Home » » সৈয়দ আমির আলীর অবদান

সৈয়দ আমির আলীর অবদান

সৈয়দ আমির আলীর অবদান

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার মুসলিম সমাজের নবজাগরণে যার অবদান অত্যন্ত মূল্যবান তিনি হলেন সৈয়দ আমীর আলী। পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক ও বৈষয়িক অগ্রগতি লাভের পাশাপাশি তিনি মুসলমানদের রাজনৈতিকভাবে জাগিয়ে তোলার পক্ষপাতি ছিলেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে হুগলীর এক সম্ভ্রান্ত শিয়া পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ এবং বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডনের লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করার পর ১৮৭৩ | খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। কর্মজীবনে তিনি বহু দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি ছিল তাঁর দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০৪ সালে তিনি লন্ডনে চলে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য নিয়োজিত হন এবং আমৃত্যু সে পদে বহাল থাকেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু ঘটে। 

কর্মজীবনের শুরুতে আইন ব্যবসার পাশাপাশি সৈয়দ আমীর আলী সমাজ সেবার কাজেও মনোনিবেশ করেন। বাংলা তথা ভারতের মুসলমান নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। একজন দূরদর্শী চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনিও নওয়াব আবদুল লতিফ এবং স্যার সৈয়দ আহমদ খানের অনুসরণে ভারতের মুসলমানদের জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ ও বৃটিশ সরকারের সাথে সহযোগিতার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।

রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁর পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। সৈয়দ আহমদ ও আবদুল লতিফ সর্বপ্রকার রাজনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ থেকে মুসলমান সম্প্রদায়কে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত হলে মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তার ও সার্বিক উন্নতি ব্যাহত হবে, এ ধারণা তাঁদের উভয়েরই ছিল। আমীর আলীর নিকট তাঁদের এ ধারণা গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দাবি দাওয়ার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সে কারণে তিনি ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশন' নামে একটি সমিতি গঠন করেন। পরবর্তীতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কলকাতাস্থ প্রধান শাখার নাম করণ করা হয় সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন'। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চার, ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং তাদের নায্য দাবিদাওয়া নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের নিকট পেশ করা ছিল এ। সমিতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। বক্তৃতা অনুষ্ঠান, সভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে মুসলমানদের রাজনৈতিক শিক্ষা ও ঐক্য গড়ার প্রয়াস এর মাধ্যমে গৃহীত হয়। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সমিতির পক্ষ থেকে ভাইসরয় লর্ড রিপনের উদ্দেশ্যে প্রেরিত স্মারক লিপিতে সৈয়দ আমীর আলী মুসলমানদের শিক্ষার বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে মূল্যবান প্রবন্ধ লেখেন। এ সব প্রচেষ্টার ফলে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে সরকার মুসলমানদের শিক্ষার অগ্রগতির জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে আমীর আলীর দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিল। নওয়াব আবদুল লতিফের ন্যায় মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও হুগলীর মাদ্রাসাসমূহের ছাত্রসংখ্যা খুবই হ্রাস পাওয়ায় মহসীন তহবিলের অর্থ এসব প্রতিষ্ঠানে অনর্থক খরচ না করে কলিকাতায় একটি কলেজ ও ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার জন্য আমীর আলী প্রস্তাব করেন। তাঁর দাবিতে সরকার ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসায় কলেজ মানের ইংরেজী শিক্ষার ব্যবস্থা করে। করাচীতে মুসলমানদের লেখাপড়ার জন্য একটি কলেজ তাঁরই উৎসাহে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি নিজে ইসলামী ও । পাশ্চাত্য উভয় জ্ঞানেই পারদর্শী ছিলেন। তাঁর রচিত দু'খানি গ্রন্থ “The Spirit of Islam' এবং 'A short History of the Saracens' তাঁকে অমরত্ব দান করেছে। বইগুলোর মাধ্যমে তিনি ইসলাম ধর্মের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা ও ইসলামের অতীত গৌরবের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।

সর্বতোভাবে মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট থাকা সত্ত্বেও আমীর আলী মনের দিক থেকে অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমিতির দ্বারা ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তিনি বিশ্বাসী ছিলেন যে, জাতীয় কাজকর্মে হিন্দু-মুসলিম উভয় জাতির আন্তরিক সহযোগিতার উপর আধুনিক ভারতের উন্নতি নির্ভরশীল। তথাপি মুসলমানদের পৃথক | রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার পর তিনি লন্ডন থেকে এর প্রতি সমর্থন

জানান। ১৯০৮ সালে লন্ডনে মুসলিম লীগের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আমীর আলী লন্ডন মুসলিম লীগের এক প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারত সচিব লর্ড মর্লের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং মুসলমানদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরেন। এদেশে মুসলমানদেরকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে সৈয়দ আমীর আমীর ভূমিকা ছিল অনন্য সাধারণ। বস্তুত সৈয়দ আমীর আলীই প্রথম ব্যক্তি যিনি মুসলমানদের এক জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সে দৃষ্টিতে তাকেই অনেকে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবর্তক বলে মনে করেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *