শিশুর অধিকার গুলো কি কি
শিশুরা মানব জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুই আগামী দিন দেশ, জাতি, সমাজ ও পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। মানুষের মধ্যে যে অমিত সম্ভাবনা থাকার কথা বলা হয়, তা মূলত শিশুর যথাযথ পরিচর্যা ও যত্নের ওপরই নির্ভর করে। শিশুর বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব না হলে মানবসভ্যতা বিকশিত হতে পারে না। ইসলাম তাই শিশুর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শিশু একান্তভাবে যাদের ওপর নির্ভর করে, সেই মাতা-পিতার প্রতি বিশেষ কিছু দায়িত্ব প্রদান করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সমাজকেও শিশুর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে।
বৈধ সম্পর্কে জন্মগ্রহণের অধিকার
ইসলামে শিশুর প্রথম অধিকার হলো, তার জন্ম হতে হবে বৈধ বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে তার জন্ম কাম্য নয়।
পরিচর্যা ও পালিত হওয়ার অধিকার
শিশুর অধিকার রয়েছে মাতা-পিতার হৃদয়নিংড়ানো ভালোবাসা, যত্ন, আদর ও মায়া-মমতাসহ পরিচর্যা পাওয়ার এবং লালিত-পালিত হওয়ার।
নিরাপত্তা লাভের অধিকার
মানবশিশু সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে থাকে। তাই মাতা-পিতা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কোনো কারণেই নিজেরা যেমন সন্তানের কোনো রকম ক্ষতিসাধন করবেন না, তেমনি অন্যকেও ক্ষতি করতে দেবেন না ।
ধর্মীয় শিক্ষা লাভের অধিকার
ধর্মীয় বিশ্বাস আকিদা আমল সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার এবং শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করায় অভ্যস্ত হওয়ার অধিকার রয়েছে শিশুর। হযরত রাসূল (স.) বলেছেন, “প্রত্যেক শিশুই ফিতরাত বা ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর মাতা পিতাই তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান অথবা অগ্নিপূজকে পরিণত করে।” (সুনানে তিরমিযি)
বৈষয়িক ও ব্যবহারিক শিক্ষা লাভের অধিকার
শিশুর অধিকার রয়েছে বৈষয়িক ও ব্যবহারিক বিষয়ের শিক্ষা লাভ করার। সে জন্য মাতা-পিতা হাতে-কলমে জীবন যাপনের জন্য জরুরি এ বিষয়গুলো শিখিয়ে দেবেন।
সৎ উপদেশ পাওয়ার অধিকার
ভালো উপদেশ মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ কারণে শিশুর অধিকার রয়েছে মাতা-পিতার সৎ উপদেশ লাভ করার।
মাতৃদুগ্ধ পানের অধিকার
পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের পর শিশুর প্রথম এবং প্রধান অধিকার হলো মাতৃদুগ্ধ পানের অধিকার। পৃথিবীতে শিশুর আসার পূর্বেই আল্লাহ তা'আলা তার জন্য মায়ের স্তনে প্রয়োজনীয় জীবিকার সংস্থান করেন। এ থেকে কোনো কারণেই শিশুকে বঞ্চিত করা যাবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَالْوَالِدتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ
“মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পুরো দু'টি বছর দুধ পান করাবেন।” (সূরা বাকারা ২: ২৩৩)
পুত্র ও কন্যা শিশুর মধ্যে পার্থক্য না করা
ইসলামে পুত্র ও কন্যা শিশুর মধ্যে পার্থক্য করে না। বরং কন্যা শিশুকে পুত্র শিশুর চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে।
দুঃস্থ-ইয়াতিম শিশুর বিশেষ অধিকার
যে শিশুর মাতা-পিতা নেই, আর্থিক বা সামাজিকভাবে দুঃস্থ, নানাবিধ অভাব-অভিযোগ ও অসুবিধার মধ্যে জীবন অতিবাহিত হয়, ইসলাম এমন শিশুর জন্যও বিশেষ অধিকার ঘোষণা করেছে। তাদের সার্বিক সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজের অবশিষ্ট সকলের অবশ্য কর্তব্য।
এ ছাড়াও শিশুদের আরো অনেক অধিকার রয়েছে। যেমন-
• জন্মের পর সাথে সাথে কানে আযান শুনানো
• উত্তম নাম রাখা,
• আকিকাহ করা ও মাতা মুণ্ডানো
• খাতনা করানো
• ইবাদতের বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া
• শিশুদের শ্রম নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions