Home » » চিকিৎসা সমাজকর্ম কি

চিকিৎসা সমাজকর্ম কি

চিকিৎসা সমাজকর্ম কি

চিকিৎসা সমাজকর্ম হলো আধুনিক সমাজকর্মের অন্যতম প্রায়োগিক শাখা, যে শাখায় সমাজকর্মীরা চিকিৎসা গ্রহণকারী সমস্যাগ্রস্ত রোগীদের মনো-সামাজিক সামঞ্জস্যহীনতা অসমতা বা আংশিক অক্ষমতা এবং আবেগীয় ও মানসিক সামঞ্জস্যহীনতা প্রতিকার ও প্রতিরোধে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মুল্যবোধ ও পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। চিকিৎসা সমাজকর্মের সংজ্ঞায় R.A. Skidmore and M. G. Thakery (১৯৬৪:৭২) তাঁদের æIntroduction to Social Work” গ্রন্থে বলেছেন,“স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ এবং পদ্ধতি প্রয়োগ করাকেই চিকিৎসা সমাজকর্ম বলা হয়” । আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্ম সমিতির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “চিকিৎসা সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের তত্ত্ব ও পদ্ধতির পেশাগত অনুশীলন যা মনো-সামাজিক সামঞ্জস্যহীনতা, অসমতা বা আংশিক অক্ষমতা অথবা আবেগীয় ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার প্রতিকার ও প্রতিরোধ কল্পে প্রয়োগ করা হয়।”

সুতরাং বলা যায়, চিকিৎসা সমাজকর্ম সমাজকর্মের এমন একটি বিশেষ শাখা, যার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান, কৌশল এবং পদ্ধতি প্রয়োগ করে রোগীকে তার আওতাধীন চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধার পূর্ণতম ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনে সহায়তা করা হয়।


চিকিৎসা সমাজকর্মের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে 

চিকিৎসা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে চিকিৎসাধীন রোগীর সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে হাসপাতাল, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের কাজের সমন্বয় সাধন করে দলীয় কর্মের (team work) মাধ্যমে চিকিৎসায় সহায়তা করা । এ প্রসঙ্গে আমেরিকার চিকিৎসা সমাজকর্মী সমিতি উল্লেখ করেছে, “চিকিৎসা সমাজকর্ম রোগীর সার্বিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালায় না। এটি শুধু সেসব সামাজিক উপাদান বিশ্লেষণ করে, যেগুলো প্রত্যক্ষভাবে রোগীর অসুস্থতা এবং চিকিৎসার বাধা হিসেবে দেখা দেয়। এগুলোকে "Social Component of Illness” বা “রোগের সামাজিক উপাদান” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।


চিকিৎসা সমাজকর্মের ঐতিহাসিক বিবর্তন

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে চিকিৎসা সমাজকর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে। ১৮৮৩ সালে ইংল্যান্ডে একটি মানসিক হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা পরবর্তী দেখাশোনা করার মাধ্যমেই এ কার্যক্রমের সূত্রপাত ঘটে। চার্লস এস. লক (Charls S. Loch) এর নেতৃত্বে ১৮৯০ সালে Lady Almonors in England Hospital -এ ফ্রি চিকিৎসা নেয়ার জন্য আবেদনকারী রোগীদের মানসিক অবস্থা তদন্ত করার মাধ্যমে চিকিৎসা সমাজকর্মের অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাত্রা সংযোজিত হয়। লন্ডনের রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালে ১৮৯৫ সালে প্রথম লেডি আলমোনারস (Lady Almomers) নিয়োগ করা হয়। যাদেরকে চিকিৎসা সমাজসেবিকা হিসেবে অবিহিত করা হতো। ১৯০২ সালে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. চালর্স পি. ইমারসন (Dr. Charles P. Emerson) মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সামাজিক প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে চিকিৎসা শিক্ষার অংশ হিসেবে সামাজিক ও আবেগীয় সমস্যা অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা রোগের সাথে রোগীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোষ্টন শহরে Massachusetts General Hospital এর ড. রিচার্ড ক্লার্ক ক্যাবট (Dr. Richard Clarke Cabot) এর উদ্যোগে প্রথম চিকিৎসা সমাজকর্মের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যার ফলে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার বিভিন্ন হাসপাতালে সুষ্ঠু চিকিৎসার স্বার্থে চিকিৎসা সমাজকর্মীদের নিয়োগ বৃদ্ধি পায়। ১৯১৮ সালে আমেরিকায় চিকিৎসা সমাজকর্ম সমিতি গঠনের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৯৪৫ সালে বৃটেনে ইনস্টিটিউট অব আলমনারস (Institute Almoners) নামে চিকিৎসা সমাজকর্মীদের একটি সংগঠন গঠিত হয়। পরবর্তিতে ১৯৬৪ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সোশ্যাল ওয়ার্কারস (Institute of Medical Social Workers) করা হয়। উল্লেখ্য এ সংগঠনটি ১৯৭০ সালে গঠিত ব্রিটিশ সমাজকর্মী সংস্থার (British Social Workers) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সংগঠন। উন্নত বিশ্বের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে উন্নয়নশীল দেশে চিকিৎসা সমাজকর্ম ধারণার সূত্রপাত ঘটে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৫৮ সালে চিকিৎসা সমাজকর্মের যাত্রা শুরু হয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সহায়তার জন্য হাসপাতাল সামাজসেবা কার্যক্রমের লক্ষ্যে ৪১৯ টি উপজেলায় হেলোথ কমপ্লেক্সে এই কার্যক্রমের আওতায় রোগীকল্যাণ সমিতি কাজ করছে। বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৯৫টি হাসপাতালে চিকিৎসা সমাজকর্ম ‘হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম' নামে পরিচালিত হচ্ছে।


 চিকিৎসা সমাজকর্মের গুরুত্ব

চিকিৎসা সমাজকর্ম আধুনিক সমাজকর্মের অন্যতম সংযোজন। এ শাখায় সমাজকর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নিরাময় এবং পুনবার্সন কার্যক্রমের মাধ্যমে সেবাদান করে থাকে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সমাজকর্মী রোগীর পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যবিধানে মানসিক সমর্থন প্রদান এবং প্রয়োজনীয় বস্তুগত ও অবস্তুগত সেবার মাধ্যমে সক্ষম করে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কারণে চিকিৎসা সমাজকর্মের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসা সমাজকর্মীর বা দলীয় কর্ম-প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে রোগের আর্থ-সামাজিক কারণ উদ্‌ঘাটন ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রোগীর রোগ নিরাময়ে চিকিৎসাসেবাকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করতে চিকিৎসককে সর্বোতভাবে সহায়তা করতে চিকিৎসা সমাজকর্মের গুরুত্ব অত্যাধিক। চিকিৎসা সমাজকর্ম অনুশীলনে চিকিৎসকের চিকিৎসাদান প্রক্রিয়া গতিশীল হয়। যার ফলে রোগী দ্রুত নিরাময় লাভ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। Elizabeth A. Segal et al. (2007-224) তাঁদের "An Introduction to the Profession of Social Work: Becoming a Change Agent” গ্রন্থে চিকিৎসা সমাজকর্মীর ভূমিকাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা— গভীর যত্ন (acute care), চলিষ্ণু যত্ন (ambulatory care) এবং দীর্ঘকালীন যত্ন (long term care)। এক্ষেত্রে দুটি ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন— এক. জটিলতর তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাহায্যার্থী এবং তাদের পরিবারকে অধিকতর সাহায্য করা যাতে করে তারা অতি দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারে (Helping clients and their families more through an effectivity deal with a complex system of care so that they can return home as soon as possible.) |

স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে সর্বজনীন প্রাপ্যতা ও জবাবদিহিতার এবং পরিবর্ধিত কার্যকারিতায় পরামর্শ দান। 

আধুনিক শিল্পযুগে মানবিক ও সামাজিক বিষয়াদি রোগীর রোগ সৃষ্টি, রোগের কারণ ও প্রভাব বিস্তারের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। চিকিৎসাধীন রোগীর মানবিক, সামাজিক ও অন্যান্য দিকের উপর গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা সমাজকর্মীরা রোগীর কার্যকর সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, আব্দুল মিঞা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসক যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ে ঔষধ দিচ্ছেন। কিন্তু তার রোগ নিরাময় বিলম্বিত হচ্ছে। আব্দুল মিঞার যক্ষ্মার চিকিৎসা অনুসন্ধান করে জানা গেল তিনি হাসপাতালের পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। তাছাড়া তিনি এই ধারণা পোষণ করেছেন যে, তিনি খুব শীঘ্রই মারা যাবেন। তিনি মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসা সমাজকর্মী তার সমস্যা সামাধানে সমর্থনমূলক চিকিৎসা প্রদান করে রোগীর রোগ নিরাময়ে ভূমিকা পালন করতে পারেন ।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *