মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান কি
মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান: কোন দেশে পূর্ণ নিয়োগ স্তরে সামগ্রিক চাহিদা যদি সামগ্রিক যোগানকে অতিক্রম করে তবে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দেখা দেয়। Professor Lipsy বলেন, “Inflationary gap is the amount by which aggregate expenditure would exceed aggregate output of the full employment level of income."
মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূরীকরণের উপায়সমূহ:
পূর্ণ নিয়োগ স্তরে সামগ্রিক যোগানের তুলনায় সামগ্রিক চাহিদা বেশি হলে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান সৃষ্টি হয়। তাই মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর করতে হলে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাসের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে:
১। সরকারি ব্যয়: মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর করতে হলে সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে। বিশেষ করে অনুৎপাদনশীল ও অনুন্নয়ন খাতে সরকারি ব্যয় হ্রাস করা একান্ত প্রয়োজন। সরকারি ব্যয় হ্রাস করা হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসবে এবং সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পাবে। এর ফলে চলতি আয় হ্রাস পেয়ে পূর্ণ নিয়োগস্তরে ফিরে আসবে এবং মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান বা মুদ্রাস্ফীতি ফাঁক দূর হবে।
২। কর বৃদ্ধি: করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হলে জনগণের ব্যয়যোগ্য আয় হ্রাস পায়। এর ফলে ভোগব্যয় কমে আসে। এ অবস্থায় সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পাবে। এর ফলে দ্রব্যমূল্য কমবে ও চলতি আয় হ্রাস পেয়ে পূর্ণ নিয়োগ স্তরে ফিরে আসবে এবং মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর হবে।
৩। সরকারের ঋণ গ্রহণ: সরকার দেশের ভিতরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে জনগণের ব্যক্তিগত ব্যয় সংকুচিত হয় এবং সামগ্রিক চাহিদা কমে যায় । এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য হ্রাস পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূরীভূত হয়।
৪। বাধ্যতামূলক সঞ্চয়: মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর করার জন্য সরকার জনগণকে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। এই উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের একাংশ নগদে প্রদান না করে ঋণপত্র ও বন্ডের আকারে প্রদান করা যেতে পারে । এর ফলে জনগণের হাতে নগদ অর্থ কমবে এবং সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পাবে ও মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর হবে ।
৫। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি : মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে পারে। খোলাবাজারে ঋণপত্র বিক্রয়, ব্যাংক হার বৃদ্ধি, রিজার্ভের অনুপাত বৃদ্ধি প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অর্থনীতিতে ঋণ সরবরাহ কমে আসবে এবং সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পাবে। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর হবে।
৬। সুদের হার বৃদ্ধি: বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পায়। এর ফলে বিনিয়োগ সংকুচিত হয় এবং সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায়। এভাবে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পেলে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূরীভূত হয় ।
৭। আমদানি বৃদ্ধি: মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূরীকরনের অন্যতম উপায় হল বিদেশ থেকে আমদানি বৃদ্ধি। কারণ মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান মূলত পূর্ণ নিয়োগ স্তরে উদ্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে দেশীয় পণ্যের যোগান বৃদ্ধির সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে ভোগ্যপণ্য ও বিনিয়োগ দ্রব্য আমদানি করে দেশে সামগ্রিক যোগান বৃদ্ধি করা যায়। এর ফলে সামগ্রিক চাহিদা যোগানের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান দূর করা যায় ।
এ সব ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে পূর্ণ নিয়োগ স্তরে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির দরুণ যে মুদ্রাস্ফীতি ব্যবধান বা ফাঁক সৃষ্টি হয় তা দূরীভূত হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions