Home » » জিন্নাহর ১৪ দফা

জিন্নাহর ১৪ দফা

জিন্নাহর ১৪ দফা

বৃটিশ ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির ইতিহাসে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর চৌদ্দ দফা দাবি একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। নেহেরু রিপোর্টে ভারতীয় মুসলমানদের দাবি দাওয়ার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শিত হওয়ায় ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে জিন্নাহ্ মুসলিমলীগের পক্ষ থেকে তাঁর বিখ্যাত ১৪ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। ভারতের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্র রচনার যে প্রয়াস সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে গৃহীত হয়, চৌদ্দ দফা দাবি সে ক্ষেত্রে ছিল আরেকটি সংযোজন।

আপনারা পূর্ববর্তী পাঠে জেনেছেন রাজকীয় সাইমন কমিশন বয়কটের পাশাপাশি ভারতের রাজনৈতিক দলসমূহের উদ্যোগে শাসনতন্ত্রের রূপরেখা প্রণয়নের জন্য মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে একটি কমিটি নিয়োগ করা হয়। নেহেরু রিপোর্ট নামে উক্ত কমিটির সুপারিশে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন এবং আইনসভায় আসন সংরক্ষণের স্বীকৃতি না থাকায় মুসলিম লীগ সে রিপোর্ট গ্রহণ করতে রাজী হয় নি। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে কলকাতায় সর্বদলীয় কনভেনশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লীগের পক্ষ থেকে কিছু সংশোধনী আনেন। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে মুসলমানদের জন্য তিন ভাগের এক ভাগ আসন সংরক্ষণ, রেসিচ্যুয়ারি বা অনুল্লিখিত ক্ষমতা প্রদেশের হাতে দেয়া ইত্যাদি ছিল এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু হিন্দু মহাসভাসহ অন্যান্যরা জিন্নাহর প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। তার প্রস্তাব অগ্রাহ্য হওয়ায় জিন্নাহ একে হিন্দু মুসলমানের পথের বিভক্তি বলে আখ্যায়িত করেন। তেজ বাহাদুর সাঞ্জ জিন্নাহর প্রস্তাব মেনে নিয়ে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু বহু সদস্য তাতে রাজী না হওয়ায় সর্বদলীয় সম্মেলনে নেহেরু রিপোর্ট সম্পর্কে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হলো না। এ দিকে জিন্নাহ শীঘ্রই মুসলমানদের দাবিসমূহ বিন্যস্ত করেন, যা তাঁর চৌদ্দ দফা নামে খ্যাত। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে দিল্লীতে মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে জিন্নাহ্ তাঁর বিখ্যাত চৌদ্দ দফা পেশ করেন। 

জিন্নাহর ১৪ দফা গুলো নিম্নরূপ:  

১. ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের গঠন হবে ফেডারেল পদ্ধতির। রেসিচ্যুয়ারি বা অনুল্লিখিত ক্ষমতা থাকবে প্রদেশের হাতে। 

২. সব প্রদেশকে একই ধরনের স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।

৩. প্রদেশসমূহের আইন পরিষদে ও অন্যান্য নির্বাচিত সংস্থায় সংখ্যালঘুদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। তবে সে প্রতিনিধিত্বের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠরা যাতে সংখ্যালঘুতে পরিণত না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। 

৪. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব মোট সদস্য সংখ্যার এক তৃতীয়াংশের কম হবে না। 

৫. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে কোন সম্প্রদায় ইচ্ছা করলে পৃথক নির্বাচনের বদলে যেকোনো সময় যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে।

৬. ভূখণ্ডগত কোনো পুনর্গঠন দ্বারা পাঞ্জাব, বাংলা ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্ষুন্ন করা যাবে না। 

৭. সকল সম্প্রদায়ের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শিক্ষার অধিকার দিতে হবে। 

৮. কোনো সম্প্রদায়ের তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সম্মতি ছাড়া কোনো আইন পরিষদ বা নির্বাচিত সংস্থায় উক্ত সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো আইন বা প্রস্তাব অথবা সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে না। 

৯. সিন্ধুকে বোম্বে প্রেসিডেন্সি থেকে পৃথক করতে হবে। 

১০. ভারতের অন্যান্য প্রদেশের ন্যায় বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে শাসন সংস্কার প্রবর্তন করতে হবে।

সমস্ত রাষ্ট্রীয় ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের চাকুরীতে যোগ্যতা অনুসারে অন্যান্য ভারতীয়দের ন্যায় পর্যাপ্ত হারে মুসলমানদের নিয়োগ করতে হবে। মুসলমানদের সংস্কৃতি, ভাষা, শিক্ষা, ধর্ম, ব্যক্তিগত আইন ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন শাসনতন্ত্রে থাকতে হবে। 

১৩. কমপক্ষে সংখ্যানুপাতিক এক তৃতীয়াংশ মুসলমান মন্ত্রী ছাড়া কেন্দ্র বা কোনো প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠন করা যাবে না। 

১৪. ভারত ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত সব রাজ্যের সম্মতিছাড়া কেন্দ্রীয় আইনসভা কর্তৃক শাসনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।

জিন্নাহর চৌদ্দ দফার গুরুত্ব 

হিন্দু মুসলমানের মিলনের চেষ্টা করে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সফল হতে না পেরে শেষ পর্যন্ত উপরিউক্ত চৌদ্দ দফা দাবিনামা তৈরি করেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর এ দাবিগুলো ছিল নেহেরু রিপোর্টের প্রতিবাদস্বরূপ। এগুলো বিশ্লেষণ করলে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের লক্ষৌচুক্তির মাধ্যমে মুসলমানদের রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া ও আশাআকাংখা বাস্তবায়নের যে শর্তাদি প্রদত্ত হয়েছিল তার প্রতি কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ও তাদের মিত্রদের অশ্রদ্ধা ও অনীহা ভারতের মুসলমানদের বিক্ষুদ্ধ করে তোলে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের নেহেরু রিপোর্ট ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের চেয়ে অনৈক্যই সৃষ্টি করে অধিক। তবে এতে মুসলমানদের একটা লাভ হয়েছে যে, ইতিপূর্বে বিভক্ত মুসলিম উপদলসমূহ এখন থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতিতে অংশ নেয়। তাছাড়া পরবর্তীকালে ম্যাকডোনাল্ডের সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ মূলত জিন্নাহর চৌদ্দ দফার উপর ভিত্তি করেই প্রণীত হয়েছিল ভারতের সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। কাজেই চৌদ্দ দফা দাবির গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য।


পরিশেষে বলা যায় যে, জিন্নাহর চৌদ্দ দফা ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ভারতীয়দের পক্ষ থেকে সংবিধানের যে খসড়া প্রণীত হয়েছিল ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে, এটি নেহেরু রিপোর্ট নামে খ্যাত। শাসনতন্ত্রে সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্ব সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচনের দাবির মতো বিষয় নিয়ে যে অনৈক্য সৃষ্টি হয় এর ফলে হিন্দু মুসলমানদের রাজনৈতিক পথ আলাদা হবার উপক্রম হয়। জিন্নাহ মুসলিম লীগের পক্ষে মুসলমানদের দাবিগুলো বিন্যস্ত করেছেন চৌদ্দ দফা নামে। উক্ত দফাগুলোতে মুসলমান সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন দাবি সন্নিবেশিত হয়। কিন্তু এর একটা বড় ফল ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিন্ন পথে মোড় নেয়া। শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক চেতনার ফলে ভারত বিভক্তি ঘটে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *