Home » » শাসন বিভাগের গঠন

শাসন বিভাগের গঠন

শাসন বিভাগের গঠন

আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সরকারের যে তিনটি অঙ্গ সংগঠনের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়, তন্মধ্যে নির্বাহী বিভাগ অন্যতম শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। কেননা, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদ দুটি অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই নির্বাহী বিভাগের অন্তর্ভূক্ত। বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থভাগে নির্বাহী বিভাগ অর্থাৎ শাসন বিভাগের গঠন ও দায়-দায়িত্ব সম্পর্কিত সাংবিধানিক আইন লিপিবদ্ধ আছে।


শাসন বিভাগের কাঠামো

রাষ্ট্রপতি : শাসন বিভাগের কার্যক্রম মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামে সম্পন্ন হয়। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু থাকায় রাষ্ট্রপতি প্রকৃত অর্থে নামমাত্র শাসক। রাষ্ট্রের প্রকৃত প্রশাসনিক ক্ষমতা সরকার প্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত থাকে। তবে রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে রাষ্ট্রপতি সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের দ্বারা। এই সংসদই যে কোন বড় ধরনের ব্যর্থতার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যূত করতে পারে। রাষ্ট্রপতি মূলতঃ অলঙ্কারিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সংসদীয় প্রথা অনুযায়ী তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ :

সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী গ্রহণের ফলে বাংলাদেশে যে নির্বাহীর উদ্ভব ঘটে তা হল সংসদীয় নির্বাহী। এখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য নিশ্চিত করার জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা সংবিধানভূক্ত হয়। এই ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত ও অনুমোদিত না হলে কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে, সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাহী ক্ষমতা মূলত: প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ন্যস্ত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান থাকেন। মন্ত্রিপরিষদ তার সকল কর্মকান্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে । কেননা, প্রধানমন্ত্রী হলেন সংসদ নেতা।


অ্যাটর্নি জেনারেল :

অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাহী বিভাগের বা সরকারের পক্ষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কর্মকান্ডে প্রধান কুশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে ।


প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন :

দেশের সকল প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকে। মূলত: নির্বাহী আদেশ বলে আইনের বাস্তবায়ন করাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।


শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা

বাংলাদেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় আইন সভা বা জাতীয় সংসদের ভূমিকা ও কার্যাবলি বিস্তৃত হয়েছে। আর এ কারণে জাতীয় সংসদ রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আইন সভায় মূলত: জাতীয় সংসদের সদস্যরাই উপস্থিত থাকে এবং তাদের নিয়েই সরকার গঠিত হয়। শাসন বিভাগের আইন বাস্তবায়নকারী অংশ অর্থাৎ মন্ত্রী পরিষদের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসনের কাজ করে থাকে। এ কারণে তিনি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৫ (৩) নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দকে শাসন বিভাগের যাবতীয় কর্মকান্ডের জন্য জাতীয় সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে হয়। জবাবদিহিতার এই বিষয়টি বিদ্যমান থাকায় সরকারকে সদা জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে হয়। অনেকক্ষেত্রে, সরকারের ভুল-ত্রুটি শুধরে দিতেও জাতীয় সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা হল বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা তাঁদের ওপর অর্পিত কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করছেন কিনা সে ব্যাপারে সংসদ বা আইন সভায় অবহিত করা। মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ওপর অর্পিত কার্যক্রম যদি জনগণের প্রতিকূলে যায়, সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জাতীয় সংসদ করে থাকে। এছাড়া শাসন বিভাগকে সদা সতর্ক রাখার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে শাসন বিভাগকে জবাবদিহি করে থাকে। সংসদ কখনও প্রশ্ন উত্থাপন করে মন্ত্রীদের কার্যাবলির হিসাব নিয়ে থাকে। শাসন বিভাগ কর্তৃক আয় ও ব্যয়ের হিসাব গ্রহণ করে ও নির্দেশনা দিয়ে আইন বিভাগ শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এভাবে জাতীয় সংসদ জাতীয় তহবিলের রক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে কাজ করে।

কখনও বা সংসদ একাধারে মূলতবি বা নিন্দা প্রস্তাব এনে শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে থাকে। সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা করে শাসন বিভাগ তথা সরকারের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা ও সমালোচনা করে থাকে। এসব আলোচনা ও সমালোচনার দ্বারা শাসন বিভাগ পরবর্তী কার্যাবলি সম্পর্কে সতর্ক হয়ে থাকে। জাতীয় সংসদে গঠিত স্থায়ী কমিটিগুলো মন্ত্রণালয় বা শাসন বিভাগের ওপর অর্পিত নির্ধারিত কার্যসমূহের ব্যাপারে সুপারিশ প্রদান করে শাসন বিভাগকে কার্যকরি জবাবদিহিতামূলক করে তোলে। এছাড়া সংসদ মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভার পতন ঘটানোর নীতির মাধ্যমে শাসন বিভাগকে জবাবদিহি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে; কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের কারণে বাংলাদেশ সংসদ সে কাজটি করতে পারে না । বস্তুত: সংসদ কর্তৃক শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতিই হল শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *