Home » » স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও আলীগড় আন্দোলন

স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও আলীগড় আন্দোলন

স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও আলীগড় আন্দোলন

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের ব্যর্থতা ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে নিরুৎসাহ ও হতাশার সৃষ্টি করে। ইংরেজ শাসনকে মনে প্রাণে গ্রহণ করতে না পারায় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি অনীহার কারণে তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে এবং দুঃখ দুর্দশার আবর্তে নিপতিত হয়। মুসলমানদের সেই দুর্যোগময় মুহূর্তে তাদের ত্রাণকর্তারূপে উত্তর ভারতে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের আবির্ভাব ঘটে। অধঃপতিত অবস্থা থেকে মুসলমানদের পুনরুদ্ধার ও তাদের পুনর্জাগরণের জন্য তিনি উত্তর ভারতে আলীগড় কেন্দ্রিক যে আন্দোলন সৃষ্টি করেন, ইতিহাসে তা ‘আলীগড় আন্দোলন' নামে প্রসিদ্ধ।

১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে সৈয়দ আহমদ খানের জন্ম হয়। কোম্পানির অধীনে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেরেস্তাদারের চাকুরী গ্রহণ করেন এবং পরে সাব জজ পদে উন্নীত হন। তিনি ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল, হান্টার শিক্ষা কমিশন ও ভারতীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বৃটিশ সরকার ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ‘নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। 

ইংরেজ শাসনাধীনে ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের শোচনীয় অবস্থা সৈয়দ আহমদ খানকে ব্যথিত করে তোলে। তিনি উপলব্ধি করেন যে, মুসলমানদের ধর্মীয় গোঁড়ামি বৃটিশ বিরোধী মনোভাব ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি অনীহা তাদের দুর্দশার অন্যতম কারণ। তাই প্রথমে তিনি পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানে তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে সচেষ্ট হন। তিনি মুসলমানদেরকে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ এবং ইংরেজ শাসকদের সাথে সহযোগিতা করার উপদেশ দেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর মুসলমানরা শাসক শ্রেণির বিরাগ ভাজন হয়ে পড়ে। কারণ ব্রিটিশ সরকারের ধারণা ছিল যে।

সিপাহী বিদ্রোহের মূলে মুসলমানরা দায়ী। ইংরেজ সরকারের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য সৈয়দ আহমদ খান ‘সিপাহী বিদ্রোহের কারণ এবং ভারতের রাজ ভক্ত মুসলমান নামে দু'খানি বই লেখেন। তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেন যে, সিপাহী বিদ্রোহের জন্য মুসলমানরা দায়ী ছিল না। বরং বিদ্রোহকালে অধিকাংশ মুসলমান ছিল ইংরেজদের পক্ষে। শাসক-শাসিতের। দূরত্ব এবং তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এ বিপ্লবের মূলে ছিল বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ঐতিহাসিক ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার তার ভারতীয় মুসলমান' (The Indian Musalman) গ্রন্থে সে বিদ্রোহের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে দায়ী করলে যুক্তি দিয়ে সৈয়দ আহমদ তা খণ্ডন করেন। ফলে মুলমানদের প্রতি ইংরেজদের দৃষ্টিভঙ্গির যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ায় স্যার সৈয়দ আহমদের ভূমিকা

স্যার সৈয়দ আহমদ শুধু বৃটিশ সরকার ও মুসলমানদের মধ্যেই সম্পর্কের উন্নতি করে ক্ষান্ত হন নি। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রসারে উদ্যোগী হন। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি উত্তর ভারতের গাজীপুরে একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ইংরেজিতে রচিত মূল্যবান বইগুলো উর্দুভাষায় অনুবাদ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতরণের উদ্দেশ্যে তিনি বিজ্ঞান সমিতি' নামে একটা সংস্থা গঠন করেন। পাশ্চাত্যের ভাবাদর্শ ও | শিক্ষাব্যবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য সৈয়দ আহমদ খান নিজে বিলাত যান। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে এসে ‘তাহজীবুল আখলাক' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের নৈতিকতা ও আচার ব্যবস্থার উন্নতি এবং তাদের মধ্যকার কুপমন্ডুকতা ও কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করেন। একই সময়ে তিনি বেনারসে ভারতীয় মুসলমানদের শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি', নামে একটি সংস্থাও গঠন করেন। এ সমিতির সুপারিশে মুসলমানদেরকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য সৈয়দ আহমদ খান ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলীগড়ে ‘মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দু’বছর পরে এটি কলেজে উন্নীত হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে উক্ত ‘মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর আলীগড় মুসলমানদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এখানে মুসলমান ছাত্ররা শুধু আধুনিক কলা ও বিজ্ঞান শিক্ষাই গ্রহণ করে নি, বরং সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় একাত্মতার দরুন আলীগড় তাদের ঐক্যের সেতুবন্ধন রচনায়ও সাহায্য করে। আলীগড় কলেজকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক ভাবধারা, চিন্তা-চেতনা জাগ্রত হয় এবং পরবর্তীকালে এই কলেজ তাদের রাজনৈতিক জীবনকেও প্রভাবিত করে। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আহমদ খান মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স' নামে অন্য একটি সংস্থা গঠন করেন। প্রতি বছর ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলমান নেতারা এক জায়গায় সমবেত হয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের শিক্ষার সমস্যা ও প্রতিকার বিষয়ে আলোচনা করতেন। আলীগড়ের বার্তা তাঁরা দেশের সর্বত্র পৌছে দেন। এভাবে সৈয়দ আহমদের প্রচেষ্টা ও আলীগড় আন্দোলনের ফলে মুসলিম সমাজে এক নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটে। সৈয়দ আহমদ খান কুরআনের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন। তিনি সকল প্রকার গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ছিলেন। মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। কিন্তু তাঁর যুক্তিবাদী চিন্তা ও আধুনিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি সনাতনপন্থীদের বিরোধিতার সম্মুখীন হন।

প্রথম দিকে সৈয়দ আহমদ খান দেশের অগ্রগতির স্বার্থে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সহযোগিতার কথা বলেন। কিন্তু ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে বেনারসে হিন্দি-উর্দু বিতর্ক তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায়। এ সময়ে উত্তর প্রদেশে নেতৃস্থানীয় হিন্দুরা কোর্ট কাচারীতে উর্দুর পরিবর্তে নাগরী বর্ণমালায় লিখিত হিন্দি ভাষা প্রচলনের জন্য আন্দোলন শুরু করে। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর তিনি মুসলমানদেরকে কংগ্রেসে যোগ দিতে নিষেধ করেন। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অভিজাতদের নিয়ে তার চেষ্টায় ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড ইন্ডিয়ান পেট্রিয়টিক এসোসিয়েশন'। ভারতীয় জনগণের মন থেকে বৃটিশ বিরোধী মনোভাব দূর করা, দেশে শান্তি রক্ষা ও সরকারকে সহযোগিতা প্রদান করা ছিল এ সমিতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এ সময় হিন্দু পুনরুত্থানবাদী আন্দোলনের কারণে উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে ‘গো-হত্যা নিবারণ সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং সহিংসতার কারণে মুসলমানদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সৈয়দ আহমদ খানের আহবানে আলীগড়ে ‘মোহামেডান ডিফেন্স এসোসিয়েশন গঠিত হয়। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্যার সৈয়দ আহমদ মৃত্যুবণন করেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সংকটকালে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও নবচেতনা জাগিয়ে তুলে তিনি তাদেরকে আলোর পথের সন্ধান দিয়েছিলেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *