আল আজিজ

আল আজিজ

৯৭৫ সালে আল-মুইযের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আল-ইমাম নিজার আবু মনসুর ‘আল-আযিয বিল্লাহ' (৯৭৫-৯৬) নাম নিয়ে ২০ বছর বয়সে ক্ষমতাসীন হন। সাধারণভাবে তিনি ‘আল-আযিয নামেই পরিচিত। 


সিরিয়া বিজয় : 

আল-মুইয সিরিয়া বিজয় কাজটি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। আল-আযিয ক্ষমতা গ্রহণ করে সিরিয়া বিজয়ের পরিকল্পনা করেন। হাফতার্কিন ও তাঁর তুর্কী বাহিনী ইতোমধ্যে দামেস্ক থেকে ফাতিমি শাসককে উৎখাত করে এবং কারামাতিয়রা তার সাথে যোগ দেয়। রামলা, দামেস্ক ও আসকালানে হাকিন ও কারামাতিয় নেতা হাসান বিন আহমদের সাথে ফাতিমি সেনাপতি জওহরের মোকাবিলা হয়। রামলায় যুদ্ধে হাসান বিন আহমদের মৃত্যু হয়। অনেক সংঘর্ষের পর হাক্তাকিনও পরাজিত ও ধৃত হন এবং আল-আযিযের নিকট তাঁকে হাযির করা হয়। এর ফলে সিরিয়া ফাতিমি শাসনাধীনে আসে। 


তুর্কী দেহরক্ষী বাহিনী গঠন : 

জওহর সিরিয়া বিজয় করে হাকিনকে মিসরে খলিফার সামনে উপস্থিত করলে খলিফা তার সাথে খুবই ভাল ব্যবহার করেন। তাঁকে মূল্যবান পোশাক, উপহার ও সুন্দর বাসভবন প্রদান করা হয়। তাঁর সাথে আনীত বন্দী তুর্কিদের নিয়ে একটি তুর্কি দেহরক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনীর নেতৃত্ব হাকিনের উপর ন্যস্ত করা হয়। বাবার বাহিনীর সাথে ভারসাম্য রক্ষার জন্য সময় ও সুযোগ মত খলিফা এই বাহিনী ব্যবহার করতেন। 


ইয়াকুব বিন কিল্লিসকে কারারুদ্ধ ও সম্মান প্রদর্শন : 

ইয়াকুব বিন কিল্লিস ছিলেন খলিফা আল-আযিযের উযির। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রশাসন চালালেও হাতাকিনকে বিষপ্রয়োগে হত্যায় জড়িত থাকায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয় । অবশ্য ৪০ দিন পর তাঁকে মুক্তি দিয়ে উযির পদে পুনর্বহাল করা হয়। কারণ খলিফা তাঁর দীর্ঘদিনের সেবার কথা ভুলতে পারেননি। ইবনে কিল্লিসের মৃত্যুর পর তাঁর শবযাত্রায় খলিফা স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মৃতদেহ একটি সুরম্য সমাধি ভবনে রাখা হয়। তিন দিন পর্যন্ত তিনি দর্শনার্থী বা আপ্যায়ন টেবিলে কাউকে সাক্ষাৎ দেননি। ১৮ দিন সরকারি কাজ বন্ধ ছিল। এক মাসব্যাপি রাজকীয় খরচে দিনরাত তার সমাধিতে প্রশংসাগাথা আবৃত্তি ও কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। যিয়ারতকারীদের জন্য ক্রীতদাসীরা রুপার পেয়ালা ও চামচ নিয়ে তৈরী থাকত মদ ও মিষ্টান্ন নিয়ে। মৃত উযিরের সকল ক্রীতদাসকে মুক্তি দেয়া হয়। খলিফা তার সকল দেনা পরিশোধ করে দেন।


খ্রিস্টান ও ইহুদিদের প্রতি উদারতা : 

তাঁর একজন স্ত্রী ছিলেন খ্রিস্টান এবং তার স্ত্রীর দুই ভাই দরবারে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। সে কারণে মিসরের কিবৃতি খ্রিস্টানদের তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি খ্রিস্টানদের জরাজীর্ণ গির্জাগুলির সংস্কার করেন। প্রশাসনের উচ্চপদে সর্বদা ইহুদি-খ্রিস্টানরাই বহাল ছিল। খ্রিস্টান ঈসা বিন নেসতুরিয়াস দরবারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন এবং ইবনে কিল্লিসের মৃত্যর পর পরবর্তী দুবছর তিনি আল-আযিযের উরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ইহুদি ঈসা বিন মানিসমাও ছিলেন প্রবল ক্ষমতার অধিকারী।


ঈসমাইলীয় মতবাদ প্রচার : 

তাঁর কাজী মুহম্মদ বিন নুমানকে ঈসমাইলীয় মতবাদ প্রচারের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ঈসমাইলীয় মতবাদ প্রচারের জন্য বিভিন্ন যায়গায় দাঈ বা প্রচারকদের প্রেরণ করেন। ইয়ামেনে আবদুল্লাহ বিন বিশরকে এবং ভারতের মুলতানে জালাম বিন শাইবানকে ঈসমাইলীয় মতবাদ প্রচারের জন্য পাঠানো হয়। 


জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃষ্ঠপোষকতা : 

P. K. Hitti (গ্রন্থ: History of the Arabs) বলেন, “সকল ফাতিমি খলিফার মধ্যে আলআযিয সম্ভবত সবচেয়ে বিজ্ঞ ও এবং উদার ছিলেন।” ফাতিমিদের মধ্যে জ্ঞানের প্রথম এবং উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আল-আযিযের উযির ইয়াকুব বিন কিল্লিস। তিনি একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে প্রতি মাসে ১ হাজার দিনার খরচ করা হত। খলিফা আল-আযিয নিজে একজন কবি এবং বিদ্যেৎসাহী ছিলেন। তিনি আল-আযহার মসজিদকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজপ্রাসাদে একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়। যাতে ২ লক্ষ গ্রন্থ ছিল। সেখানে ছিল ব্যাখ্যাসহ কুরআনের বিভিন্ন গ্রন্থ। ইবনে মুকলা এবং অন্যান্য বিখ্যাত লিপিকাররা পাণ্ডুলিপি লিখতেন। আলআযিয এই লাইব্রেরির জন্য তাবারীর স্বাক্ষরিত তার ইতিহাস বইয়ের একটি কপি সংগ্রহ করেন। 


স্থাপত্য শিল্প : 

৯৯০ সালে আল-আযিয একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন এবং ১০১২ সালে আল-হাকিম এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন যা ‘আল-হাকিম মসজিদ' নামে পরিচিত। আল-হাকীমের এ মসজিদটি ধ্বংস হয়ে গেছে। সোনালী প্রাসাদ, মুক্তাভবন, কারাফা সমাধিক্ষেত্রে মায়ের নামে মসজিদ তার উল্লেখযোগ্য নির্মাণ। 


আল-আযিযের চরিত্র-কৃতিত্ব : 

Lane-Poole (History of Egypt in the Middle Ages) গ্রন্থে তার চরিত্রের কতগুলো দিক উল্লেখ করেছেন: দীর্ঘকায়, লাল চুল, নীল চোখ, সাহসী, দক্ষ শিকারী, নির্ভীক সেনাপতি, উদার, সমঝোতার মানসিকতাকামী ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শান্তিকামী। তিনি সোনার তৈরি পাগড়ি, স্বর্ণখচিত তলোয়ার, মূল্যবান চমৎকার পরিচ্ছদে অলংকৃত হতেন। তাঁর উমারারও শান-শওকতপূর্ণ বেশভূষা ছিল। মূল্যবান একখানা পারস্যের রেশমী পর্দার জন্য খরচ করা হত ১২ হাজার পাউন্ড সমমানের স্বর্ণমুদ্রা। তাঁর দরবারে চাকরানি ব্যতীত ৮০০ মহিলা ছিল। তিনি জুমুআর দিনে রাষ্ট্রীয় শোভাযাত্রার প্রচলন করেন। তিনি জনগণের মাঝে সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে জামাআত পরিচালনা করতেন।


উত্তরাধিকারী মনোনয়ন : 

আল-আযিয ২১ বছর শাসন করে ৪১ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে মারা যান। মৃতযুর পূর্বে তিনি তাঁর পুত্র আল-হাকিমকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। কোষাধ্যক্ষ বারজোয়ানকে তিনি তাঁর ১১ বছর বয়সী পুত্র আল-হাকিমের অভিভাবক এবং কাজী মুহম্মদ নুমান ও সেনাপতি হাসান বিন আম্মারকে উপদেষ্টা মনোনীত করে যান।


পরিশেষে বলা যায়, ৯৭৫ সালে আল-মুইযের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আল-আযিয ২০ বছর বয়সে ক্ষমতাসীন হন। তিনি হাকিন ও কারামতিয় নেতা হাসান বিন আহমেদকে পরাজিত করে সিরিয়া জয় করেন। পরে হাতাকিনের সাথে আনীত বন্দী। | তুর্কিদের নিয়ে একটি তুর্কি দেহরক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়। তিনি খ্রিস্টান-ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ উদারতা প্রদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে ঈসমাইলীয় মতবাদ প্রচার করেন। আল-আযিয একজন বিজ্ঞ শাসক ছিলেন। তিনি আল-আযহার মসজিদকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর রাজপ্রাসাদে একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়। যেখানে ২ লক্ষ গ্রন্থ ছিল। সোনালী প্রাসাদ ও মুক্তাভবন তার উল্লেখযোগ্য নির্মাণ-কর্ম। তাঁর উযির ইয়াকুব বিন কিল্লিসও। জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *