Home » » আল মুইজ / আল মুইজ কে ছিলেন

আল মুইজ / আল মুইজ কে ছিলেন

আল মুইজ / আল মুইজ কে ছিলেন

৯৫৩ সালে আল-মনসুরের মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র আবু তামিম মা'আদ আল-মুইয লি-দীনিল্লাহ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহন করেন। তাঁর ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে ফাতিমিরা এক নব যুগে পদার্পণ করে।

আল মুইজ  এর রাজত্ব ও শাসনামল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:

জওহর আল-সিকিল্লির ভূমিকা : 

আল-মুইযের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার পেছনে সেনাপতি জওহরের ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর পূর্ণনাম জওহর আল-সিকিল্লি বা জওহর আল-রুমী বা আবু হাসান জওহার বিন আবদুল্লাহ। তাঁর জন্ম বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের সিসিলিতে। তিনি একজন গ্রিক লিপিকার ছিলেন। সিসিলি থেকে তাঁকে ক্রীতদাস হিসেবে আলমনসুরের সময় কায়রোওয়ানে নিয়ে আসা হয়। পরে নিজ যোগ্যতাবলে সচিব ও সেনাপতির পদে সমাসীন হন। 


আল-মাগরিবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা : 

শাসন ক্ষমতা লাভ করার পর তিনি প্রথমে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা বা আল-মাগরিবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেন। এ লক্ষ্যে তিনি সেনা ও নৌ-বাহিনীর পুনর্গঠন সম্পন্ন করেন। সেনাপতি জওহর সমগ্র উত্তর আফ্রিকায় ফাতিমি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ৯৫৮ সালে ফাতিমি সেনাবাহিনী পশ্চিমে আটলান্টিক পর্যন্ত অগ্রসর হয় এবং সেখান থেকে জওহর উপহার হিসেবে আল-মুইযকে পাত্রের মধ্যে জীবন্ত মাছ পাঠান। 


স্পেনের সাথে সংঘাত : 

আল-মুইয স্পেনের উমাইয়া মিত্রদের উত্তর আফ্রিকা হতে বিতাড়িত করেন। জওহর উমাইয়াদের নিকট থেকে মৌরিতানিয়া পুনরুদ্ধার করেন। ৯৫৫ সালে আল-মুইযের একটি বাণিজ্য জাহাজ উমাইয়া খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের (৯১২-৬১) একটি বাণিজ্য জাহাজ দ্বারা আক্রান্ত হয়। জবাবে আল-মুইয সিসিলির শাসনকর্তা হাসান বিন আলীর মাধ্যমে স্পেনের উপকূল আক্রমণ করে অনেক স্পেনীয় জাহাজ দখল করেন। প্রত্যুত্তরে খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানও যথাক্রমে গালিব ও আহম্মদ বিন ইয়ালার নেতৃত্বে আফ্রিকার উপকূলে দুবার অভিযান চালান। উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় আল-হাকামের সময় (৯৬১-৭৬) উমাইয়া ও ফাতিমিদের মধ্যে উত্তর আফ্রিকার আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ হয়। ৯৭৩ সালে ফাতিমি রাজধানী কায়রোতে স্থানান্তরিত হলে এ এলাকায় তাদের আধিপত্য হ্রাস পেতে থাকে।


ক্রীটে বিপর্যয় : 

তাঁর সময়ের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হল ক্রীট হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। আব্বাসীয় ও ফাতিমিদের অধীনে ক্রীট সভ্যতা, শিল্প ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হয়। ৯৬১-৬২ সালে বাইজানটাইনগণ এটা পুনরাধিকার করে মুসলিমদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালায়। পুরুষদের শরীরে আলকাতরা মেখে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়। মহিলা ও শিশুদের উপরেও ভীষণ অত্যাচার করা হয়।


সিসিলি বিজয় : 

ক্রীট হাতছাড়া হয়ে গেলেও সিসিলি বিজয়ের মধ্য দিয়ে এর আংশিক ক্ষতিপূরণ হয় । সিসিলির কয়েকটি সুরক্ষিত দুর্গ দিয়ে বাইজানটাইনরা আরবদের হয়রানী করত। রাজপ্রতিনিধি আহম্মদ বিন হাসান বাইজানটাইন নিয়ন্ত্রিত শহরগুলো দখল করেন। ৯৬৬ সালে সিসিলি পুরোপুরিভাবে ফাতিমি শাসনাধীনে আসে। মুসলিম শাসনামলে সিসিলি খুবই উন্নত ও সমৃদ্ধ ছিল। সিসিলির পালেরলো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাগদাদ ও কর্ডোভার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমকক্ষ ছিল।


মিসর বিজয় : 

ফাতিমি বংশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মিসর বিজয়ের লালিত স্বপ্ন আল-মুইয বাস্তবে পরিণত করেন। এর আগে উবায়দুল্লাহ আল-মাহদীর সময় দুবার ও আল-কায়িমের সময় একবার মিসরে অভিযান প্রেরণ করা হলেও নানা কারণে তা ব্যর্থ হয়। আল-মুইযের সময় মিসরের পারিপার্শ্বিক আনুকূল্য তাঁর মিসর বিজয়ে সহায়ক হয়েছিল। এ সময় মিসরে আব্বাসীয় অনুগত ইশিদীয়দের শাসন চলছিল। তাদের অধীনে এ সময়ে মিসরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, প্লেগ রোগের মহামারী, ব্যাপক মানুষের মৃত্যু, জনসংখ্যা ঘাটতি, কৃষি ও কর ব্যবস্থার অধঃপতন ইত্যাদি নানা কারণে এক চরম বিশৃংখলার সৃষ্টি হয় যার কারণে আল-মুইযের মিসর বিজয় সহজতর হয়। আল-মুইয মিসর অভিযানের দায়িত্ব দেন সেনাপতি জওহরের উপর। জওহর আলেকজান্দ্রিয়া দখল করে ফুস্তাতের দিকে অগ্রসর হন এবং নদী পার হয়ে ফুস্তাত দখল করেন। ফুস্তাত দখল করার পর জওহর নাগরিক, কর্মকর্তা ও সভাসদদের অভিবাদন গ্রহণপূর্বক বিজয়ীবেশে শহরে প্রবেশ করেন। ৯৬৯ সালে মিসর ফাতিমিদের অধীনে আসে। 


কায়রো নগরী প্রতিষ্ঠা : 

আল-মুইযই হলেন আধুনিক কায়রো নগরীর নির্মাতা। মিসর বিজয়ের পর জওহর ফুস্তাতের নিকটে কায়রো নগরীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। আল-মুইয পূর্ব থেকেই এই নতুন শহরের নকশা ঠিক করে দেন। ১২০০ গজের একটি বর্গক্ষেত্র চিহ্নিত করে চারদিকে খুঁটির সঙ্গে দড়ি বেঁধে ঘন্টা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল শুভ সময়ের জন্য অপেক্ষা করা এবং ঘন্টা বাজিয়ে একসাথে কাজ শুরু করা। মজুররা কোদাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে সংকেত প্রাপ্তির জন্য। জ্যোতিষরা শুভলক্ষণের সংকেত প্রাপ্তির পূর্বেই একটি কাক রশিতে বসলে সকল ঘন্টা একসাথে বেজে ওঠে ও শ্রমিকরা কোদাল দিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। এ সময়টি ছিল অত্যন্ত অশুভ। কারণ এ সময় মঙ্গল গ্রহ উদিত হচ্ছিল। মঙ্গল গ্রহকে আরবীতে বলা হয় “আল-কাহির'। এ কারণে এ নগরীর নামকরণ করা হয় ‘আল-কাহিরা আল-মাহরুসা' (মঙ্গলের প্রহরাধীন নগরী) যার পরিবর্তিত নাম কায়রো। ৯৭২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এটি বর্তমানে আফ্রিকার সবচেয়ে বৃহৎ ও জনবহুল নগরী। এটাকে বাজারের শহরও বলা হয় ।


দুর্ভিক্ষের লোকাবিলা :

মিসর বিজয়ের পূর্ব থেকেই সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। জওহর এ অবস্থা আল-মুইযকে জানালে তিনি কতগুলো জাহাজ ভর্তি করে সেখানে শস্য পাঠান এবং সেগুলো ত্রাণ হিসেবে জনগণের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়। এছাড়া পণ্য গুদামজাত ও চড়ামূল্যে বিক্রি যাতে না হয় সেজন্য মুহতাসিবের মাধ্যমে বাযার ব্যবস্থা তদারক করা হয়। তার এসব উদ্যোগের ফলে দুর্ভিক্ষ দূর হয়। 


নুবিয়ার রাজার সাথে মিত্ৰতা : 

জওহর ৯৭২ সালে নুবিয়ার রাজা জর্জ-এর নিকট ইসলাম-ধর্ম গ্রহণ ও কর প্রদানের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রতিনিধি দল পাঠান। এই প্রতিনিধি দল সাদরে গৃহীত হয় এবং রাজা কর দিতে স্বীকৃত হন। তবে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। এই মিত্রতার ফলে নুবিয়াসহ লোহিত সাগরে ফাতিমি বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে। 


কারামাতিয়দের দমন : 

জওহর জাফর বিন ফিল্লাহর মাধ্যমে দামেস্ক জয় করলে কারামাতিয়দের সাথে সংঘর্ষ বাধে। কারামাতিয় নেতা হাসান বিন আহম্মদ হামানিয়দের সাহায্যে দামেস্ক উদ্ধার করেন এবং পরে মিসর আক্রমণ করেন। জওহর আইনুস শামস্ (হেলিওপোলিস) নামক স্থানে তাদের পরাজিত করেন। 


কায়রোতে রাজধানী স্থাপন : 

কারামাতিয়দের পুনরায় মিসর আক্রমণের প্রস্তুতি ও জওহরের আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে আলমুইয ৯৭৩ সালে মিসরে আগমন করেন। এরপর তিনি কায়রো নগরীকে ফাতিমিদের নতুন রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলেন। 


হাকিনের সাথে সংঘর্ষ : 

হাকিন নামক একজন পলাতক বুয়াইয়া সেনাপতি দামেস্ক দখল করে কারামতিয়দের সাহায্যে সিরিয়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি দখল করতে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বেই আল-মুইযের মৃত্যু হয়। 


আল-মুইযের অর্থনৈতিক সংস্কার : 

আল-মুইয মিসরে একটি শক্তিশালী ফাতিমি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। ইয়াকুব বিন কিল্লিসের পরামর্শে তিনি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংস্কার সাধন করেন। তাঁর পরামর্শে নতুন কর ব্যবস্থা চালু হয়। নতুন নতুন পণ্য করের আওতাধীনে আনা হয়। এর ফলে মিসরের রাজস্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় যা পরবর্তীতে মিসরের ফাতিমি সাম্রাজ্য সুরক্ষা ও সম্প্রসারণে সহায়ক হয়েছিল।


আল-মুইয নিজেকে সাহসী, যোগ্য ও দক্ষ শাসক হিসেবে প্রমাণ করেন। তবে পূর্বসূরীরা তাঁর মত মার্জিত, রুচিসম্পন্ন ও উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না। তিনি আরবি, বার্বার, সুদানী, গ্রিক ও স্লাভ ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁর শাসনকাল ফাতিমি। ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে ফাতিমিদের শ্রেষ্ঠ শাসকে পরিণত হন। তিনি এই বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *