প্রতিবন্ধীদের অধিকার
অর্থগতভাবে এমন ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী বলে, যে জন্মগতভাবে বা রোগের কারণে কিংবা অপচিকিৎসার শিকার হয়ে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। যে বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতার জন্য ব্যক্তি স্থায়ীভাবে কর্মে অক্ষম ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অপরাগ। তাই দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, দৃষ্টি, শ্রবণ, বাক ও যোগাযোগে বাধা বা সীমাবদ্ধতার কারণে যখন ব্যক্তির মেধার বিকাশ, কাম্য সম্ভাবনা ও যোগ্যতা বাধাগ্রস্ত হয় এবং ব্যক্তির নিজের, পরিবারের ও সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয় তখন ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে । ইসলামি শরিয়া প্রতিবন্ধীদের জন্য সাধারণ মানুষের চেয়ে অধিক মানবিক ও মৌলিক অধিকার প্রদান করা হয়েছে । যেমন,
মানবীয় মর্যাদা লাভের অধিকার : আল্লাহ তা'আলা একজন সাধারণ সুস্থ মানুষকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, যে উৎস থেকে সৃষ্টি করেছেন একজন প্রতিবন্ধীকে সেই একই উৎস থেকে অভিন্ন প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ হিসেবে একজন প্রতিবন্ধী সাধারণ সুস্থ মানুষের মতোই অধিকার ও মর্যাদা লাভ করবেন।
অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের অধিকার : ইসলামের অসংখ্য কল্যাণময় ব্যয়ের খাতের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যয় করা একটি অন্যতম শীর্ষ খাত। এটি তাদের প্রতি করুণা নয়। বরং আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভের অধিকার : প্রতিবন্ধিতার ধরণ ও কারণ অনুসারে তাদেরকে যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা আবশ্যক। এ জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ইসলাম সবার জন্য জ্ঞানার্জন ফরযের যে বিধান করেছেন প্রতিবন্ধীরা তা থেকে বঞ্চিত হবে না। তারা যেহেতু নিজ উদ্যোগে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতে সক্ষম নয়, এ কারণে পরিবার ও সমাজকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে।
পরিবার গঠনের অধিকার : প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি স্বামী বা স্ত্রীর মানবিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হলে তাকে পরিবার গঠনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। বরং স্বামী বা স্ত্রীর অধিকার পূরণ করে যদি প্রতিবন্ধীদের পরিবার গঠনের সুযোগ করে দেয়া যায় তাহলে তারা অনেকাংশে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। নবিযুগে অন্ধ-সাহাবি উম্মে মাকতুমের বিবাহ করা থেকে বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায় ।
চিকিৎসা সেবা লাভের অধিকার : রাসূলুল্লাহ (স.) একজন মুমিনের জন্য অন্য মুমিনের যে ৬টি বিশেষ কর্তব্যের কথা ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো অসুস্থ অবস্থায় সেবা করা। হাদিসে কুদসিতে এমন ঘোষণাও রয়েছে, হাশরের দিন আল্লাহ তা'আলা মানুষকে বলবেন, তিনি রোগে অসুস্থ ছিলেন মানুষ তার সেবা করেনি। মানুষ বলবে কীভাবে আল্লাহর সেবা করা সম্ভব ছিল? আল্লাহ বলবেন, অসুস্থ লোককে সেবা করলেই আল্লাহর সেবা করা হতো। প্রতিবন্ধীরা এক ধরনের স্থায়ী অসুস্থতায় ভোগেন। তাই তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
পরিবার ও সমাজে বিশেষ তত্ত্বাবধান লাভের অধিকার : প্রতিবন্ধীদের উপহাস করা যাবে না। বোঝা মনে করা যাবে না । বরং পরিবারে ও সমাজে তাদেরকে বিশেষ যত্ন ও তত্ত্বাবধান করতে হবে, যাতে তারা নিজেদের প্রতিবন্ধিতার জন্য সব সময় দুঃশ্চিন্তা ও মনোকষ্টে না ভোগেন। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হারাম করেছেন ।
মানসিক ও দৈহিক ঝুঁকিতে বিশেষ নিরাপত্তা লাভের অধিকার : প্রতিবন্ধীরা সব সময় মানসিক ও দৈহিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের এ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে প্রয়োজন বিশেষ যত্ন ও নিরাপত্তা। ইসলাম এ জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যাকাত, সাদাকাতুল ফিতর ও ঐচ্ছিক দানসমূহ ব্যবহারের বিশেষ সুযোগ রেখেছে।
মানবিক ও মৌলিক অধিকার লাভের অধিকার : ইসলামে মানুষের জন্য যে মানবিক অধিকার ঘোষণা করা হয়েছে, যেমন সুবিচার, সদাচার, সহযোগিতা, জুলুমের প্রতিবাদ, অনাচার থেকে দূরে থাকা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি অধিকার এবং খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মৌলিক অধিকার প্রতিবন্ধী পূর্ণমাত্রায় লাভ করবে। প্রতিবন্ধী বলে তাকে উত্তরাধিকার, মালিকানা ইত্যাদি বিষয় থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তবে সে যদি মানসিক বা দৈহিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনায় অক্ষম হয়, তাহলে তার পরিবারের সদস্যরা, সদস্য কেউ না থাকলে নিকটাত্মীয়রা, না থাকলে প্রতিবেশিরা, না থাকলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সমাজপতি বা প্রশাসক তার স্বার্থ সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
ইসলাম ইহসানের যে নীতি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ পর্যায়ে প্রবর্তন করেছে প্রতিবন্ধীরাই এর সবচেয়ে বড় হকদার। তাই মানবিক আবেগ ও ধর্মীয় দায়িত্বানুভূতি নিয়ে প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায় করা সবার অবশ্য কর্তব্য।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions