সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কাকে বলে
যেসব প্রতিষ্ঠান সংবিধানের সুস্পষ্ট বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয় তাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলে। বাংলাদেশে এ ধরণের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা সাংবিধানিক উপায়ে প্রতিষ্ঠিত। এরূপ চারটি প্রতিষ্ঠান হল-
i. এটর্নি জেনারেল
ii. নির্বাচন কমিশন
111. মহাহিসাব নিরীক্ষক
iv. সরকারি কর্ম কমিশন
নিম্নে এ চারটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল-
i. এটর্নি জেনারেল : বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ ভাগে পঞ্চম পরিচ্ছেদের ৬৪নং অনুচ্ছেদে এটর্নি জেনারেল সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হবার যোগ্য কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগদান করবেন। এটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত সকল দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতির সন্তোষানুযায়ী সময়সীমা পর্যন্ত এটর্নি জেনারেল স্বীয় পদে বহাল থাকবেন এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত পারিশ্রমিক লাভ করবেন ii. নির্বাচন কমিশন : বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম ভাগের ১১৮ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গঠিত। সংবিধানের ১১৯ থেকে ১২৬ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় বিষয়াদির উল্লেখ আছে।
iii. মহাহিসাব নিরীক্ষক : বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম ভাগের ১২৭ থেকে ১৩২ নং অনুচ্ছেদে মহাহিসাব নিরীক্ষক পদের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের একজন মহাহিসাব নিরীক্ষক থাকবেন এবং তাঁকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগদান করবেন। বাংলাদেশ সংবিধান ও জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানবলী সাপেক্ষে মহা হিসাব-নিরীক্ষকের কর্মের শর্তাবলি রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করবেন, সেরূপ হবে। মহাহিসাব নিরীক্ষক প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব এবং সকল আদালত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীর সরকারি হিসাব নিরীক্ষা করবেন। সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত মহাহিসাব নিরীক্ষক অপসারিত হবেন না ।
iv. সরকারি কর্ম কমিশন : বাংলাদেশ সংবিধানের নবম ভাগে ২য় পরিচ্ছেদের ১৩৭ থেকে ১৪১ নং অনুচ্ছেদে সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলির উল্লেখ রয়েছে। সংবিধান অনুসারে আইনের দ্বারা বাংলাদেশের জন্য এক বা একাধিক সরকারি কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান করা করা যাবে। একজন সভাপতি আইনের দ্বারা যেরূপে নির্ধারিত হবেন, সেরূপে অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে কমিশন গঠিত হবে। সরকারি কর্ম কমিশনের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। সরকারি কর্ম কমিশনের দায়িত্ব হবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে-নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা-পরিচালনা।
পরিশেষে বলা যায়, সাংবিধানিক উপায়ে যে সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলে। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা, পদের মেয়াদ, পদমর্যাদা, পদত্যাগ ও অপসারণ পদ্ধতি এবং দায়িত্ব সংবিধানে সুনির্দিষ্ট ও সুষ্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions