রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী
রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান। রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত বিধানসমূহ বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ অংশের ৪৮-৫৪ অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। নিয়মমাফিক রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত এবং তিনি সংবিধান ও আইন বলে তাঁর উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় কার্যাদি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ ভাগের ১ম পরিচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা, ক্ষমতা ও কার্যাবলি নির্ধারিত আছে। বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত এবং এ দেশকে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ সকল কারণেই রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান নির্বাহী; কিন্তু অলঙ্কারিক প্রধান। রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব পালনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রবিরুদ্ধ কর্মকান্ডের জন্য সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের মুখোমুখি করতে পারে ।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৪) অনুসারে পঁয়ত্রিশ বছর বয়স্ক বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক নির্দিষ্ট আইনের আওতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন। তাঁকে অবশ্যই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এছাড়া এই সংবিধানের আওতায় তিনি কখনও এই পদ থেকে অপসারিত হননি এই শর্তটিও পূরণ করতে হবে। তবে উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে তিনি কখনই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে নানাবিধ ক্ষমতা প্রদান করেছে:
শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা
রাষ্ট্রের প্রধান হওয়ায় সরকারের সকল কার্যাদি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তিনি অন্যান্য মন্ত্ৰী, প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তিনি প্রধান বিচারপতি, এটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ দান করে থাকেন। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিভাগের সর্বাধিনায়ক।
সংসদ ও আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা
রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহবান করে। নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন ও প্রতি নতুন বছরের অধিবেশনের সূচনায় ভাষণ প্রদান করেন। তিনি সংসদে বাণী প্রদান, সংসদ অধিবেশন মূলতবি ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সংসদ ভেঙেও দিতে পারেন। কোন বিল সংসদে পাশ হলে তা সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। সংসদ ভেঙে দেয়া হলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে আইন তৈরি করতে পারেন যা সংসদে আইন হিসেবে গণ্য হয় ।
বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা :
বিচারিক ক্ষমতার অংশ হিসেবে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কোন আদালত, ট্রাইবুনাল বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত শাস্তি মার্জনা, স্থগিত, বিলম্বিত ও হ্রাস করতে পারেন।
অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা :
আর্থিক ক্ষমতার অংশ হিসেবে সরকারি ব্যয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোন বিল রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ব্যতিত সংসদে পেশ করা যাবে না।
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষমতা :
রাষ্ট্রপতি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্থল, জল ও আকাশ পথে আক্রমণের ক্ষেত্রে তিনি তা প্রতিরক্ষার জন্য এই সকল বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন ।
সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক:
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্মানসূচক পদক বা খেতাব প্রদান করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ব্যতিত দেশের কোন নাগরিক বিদেশী কোন খেতাব বা সম্মান গ্রহণ করতে পারেন না। এ সকল ক্ষমতার বাইরে তিনি রাষ্ট্রদূত প্রেরণ ও গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতির ওপর বর্তানো কাজের অংশ হিসেবে তিনি সকল জাতীয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের দায়িত্বপূর্ব শপথ বাক্য পাঠ করান।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions