Home » » পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বরুপ

পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বরুপ

পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বরুপ

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যার একটির নাম পাকিস্তান। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল পাকিস্তান। এক হাজার মাইলের অধিক দূরত্ব ছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে। জনসংখ্যার দিক থেকে পূর্ব বাংলার জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল মোট জনসংখ্যার ৫৬.২৭% । দু-অংশের মধ্যে জলবায়ু, সমাজ কাঠামো, উৎপাদন ব্যবস্থা, জনগণের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছেদ, খাদ্যাভাস ইত্যাদি কোন কিছুতে মিল ছিল না।

ধর্মভিত্তিক মুসলিম জাতীয়তাবাদ ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির মূলভিত্তি। পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে উলেমা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যগণ দাবি করেন যে, পাকিস্তানকে এমন একটি ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র' ঘোষণা করা হোক, যেখানে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে রাষ্ট্র শাসিত হবে এবং রাষ্ট্র প্রধানকে আমীল বা খলিফার মত অসীম ক্ষমতা দেয়া হবে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের অধিকাংশ সদস্য ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র' নামকরণ সমর্থন করলেও পাকিস্তানকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র করার পক্ষপাতি ছিলেন না। ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি রাষ্ট্রের সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে প্রস্তাব গৃহীত হয় সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, পাকিস্তান হবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দেশের শাসন কার্য পরিচালনা করবে। পাশাপাশি বলা হয় যে, এ রাষ্ট্রে ইসলাম নির্দেশিত গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় বিচার, সাম্য ও স্বাধীনতা পুরোপুরি মেনে চলা হবে।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। দেশের রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে হওয়ার সুবাদে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের বৃহৎ অংশ এবং বড় বড় প্রকল্পগুলো মূলত: পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সামরিক হেড কোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে করা হয়। এসবের ফলে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাগত দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং সর্বক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয় । পাকিস্তান ছিল একটি যুক্তরাষ্ট্র। আর এ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গঠিত হবার কথা ছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে। লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রস্তাব ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। ভৌগলিক বিবেচনায় থেকেও পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির হওয়ার কথা থাকলেও শাসকবর্গের মধ্যে ছিল এককেন্দ্রিক প্রবণতা। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ছিল না। বরং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বললেই এর প্রবক্তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বা ভারতের গুপ্তচর হিসাবে প্রচার করা হত ।

পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার পর সংবিধান প্রণয়ন জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণয়ণে দীর্ঘ নয় বছর লেগে গিয়েছিল। উপরন্তু পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী সুপরিকল্পিত উপায়ে বাঙ্গালির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হানে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে। তারা বাঙালির ভিত্তিমূলে আঘাত হানে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকেই বাঙালি বনাম অবাঙালি দ্বণ্ড প্রকট হয়ে দেখা দেয়। একে কেন্দ্র করেই পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনীতি আবর্তিত হয়। পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি ঘটে। ব্রিটিশ আমলের শাসকদের কাছ থেকে পাকিস্তান উত্তরাধিকার সূত্রে শক্তিশালী সামরিক-বেসামারিক আমলাতন্ত্র পায়। পক্ষান্তরে এই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এ অবস্থা পাকিস্তানে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

পাকিস্তান রাষ্ট্রে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে তা হয়ে উঠেনি। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গভর্নর জেনারেল হন। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী তার নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান থাকার কথা থাকলেও তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীর পরিবর্তে জিন্নাহর প্রতি বেশী অনুগত ছিলেন। ফলে পাকিস্তানে প্রকৃত অর্থে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক আইন সভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক-বেসামরিক আমলারা এটা মেনে নিতে পারেনি। বরঞ্চ কিভাবে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে তার ষড়যন্ত্র শুরু করে। পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরের মাথায় ১৯৭০ সালে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয় ।

বস্তুত পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোটি কোনভাবেই গণতান্ত্রিক ছিল না। এটি ছিল এমন একটি রাষ্ট্র যা সামরিক-বেসামরিক শাসক দ্বারা পরিচালিত হত। ক্রমাগত অন্যায়ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ফলে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটিতে জাতীয় সংহতি কখনোই গড়ে উঠেনি।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *