বাংলাদেশ সরকারের স্বরূপ
সরকার যে কোন দেশের শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। সরকারকে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। মূলত: রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধিত হয় সরকারের মাধ্যমে। আর এ কারণে সরকার ব্যতিত একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। রাষ্ট্র গঠিত হয় চারটি মূল উপাদানের সমন্বয়ে যেমন, নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড, জনগণ, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। এই চারটি উপাদানের একটি ব্যতিত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। তবে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে সরকারের কাঠামো ও কার্য প্রণালীই একে গুরুত্ববহ করে তোলে। এ কারণে সরকারকে কখনো কখনো দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক বলে আখ্যা দেয়া হয়। বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কাঠামো ও কার্যগতভাবে কতগুলো বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক ও সংসদীয় কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত অর্থাৎ এই সরকার কাঠামোয় একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারই রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল সূতিকাগার হিসেবে আইন প্রণয়ন,বাস্তবায়ন ও ব্যাখ্যা সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমিকা পালন করবে। সরকারের তিনটি অঙ্গ- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। প্রতিটি অঙ্গ ‘নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য' নীতির মাধ্যমে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কার্যকরি। একটি বিভাগ কখনও অন্য বিভাগের কার্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
সংসদীয় সরকার কাঠামোর নিয়ম মেনে বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংসদকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বিভাগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী শাসন বিভাগের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পদ হল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এই সরকার ব্যবস্থায় একটি মন্ত্রিসভা থাকবে এবং বাংলাদেশ সংবিধানের ধারা ৫৫-র ৩ অনুসারে মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকবে।
শাসন বিভাগ
শাসন বিভাগের প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে; কিন্তু সকল ক্ষেত্রে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদেরও প্রধান। মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করেন। মন্ত্রীদের মধ্যে দায়দায়িত্ব বন্টন করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সরকার ব্যবস্থার প্রধান নীতিনির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে আইন বাস্তবায়নগত সকল ক্ষমতা শাসন বিভাগের এখতিয়ারে। বাংলাদেশের শাসন বিভাগ এর ব্যাপ্তি সমুন্নত রেখেছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে একেবারে তৃণমূল পযায় পর্যন্ত। এ কারণে সরকারের এই বিভাগটির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সকল স্তরে আইন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
আইন বিভাগ
বাংলাদেশ সরকারের আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সংশোধন করার অধিকার রাখে, যা সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি গৃহীত হওয়ার দরুণ আইনসভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের হাতেই নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। সরকার কর্তৃক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত করার ক্ষমতা মহান সংসদের হাতে থাকার কারণে বাংলাদেশে সংসদের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হল-আইন ও শাসন প্রণয়নগত সকল বিষয়ে সংসদ কর্তৃক গৃহীত নীতিমালাই প্রযোজ্য হবে এবং তা শাসন বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে। এর ব্যতয় হওয়া সাংবিধানিকভাবে আইন লংঘনের শামিল।
বিচার বিভাগ
বাংলাদেশের সরকার কাঠামোতে বিচার বিভাগ সরকারের সকল প্রকার বিচারিক কার্য সম্পাদন করে থাকে। বিচারিক কার্যের অংশ হিসেবে এই বিভাগটি মূলত: সংবিধান ও আইন অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে থাকে ও জনগণের অধিকার রক্ষা করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে থাকে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি দেশের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। সেদিক থেকে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি সংবিধান কর্তৃক রীতিসিদ্ধ । এ ছাড়া সংবিধান সমুন্নত রেখে বিচার বিভাগ তার বিচারিক কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে ।
উপরিউল্লিখিত সরকারের তিনটি বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দান, জনগণের অধিকার সংরক্ষণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি নিশ্চিতকরণসহ সকল প্রকার জনকল্যাণমূলক কার্যাদি করে থাকে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের উপরিউক্ত কার্যাবলি সম্পাদনের অধিকার সংবিধান কর্তৃক প্রণীত। বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকারই সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ও কৌশল নির্ধারণ করে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions