দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুই দশক না পেরোতেই ধরা পড়ে ভার্সাই চুক্তির সারশূন্যতা আর লীগ অব নেশনসের অকর্মণ্য অবস্থান । ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নতুন করে কেঁপে ওঠে আরেক দফা আক্রমণ আর হত্যাযজ্ঞের মর্মন্তুদ ঘটনায়। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ৬ বছর ১ দিন। তারপর আবার শান্ত হয়ে আসে ইউরোপের বিভিন্ন রণাঙ্গন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা কিংবা আটলান্টিক অঞ্চলের পাশাপাশি আফ্রিকার নানা স্থান । সেই অক্ষশক্তি জার্মানের পক্ষে এবার যোগ দিয়েছে ভিন্ন মিত্র ইতালি, জাপান, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া আর বুলগেরিয়া। আর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মিত্রবাহিনীতে এবারের বড় আকর্ষণ রাশিয়া। রুশপন্থী ইতিহাসবিদদের ক্রমাগত পুঁজিবাদ ভর্ৎসনা আর অতিরঞ্জিত বিবরণ থেকে বোঝা কঠিন হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসলে অক্ষশক্তি-মিত্রশক্তির মধ্যে হয়েছে, নাকি রুশ বনাম পুরো বিশ্ব হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও অনুষ্ঠিত হয় অক্ষশক্তি আর মিত্রশক্তির মধ্যে। আর এবারে মিত্রশক্তির পুরোভাগে ছিল রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিল। ফলাফলটা শেষ পর্যন্ত এবারও বিপক্ষে গেছে অক্ষশক্তির
মিত্রশক্তির ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাশিয়ার নেতৃত্বে জোসেফ স্ট্যালিন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান, যুক্তরাজ্যের উইনস্টন চার্চিল, চীনের চিয়াং কাইশেক, ফ্রি ফ্রান্স আন্দোলনের নেতা দ্য গল ফরাসিদের নেতৃত্বে রয়েছেন। থার্ড রাইখ সরকারের প্রধান, নাৎসি বাহিনীর পুরোধা, এসএস এবং এসএ ফোর্সের উদ্ভাবক, জার্মানির বহুল আলোচিত- সমালোচিত নেতা অ্যাডলফ হিটলার ছিলেন অক্ষশক্তি তরফে নেতৃত্বের পুরোভাগে। ইতালির ফ্যাসিস্ট পার্টি নেতা বেনিতো মুসোলিনি এবং জাপানের সম্রাট হিরোহিতো ও প্রধানমন্ত্রী তোজো ছিলেন স্ব স্ব বাহিনীর নেতৃত্বে। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্যে দিয়ে বলতে গেলে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে বিশ্বজনীন রূপ লাভ করে যখন জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে বসে। এরপর হিরোশিমা নাগাসাকিতে বর্বর আক্রোশে যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক বোমা নিক্ষেপ ১৯৪৫ সালে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। এরই মাঝে জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে একটি গোপন বাংকারে আত্মহননের মাধ্যমে জীবনের সব গ্লানি মুছতে চেষ্টা করেন অ্যাডলফ হিটলার। ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ক্যালেন্ডারের পাতায় দুই দশকের বেশি সময় পার হয়নি; ঠিক ১৯৩৯ সালেই শুরু হয়ে যায় আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ। আর ফলাফল হিসেবে বিভিন্ন রণাঙ্গনে মিত্রবাহিনীর প্রায় ১৬ লক্ষ সৈন্য নিহত হয়। এর বাইরে ৪৫ লাখের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions