ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম কি
‘ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম' হচ্ছে সমাজকর্ম পেশার একটি বিশেষায়িত শাখা। প্রকৃতপক্ষে ‘Clinical' বা ক্লিনিক্যাল শব্দটি গ্রীক Kline শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুর পাশে (at the beside)। অনেকে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম পরিভাষাটি ব্যক্তি সমাজকর্ম অথবা মনোচিকিৎসা সমাজকর্ম অর্থে ব্যবহার করলেও প্রকৃত অর্থে এগুলোর সঙ্গে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের কর্মপরিধিগত বেশ পার্থক্য রয়েছে। ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের প্রাথমিক ফোকাস হচ্ছে মানসিক, আবেগীয়, মনো-সামাজিক ও আচরণগত কল্যাণ নিশ্চিত করা।
সাধারণ ভাষায়, ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম হচ্ছে সমাজকর্মের প্রত্যক্ষ অনুশীলনের এক বিশেষায়িত রূপ যার মাধ্যমে ব্যক্তি, দল, পরিবার ও সমষ্টির মানসিক, আবেগীয় ও মনো-সামাজিক সামঞ্জস্যহীনতা দূর করে সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়। Robert L. Barker (২০০৩) প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, “ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম হলো মানসিক ও সামাজিক সামঞ্জস্যহীনতা, বিকলঙ্গতা অথবা আবেগীয় ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার মতো অক্ষমতার প্রতিকার এবং প্রতিরোধে সমাজকর্মের তত্ত্ব ও পদ্ধতির পেশাগত অনুশীলন (Clinical Social Work is the professional application of social work theory and methods to the treatment and prevention of psychosocial dysfunction, disability or impairment, including emotional and mental disorders.)।”
সুতরাং বলা যায়, ক্লিনিক্যাল সামজকর্ম হচ্ছে সমাজকর্মের সেই শাখা যা সমস্যাগ্রস্তদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগীয় ও মনো-সামাজিক সমস্যাদি সমাধানের লক্ষে সেবা প্রদান করে থাকে। এই সেবা কার্যক্রম সমস্যা মূল্যায়ন (assessment), সমস্যা নির্ণয় ( diagnosis) এবং সমস্যা সমাধান - সাইকো থেরাপি, কাউন্সিলিং (treatment- psychotherapy, counseling) নিয়ে আবর্তিত হয়ে থাকে ।
ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের ইতিহাস
প্রকৃতপক্ষে সমাজকর্মের পেশাগত বিকাশের সাথে সাথে এর বিভিন্ন বিশেষায়িত শাখাসমূহেরও বিকাশ হতে থাকে। ১৯৬১ সালে NASW ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের জন্য অনুমোদন দেয় এবং ১৯৬৭ সালে ‘হ্যান্ডবুক অন দি প্রাইভেট প্র্যাকটিস অব সোশ্যাল ওয়ার্ক'-এ এই সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে NASW ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাজকর্মের বিশেষায়িত শাখা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং এ বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। যার ফলাফল স্বরুপ ১৯৮২ সালে 'প্রোভিশনাল কাউন্সিল অন ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্ক' গঠিত হয়, যা ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ”ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম” সমাজকর্মের একটি বিশেষায়িত শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি লাভ করে ।
ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের গুরুত্ব
সমাজকর্ম অনুশীলনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম অনুশীলন করা হয়ে থাকে। ব্যক্তি, পরিবার এবং ছোট দলের মানসিক ও সামাজিক ভূমিকা শক্তিশালী ও সংরক্ষণে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের তাৎপর্য অত্যাধিক। ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম আন্তঃব্যক্তিক মিথস্ক্রিয়া, মানসিক গতিশীলতা, জীবনমুখী সমর্থন এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়াদি পরিচালনার মাধ্যমে সমাস্যার সমাধানে সামাজিক হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা চালায়। উল্লিখিত ক্ষেত্রে সমস্যা নির্ণয় এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মে সেবা প্রদান করা হয় - যা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের অন্তভুর্ক্ত সেবাসমূহ হলো মানসিক চিকিৎসা, পরামর্শসেবা, সেবা গ্রহীতা কেন্দ্রিক উপদেশ, উপদেষ্টা সেবা এবং মূল্যায়ন। সামাজিক হস্তক্ষেপ হচ্ছে সমাজকর্মের অন্যতম কৌশল । সমাজকর্মের প্রত্যক্ষ ও সরাসরি হস্তক্ষেপের বিশেষ কৌশল হলো ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম। দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিরসন, মাদকাসক্তি নিরাময় ও অপরাধপ্রবণ আচরণ সংশোধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম অনুশীলিত হয়। সমাজের বহুমুখী মানবীয় সমস্যা সমাধানে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের প্রয়োগ লক্ষণীয়। ফলে স্বাস্থ্য ও মানসিকসেবা এজেন্সি, স্কুল, পরিবার ও শিশুকল্যাণ এজেন্সি, প্রবীণসেবা এজেন্সি, অপরাধ সংশোধনী এজেন্সিসহ বিভিন্ন সেবামুখী এজেন্সিতে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম অনুশীলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীর ভূমিকা
মানবীয় সমস্যা ও দুর্দশার অনেক দিক ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমস্যাগ্রস্তদের সমস্যা সমাধানে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মী কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ক্লিনিক্যাল সমাজককর্মী দৈহিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ, পরিত্যক্ত, বঞ্চিত এবং সহিংসতায় শিকার মানবগোষ্ঠী, উদ্বাস্তু, বেকার, দুর্বল এবং অসহায় প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং গৃহহীনদের নিয়ে কাজ করে থাকে। বর্তমান সমাজের বহুমুখী মানবীয় সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীরা ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions