Home » » সমাজ সংস্কারে নবাব আব্দুল লতিফের অবদান

সমাজ সংস্কারে নবাব আব্দুল লতিফের অবদান

সমাজ সংস্কারে নবাব আব্দুল লতিফের অবদান

বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার পর মুসলমান সম্প্রদায় এক চরম দুর্দশার সম্মুখীন হয়। বিদেশি শাসন ও ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ না করার ফলে তাঁরা একদিকে যেমন চাকুরিসহ সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে, অন্যদিকে সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক সহ জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে। এমন অধঃপতিত অবস্থা থেকে যেসব মনীষীর আন্তরিক ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় বাংলার মুসলমানদের মধ্যে জাগরণ আসে তাদের মধ্যে নওয়াব আবদুল লতিফ অন্যতম। 

আবদুল লতিফের জন্ম ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর জেলায়। কলকাতা মাদ্রাসায় তিনি ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে আবদুল লতিফ প্রথমে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে এবং কলকাতা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন এবং ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইন অনুযায়ী বাংলায় ব্যবস্থাপক পরিষদ গঠিত হলে তিনি এর সদস্য মনোনীত হন। আবদুল লতিফ

১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেন। কর্মজীবনে কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার প্রথমে তাঁকে ‘খান বাহাদুর' এবং পরে নওয়াব’ উপাধিতে ভূষিত করে। আবদুল লতিফ যখন সাতক্ষীরায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন তখন তিনি সেখানকার কৃষকদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা সরকারকে অবহিত করেন এবং সুবিচারের জন্য অনুরোধ জানান। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন গঠিত হলে এর সুপারিশ অনুসারে নীলচাষ কৃষকদের ইচ্ছাধীন করা হয়। ফলে বাংলার কৃষকরা নীলকরদের হাত থেকে রেহাই পায়। 

নওয়াব আবদুল লতিফ নিজে ইংরেজ অনুগত ছিলেন এবং নিজেদের স্বার্থে মুসলমানদের ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ প্রয়োজন বলে মনে করতেন। ইংরেজ শাসকদের প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা লাভের স্বার্থে তিনি মুসলমানদের ইংরেজ বিদ্বেষী  মনোভাব পরিহার করে তাদের সাথে সহযোগিতার নীতি গ্রহণের জন্য মুসলমানদের অনুরোধ জানান। তার প্রচেষ্ঠায় মুসলমানেরা ইংরেজদের প্রতি জেহাদী মনোভাব ত্যাগ করে। উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে। 

নওয়াব আবদুল লতিফ বাংলার মুসলমান সমাজের অগ্রগতির জন্য এক বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। মুসলমানদের শিক্ষা সমস্যার বিষয়টি তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করে। তিনি স্বীয় বাস্তববাদী বিবেচনা দ্বারা উপলব্ধি করেন যে, ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুসলমানদের উন্নতি অসম্ভব। তাই তিনি আধুনিক শিক্ষার আলোকে মুসলমান সমাজের অনগ্রসরতা ও কুসংস্কার দূর করে তাদের সর্বাঙ্গীন উন্নতির চেষ্টা করেন। এ উদ্দেশ্যে জনমত গঠনের জন্য তিনি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘মুসলমান ছাত্রদের পক্ষে ইংরেজি শিক্ষার সুফল’ শীর্ষক ফার্সি ভাষায় একটা রচনা প্রতিযোগিতা আহবান করেন। এ উদ্যোগে মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে দারুন সাড়া জাগায় এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে লেখা প্রেরিত হয়। আবদুল লতিফের সক্রিয় প্রচেষ্টায় কলকাতা মাদ্রাসায় এ্যাংলো-ফার্সিয়ান বিভাগ খোলা হয় এবং উর্দু ও বাংলা শিক্ষার আয়োজন করা হয়। উচ্চ শিক্ষায় মুসলমানদের অসুবিধার কথা তিনি সরকারের কাছে তুলে ধরেন। তাঁর চেষ্টার ফলেই কলকাতার হিন্দু কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং মুসলমান ছাত্রদের অধ্যয়নের সুযোগ সেখানে তৈরি হয়।

আবদুল লতিফের সর্বাপেক্ষা উল্লেখ্যযোগ্য কীর্তি ছিল ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘মোহামেডান লিটারারী সোসাইটি' বা মুসলিম সাহিত্য সমাজ প্রতিষ্ঠা। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার এবং তাদেরকে পরিবর্তিত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করাই ছিল এ সমিতির উদ্দেশ্য। ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বাংলার মুসলমানদের বিদ্বেষভাব দূর করে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং তাদের প্রতি বৃটিশ শাসকদের সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করার ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এখানে মুসলমান সম্প্রদায়ের শিক্ষা সমস্যা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়াদির উপর মূল্যবান আলোচনা হতো। মুসলমানদের রীতিনীতির সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার মিলন ঘটাবার জন্য এর মাধ্যমে চেষ্টা চলে। একবার বিখ্যাত মনীষী ও আলীগড় আন্দোলনের নেতা স্যার সৈয়দ আহমদ আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতায় সোসাইটির এক সভায় ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর মূল্যবান ভাষণ দেন। অন্য সময়ে মাওলানা কেরামত আলীও এ সমিতিতে বক্তৃতা করেন।

মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য নওয়াব আবদুল লতিফ আরও কিছু অবদান রাখেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে  সরকারি সাহায্যে মফস্বলে কয়েকটি মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। ঐ সব মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা চালু করা হয়। আবদুল লতিফের চেষ্টার ফলে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিদ্ধান্ত হয় যে, সরকার হুগলী কলেজের যাবতীয় ব্যয় বহন করবে এবং দানবীর হাজী মুহসীনের প্রদত্ত তহবিলের অর্থ শুধু বাংলার মুসলমানদের শিক্ষার উন্নতির জন্য ব্যয়িত হবে। পূর্বে মহসিনফান্ডের বৃত্তি হিন্দু মুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। 

আবদুল লতিফ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বাংলার মুসলমানদের দুরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, মুসলমানদের সার্বিক স্বার্থ রক্ষা কল্পে ইংরেজ সরকারের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। সে জন্য ইংরেজ বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে তিনি তাদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। নওয়াব আবদুল লতিফ ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ইহলোক ত্যাগ করেন।  বাংলার মুসলমানদের নবজাগরণে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ও সত্যিই প্রশংসনীয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *