প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী
প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার প্রধান। সংবিধানের ৫৫ ও ৫৬ নং ধারা মতে, প্রধানমন্ত্রী পদায়িত হবেন মন্ত্রিপরিষদের শীর্ষে। তিনি তাঁর মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গঠিত মন্ত্রিসভা তাদের কার্যাবলীর জন্য যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকবেন। সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রকৃত নির্বাহী। জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মনোনীত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগকালীন সময়ে সংসদের যে সদস্যের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের সমর্থন রয়েছে মর্মে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবে, উক্ত সদস্যকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান পরিষদ অর্থাৎ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন এবং এর মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের সকল প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন। জাতীয় সংসদের নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের প্রধান হিসেবে আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সর্বাধিক। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শাসন বিষয়ক, আইন বিষয়ক, নিয়োগ সংক্রান্ত, বাজেট সংক্রান্ত বিবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন। সংবিধানের ৫৬ ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের কমপক্ষে ৯০ শতাংশ সদস্য জাতীয় সংসদ সদস্যের মধ্য থেকে থেকে নিয়োগ প্রদান করবেন। এছাড়া বাইরে থেকে ১০ শতাংশ সদস্য তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ করতে পারবেন। তবে শর্ত হল, এ সকল ব্যক্তিদেরকে অবশ্যই জাতীয় সংসদ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘রুলস অব বিজনেস' অনুযায়ী ‘প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা' পদেও নিয়োগ দিতে পারেন ।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলীসমূহ:
সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত থাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শাসন ক্ষমতার মধ্যমণি। তাঁকে কেন্দ্র করেই প্রজাতন্ত্রের সকল শাসন ও প্রশাসন পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।
নির্বাহী বা শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা :
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শাসন সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও শাসনকার্য পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন । তিনি মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন ও তাঁদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করেন ।
আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা :
যেকোন আইন প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃত্বশীল ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাঁর মতামত অনুযায়ী সংসদে আইন উত্থাপিত ও পাশ হয় ।
অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা :
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রণয়ন ও তা সংসদে পেশ করেন। তাঁর পরামর্শের আলোকে দেশের রাষ্ট্রপতি প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহে অর্থ মঞ্জুরী প্রদান করেন।
সংসদ পরিচালনা সংক্রান্ত ক্ষমতা:
প্রধানমন্ত্রী সংসদের নেতা হওয়ার দরুণ মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর পরামর্শক্রমে সংসদের অধিবেশন আহবান ও ভেঙে দিতে পারেন। জাতীয় সংসদের পবিত্রতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তিনি স্পীকারকে সহযোগিতা করেন।
দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী :
প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের ও দলীয় সংসদীয় দলের নেতা। তিনি সংসদ ও সংসদের বাইরে দলের নীতি-নির্ধারণ ও দলীয় শৃঙ্খলা আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া বিরোধী দলের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনেও কার্যকরি ভূমিকা রাখেন।
এ সকল কাজের বাইরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবে, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ, রাষ্ট্রীয় কাজে সমন্বয়কারী, জরুরি অবস্থা মোকাবেলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions