লর্ড ডালহৌসির শাসন কি
ডালহৌসীর সময়ের শাসন ব্যবস্থা: লর্ড ডালহৌসী ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি শুধু সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন না, বরং একজন শ্রেষ্ঠ শাসকও ছিলেন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রের প্রতি বিভাগেই তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। প্রথমেই তিনি বড়লাটের কাজের চাপ কমানোর জন্য বাংলায় একজন ছোটলাট নিয়োগ করেন। বড়লাটের নির্দেশে ছোটলাট বাংলা শাসন করতেন। তাঁর সময়ে পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়। ডালহৌসী রাজ্যটির প্রশাসন ও উন্নয়নের ব্যবস্থা নিজেই করেন। তিনি পাঞ্জাবের শাসনভার একজন কমিশনারের উপর ন্যস্ত করেন। ডালহৌসী সামরিক বিভাগেও সংস্কার প্রবর্তন করেন। তিনি বেঙ্গল আর্টিলারী সেনার সদর দপ্তর কলকাতা হতে মীরাটে স্থানান্তর করে উত্তরভারতে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করেন। তিনি গুর্খাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের নীতি নেন। তিনি বন্দীদেরকে ইন্সপেক্টরের অধীনে রাখার একটি নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। লর্ড ডালহৌসী জনহিতকর কাজের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি পূর্তবিভাগ (P.W.D) গঠন করেন এবং এ দপ্তরকে সামরিক বোর্ড থেকে পৃথক করেন। এ দপ্তরের হাতে রাস্তাঘাট, পুল তৈরি ও জলসেচ ব্যবস্থা পরিচালনা দায়িত্ব দেয়া হয়। এ দপ্তরের উদ্যোগ গঙ্গাখাল খনন করা হয়। পাঞ্জাবেও বারি দোয়াব খালের কাজ আরম্ভ হয়। তারই সময়ে কলকাতা হতে পেশোয়ার পর্যন্ত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করা হয়। উপমহাদেশে রেলপথ নির্মাণের জন্য ডালহৌসীকে রেলপথের জনক বলা হয়। তার সময়ে বোম্বাই হতে টানা পর্যন্ত রেললাইন চালু হয় (১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ)। রেলের জন্য জমি বেল কোম্পানিকে বিনামূল্যে দেয়া হয়। ডালহৌসী এদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন করেন। কলকাতা থেকে আগ্রা পর্যন্ত প্রথম টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয় (১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ)। পরে এ লাইন লাহোর ও পেশোয়ার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। সব মিলে ৪ হাজার মাইল দীর্ঘ টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ ডাক বিভাগীয় আইন দ্বারা ডালহৌসী ডাক ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি করেন। তিনি পেনী পোস্ট কার্ড প্রথা চালু করেন। এদেশে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ডালহৌসী শিক্ষা সংস্কারে হাত দেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য বেথুন -এর প্রচেষ্টায় বেথুন কলেজ স্থাপিত হয়। তিনি প্রাথমিক শিক্ষার কথাও ভাবেন। সমাজ সংস্কারক হিসাবে ডালহৌসী অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। তিনি বিধবা বিবাহ আইন পাস করে হিন্দু বিয়েকে আইনসঙ্গত করেন। ডালহৌসী এমন একটি আইন পাস করেন যাতে এদেশীয়গণ ধর্মান্তরিত হলেও তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করতে পারে। বৈদেশিক নীতির দিক থেকে ডালহৌসী ছিলেন অত্যন্ত সফল শাসক। যদিও তিনি ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী তবুও উপমহাদেশে তিনিই এর স্থায়িত্ব ও দান করেন। ইংরেজ ক্ষমতার স্থায়িত্বের জন্য তিনি তিনটি ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন- প্রত্যক্ষ যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয়, স্বত্ববিলোপ নীতির দ্বারা রাজ্য জয়, কুশাসন ও অরাজকতার অজুহাতে রাজ্য দখল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions