বিচার বিভাগ
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। নাগরিকের অধিকার রক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশের বিচার বিভাগ শেষ আশ্রয় হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ মূলত: দুই ভাগে বিভক্ত উচ্চতর বিচার বিভাগ (সুপ্রিম কোর্ট) ও অধস্তন বিচার বিভাগ (নিম্ন আদালতসমূহ)। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতি ও প্রত্যেক বিভাগের বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এসকল বিচারকবৃন্দ বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৪ নং ধারা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদেরকে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করে থাকেন। বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ট বিভাগে বিচার বিভাগের কাঠামো, মর্যাদা এবং কার্যাবলি সম্পর্কিত বিধান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের কাঠামো :
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার সালিশি আদালত। প্রতিটি জেলায় রয়েছে জেলা জজের আদালত ও সেশন জজের আদালত। এছাড়াও রয়েছে সহকারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। জেলা জজ আদালত আবার দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতের সমন্বয়ে গঠিত।
সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে । প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত নির্ধারিত সংখ্যক বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত।
বাংলাদেশে আইনের বিধান অনুযায়ী অধস্তন আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্বীকৃত। রাষ্ট্রপতি এসব অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগের পদে বা বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব প্রদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। দেশের সকল অধস্তন আদালত সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন ।
বিচার বিভাগের কাজ :
বিচার বিভাগ সংবিধান রক্ষা, আইন প্রণয়নের সময় সাংবিধানিক মূলনীতির কোন ব্যত্যয় হয়েছে কিনা তার পর্যালোচনা করে থাকে। এছাড়া রাষ্ট্রের মধ্যে কোথাও আইন লংঘিত হলে তার বিচারিক কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। হাইকোর্ট বিভাগ বিচারকার্য পর্যালোচনার ক্ষমতার অধিকারী। যেকোন ব্যক্তির মামলার বা আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ প্রজাতন্ত্রের যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর সংবিধানে প্রদত্ত যেকোন মৌলিক অধিকার কার্যকর করার নির্দেশনা বা আদেশ জারি করতে পারে। হাইকোর্ট জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষা ও বাস্তবায়নের একটি সোপান হিসেবে কাজ করে। তবে এই অধিকারসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট যদি দেখতে পায় যে, কোনও আইন মৌলিক অধিকার বা সংবিধানের অন্য যে কোন অংশের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাহলে সে আইনের ততটুকু অকার্যকর ঘোষণা করতে পারে। কোম্পানি, এ্যাডমিরালটি, বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রেও হাইকোর্টের মৌলিক নির্দেশনা রয়েছে। নিম্ন আদালতে বিচারাধীন কোনও মামলার ক্ষেত্রে যদি সংবিধানের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত আইনের প্রশ্ন বা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় দেখা দেয়, তাহলে হাইকোর্ট সে মামলা অধস্তন বা নিম্ন আদালত থেকে প্রত্যাহার করে তার নিষ্পত্তি করতে পারে ।
হাইকোর্ট বিভাগের আপিল বিবেচনা ও পর্যালোচনার এখতিয়ার রয়েছে। হাইকোর্ট প্রদত্ত কোনও রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের ব্যাখ্যার ব্যাপারে আইনের প্রশ্ন জড়িত থাকে, তাহলে ওই সব রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা যাবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions