সম্রাট আকবরের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা
আকবরের ভূমি শাসন ব্যবস্থা:
সম্রাট আকবরের ভূমি শাসন ব্যবস্থা অনন্য কৃতিত্বের দাবীদার। শেরশাহের রাজস্ব-সংস্কার নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে মুজাফফর খান তুরবতী ও রাজা টোডরমলের সহযোগিতায় আকবর রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। তাঁর রাজস্ব নীতির মূল লক্ষ্য ছিল- ১. জমির শ্রেণি বিভাগকরণ, ২. উৎপন্ন শস্যের উপর ভিত্তি করে রাজস্ব নির্ধারণ।
ভূমি জরিপ, ভূমির শ্রেণি বিভাগ ও ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা
সম্রাট আকবরের অর্থমন্ত্রী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত টোডরমল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সকল জমি জরিপ করিয়ে উর্বরতা ও কত কাল যাবৎ চাষাবাদ করা হয়-এসব তথ্যর ভিত্তিতে চাষের জমি সমূহকে ৪ ভাগে ভাগ করেন। যথা ১. পোলাজ জমি— এ সমস্ত জমি প্রতি বছর চাষ করা হত। ২. পাউতি জমি— এ ধরনের জমি একবার চাষের পর উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কিছুদিন অনাবাদী রাখা হত। ৩. চাচর জমি— এ সমস্ত জমি তিন বা চার বছর পর পর চাষ করা হত। ৪. বন্যর জমি— এ ধরনের জমি পাঁচ বছরের জন্য অনাবাদী থাকত। প্রথম দুই ধরনের ভূমি থেকে উৎপন্ন শস্যের এক তৃতীয়াংশ ভূমি রাজস্ব হিসেবে গৃহীত হতো। চাচর ও বন্যার জমির উপর সামান্য হারে রাজস্ব ধার্য করা হয়। কৃষকগণ নগদ টাকায় অথবা শস্যে খাজনা দিতে পারতো। এই ভূমি রাজস্ব নীতি যাবতী’ বা টোডরমলের ‘রায়তওয়ারী’ প্রথা নামে পরিচিত। এছাড়াও কোন কোনো জমির উৎপাদিত ফসলের ১/৩ অংশ সরকার কর হিসেবে পেত। সাম্রাজ্যের কোনো কোনো সুবাহতে ফসল উৎপাদনের কোনো জরিপ না করে অনুমানের ভিত্তিতে সরকার ও রায়তের মধ্যে ফসল ভাগ করা হতো।
প্রত্যেক সুবাহ বা প্রদেশের রাজস্ব আদায়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলা হতো দিওয়ান। তিনি আদায়কৃত রাজস্ব থেকে সুবাদারকে প্রয়োজনীয় অর্থ দেয়ার পর উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় রাজকোষে প্রেরণ করতেন। বন্যা, দুর্ভিক্ষ ও আর্থিক দুর্যোগের সময় রাজস্ব আদায় শিথিল করা হতো। প্রয়োজনে খাজনা মওকুফ করার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। রাজস্ব কর্মচারিদের দুর্নীতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো।
ফলাফল
এই রাজস্ব নীতির ফলে কৃষক ও রাষ্ট্র উভয় পক্ষই লাভবান হয়। রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারিত হওয়ায় রাষ্ট্রের ঘাটতি কমে যায় এবং রাজস্ব কর্মচারিদের দুর্নীতি বন্ধ হয় এবং পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions