসক ইব্রাহিম লোদীর বিরুদ্ধে পানিপথের যুদ্ধের পূর্বেও বাবর কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এসব অভিযানকে প্রাথমিক অভিযান বলা হয়ে থাকে। ১৫১৯ থেকে ১৫২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাবর ভারতে তিনটি অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে তিনি সিন্ধুনদ অতিক্রম করে অতি সহজেই বজৌর দুর্গ, ভীরা, কুশব ও চেনাব নদীর অববাহিকা অঞ্চল দখল করেন। ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খান লোদী ও কয়েকজন আফগান অমাত্য বিশেষ করে আলম খানের আমন্ত্রণ জানালে বাবর তার সৈন্যবাহিনীসহ পাঞ্জাবে প্রবেশ করেন এবং লাহোর, দিপালপুর ও অন্যান্য স্থান অধিকার করেন। এ বিজয়ের পর বাবর পাঞ্জাবকে কয়েকভাগে ভাগ করেন এবং দৌলত খানের পুত্র দিলওয়ার খান, ইব্রাহিম লোদীর চাচা আলম খান এবং মোগল আমীরদেরকে প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়ে কাবুলে ফিরে যান। বাবরের অনুপস্থিতিতে দৌলত খান পাঞ্জাব পুনরুদ্ধার করেন এবং আলম খান ও দিলওয়ার খানকে বিতাড়িত করেন। আলম খান বাধ্য হয়ে কাবুলে আশ্রয় নেন এবং বাবরের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ফলে ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে বাবর পাঞ্জাব অভিমুখে যাত্রা করেন। তিনি সহজে পাঞ্জাব জয় করেন এবং দিল্লির দিকে এগিয়ে যান। ইব্রাহিম লোদী বাবরকে পানিপথ প্রান্তরে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাধা দেন। এই বিখ্যাত পানিপথ প্রান্তরের যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদী পরাজিত হলে প্রাথমিকভাবে বাবরের ভারত বিজয় সম্পন্ন হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions