Home » » ধ্বনিতত্ত্ব কি

ধ্বনিতত্ত্ব কি

ধ্বনিতত্ত্ব কি

ভাষার মৌলিক ও ক্ষুদ্রতম একক হল ধ্বনি। ভাষাবিজ্ঞানের যে অংশে ধ্বনি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে ধ্বনিতত্ত্ব বলে। তবে ব্যাপক অর্থে পাখির কলধ্বনি, হাততালির শব্দ, বাঁশির শব্দ থেকে শুরু করে মানুষের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ধ্বনি পর্যন্ত সবকিছু Sound বা ধ্বনি সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ভাষাবিজ্ঞানে কেবলমাত্র মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিসমূহ নিয়েই আলোচনা করা হয়। মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিকে আমরা বাগধ্বনি (Phone) বলি। আর কোন ভাষায যত বাগধ্বনি পাওয়া যায় তার নির্দিষ্ট বিন্যাস সম্পর্কে তত্ত্বীয় পঠন-পাঠন, সুনির্দিষ্ট জ্ঞানকে ধ্বনিতত্ত্ব বলা যায়।

মানবভাষার সকল বাগধ্বনিই আপেক্ষিকভাবে একই রকম ধ্বনিক বৈশিষ্ট্যর ছোট ছোট সেট দ্বারা বিশেষিত। দেখা যায় যে, পৃথিবীর একটি মহাদেশে প্রচলিত সকল ভাষাতেই একই শ্রেণীর কিছু ধ্বনি ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার পৃথিবী জুড়ে সকল ভাষাতেই বাগধ্বনির একই রকম বিন্যাস কাজ করে। সেজন্যই আমরা যখন একটা ভাষা শিখি কোন্ প্রকার বাগধ্বনি ঐ ভাষাতে ব্যবহৃত হয় তা জেনে নিই ।

উপরের আলোচনা থেকে ধ্বনিতত্ত্বের যে দিকগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হচ্ছে, ধ্বনিতত্ত্ব হল বাধ্বনি ও তার ধ্বনি-বিন্যাস সম্পর্কিত বিষয় ও জ্ঞান।

পৃথিবীর প্রত্যেকটি ভাষারই নিজস্ব ধ্বনি-বিন্যাস রয়েছে।


ধ্বনি-বিন্যাস বলতে আমরা বুঝি:

প্রদত্ত/সংশ্লিষ্ট ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনি সমূহের একটি সেট, শব্দের মধ্যে ব্যবহৃত ধ্বনি গুলোর সম্ভাব্য পরিসজ্জা এবং, ভাষিক ধ্বনির বর্জন, সংযোজন অথবা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।

ধ্বনি-বিন্যাস প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত হতে পারে:

ক. সংশ্লিষ্ট ধ্বনিগুলোর তালিকায় অমিল থাকতে পারে,

খ. ধ্বনিগুলো এক এক ভাষায় এক এক ক্রম অনুযায়ী আসতে পারে, এবং

গ. যে সকল সূত্র বা প্রক্রিয়া ধ্বনিকে/ধ্বনি পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত করে তা বিভিন্ন হতে পারে।

মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত যত বাগ্‌ধ্বনি বা Phone আমরা শুনতে পাই তাদের সবগুলি যাবতীয় ভাষায় তাৎপর্যপূর্ণ (Significant) ভূমিকা গ্রহণ করে না। এক এক ভাষায় এক এক রকমের বাধ্বনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। প্রত্যেক ভাষার তাৎপর্যপূর্ণ ধ্বনিগুলো হল সেই ভাষার মূল ধ্বনি বা ধ্বনিমূল, অন্যগুলি হল সেই সব ধ্বনিমূলেরই উচ্চারণ বৈচিত্র্য (Variation)। যেমন বাংলায় ‘শ্রীল' শব্দের শ্ ও ‘শীল' শব্দের ‘শ” হল একটিই ধ্বনিমূল (Phone)। কিন্তু দুই শব্দে সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাবে দুই ‘শ্’ এর উচ্চারণ ভিন্ন। ‘শ্রীল’ শব্দে ‘শ্’ এর সঙ্গে ‘ল’ যুক্ত হয়ে আছে। ল্ এর উচ্চারণ স্থান হচ্ছে দন্ডের কাছাকাছি। এই ল্ এর প্রভাবে এর সঙ্গে যুক্ত শ্ এরও উচ্চারণ স্থান দন্ডের কাছাকাছি হয়ে গেছে। অর্থাৎ বানানে ‘শ্’ থাকলেও সাধারণ বাঙালির উচ্চারণের যারা বিশুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণ অনুসরণ করে না তাদের উচ্চারণে ‘শ্রীল’ শব্দের তালব্য ‘শ্’ কার্যত উচ্চারিত হয় দন্ত্য ‘স' এর মতো। এই যে ‘স' কে ভাষাবিজ্ঞানে বাংলার একটি স্বতন্ত্র্য ধ্বনিমূল না বলে ‘শ্’ এরই বিচিত্ররূপ বলতে পারি। আবার ‘শীল' শব্দের যে ‘শ’ তার উচ্চারণ তালব্য ‘শ্” -ই। সুতরাং আমরা দেখতে পাই বাংলায় একই ধ্বনিমূল ‘শ্’ এর উচ্চারণ ‘শ্রীল’ শব্দে দন্ত্য ‘স্’ এর মতো এবং ‘শীল' শব্দে এর উচ্চারণ তালব্য ‘শ’। ভাষা বিজ্ঞানের নিয়মে মূলধ্বনি ‘শ্’ কে বলা যায় Phoneme বা ধ্বনি মূল। আর সন্নিহিত ধ্বনি প্রভাবিত তার উচ্চারণগত বিচিত্র রূপগুলিকে বলা হয় মূলধ্বনির সহধ্বনি। সুতরাং ভাষায় আমরা যত বাগধ্বনি শুনতে পাই তার কতগুলো হচ্ছে ধ্বনিমূল বা ফোনিম আর কতগুলো মূলধ্বনির উচ্চারণ বৈচিত্র্য। এ উচ্চারণ বৈচিত্র্য দু'রকম হতে পারে- একটিকে বলে সহধ্বনি (Allophone) অন্যটিকে বলে মুক্ত বৈচিত্র্য (Free Variation)।


উপরের আলোচনা থেকে ধ্বনিমূলের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে আমরা নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো উলেখ করতে পারি:

ধ্বনিমূল হচ্ছে ভাষার ক্ষুদ্রতন্ত্র ধ্বনিতাত্ত্বিক একক এবং

ধ্বনিমূলের একক বলতে ধ্বনিমূলগত বৈপরীত্যের প্রত্যেক সদস্যকে নির্দেশ করা হয়।

ধ্বনিমূলের সংজ্ঞা পরবর্তীকালে আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে ধ্বনিমূল বলতে বোঝায়—

কোন ভাষার ক্ষুদ্রতম একক, যার নিজস্ব কোন অর্থ নেই কিন্তু অর্থ প্রকাশে সাহায্যে করে এবং ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবেশে পরিবর্তিত হয়।

আমরা উদাহরণের সাহায্যে এ বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ করতে পারি:

১. /ক/ ধ্বনিকে ধ্বনিমূল হিসেবে চিহ্নিত করার কারণ যে /ক / কে এর চেয়ে ক্ষুদ্রতম অংশে বিভক্ত করা যায় না। সেক্ষেত্রে /ক/ ক্ষুদ্রতম একক।

২. /ক/ ধ্বনির নিজস্ব কোন অর্থ নেই কিন্তু ন্যূনতম জোড়ের সাহায্যে অর্থগত দিক স্পষ্ট করে। যেমন:

/ কাল / / খাল/

/ গাল /

এ তিনটি শব্দের শেষাংশ-আল এক, কিন্তু শব্দের প্রথমে ব্যবহৃত ধ্বনিগুলো পৃথক বলে তিনটি পৃথক অর্থ প্রকাশিত।

৩. ধ্বনিমূলের পরিবর্তন ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। ‘ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবেশ' অর্থে কোন ধ্বনির আগে বা পরে ব্যবহৃত যে কোন ধ্বনি বোঝায়। যেমন ‘চালতা' ও ‘পাল্টা’ দু'টি শব্দ। এই উভয় শব্দে /ল/ ধ্বনি থাকা সত্ত্বেও প্রথম শব্দে /ল/ এর পরে দন্ত্য ধ্বনি থাকা তার প্রকৃতিগত কোন পরিবর্তন হয় নি, কিন্তু দ্বিতীয় শব্দে /ল/ ধ্বনির পর মূর্ধণ্য ধ্বনি থাকায় /ল/ ধ্বনির প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। সে জন্যে প্রথমে শব্দের /ল/ ধ্বনিমূল, কিন্তু দ্বিতীয় শব্দের /ল/ ধ্বনিমূল নয়, এটি মূলধ্বনির সহধ্বনি বা Allophone। সহধ্বনি বলতে ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবেশে ধ্বনিমূলের পরিবর্তিত রূপকে নির্দেশ করে।


ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তনশীলতা থেকে ধ্বনিমূলকে পৃথক করা ও কোন ভাষায় কোন্ উপাদান ধ্বনি মূল হিসেবে নির্দেশিত হবে এবং সেই সঙ্গে কোন্ উপাদান ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তনশীলতা হিসেবে গৃহীত হবে তা আমরা সূত্রের সাহায্যে আলোচনা করতে পারি।

সূত্র: ১

যদি কখনো দুটো ধ্বনি একই ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবেশে ব্যবহৃত হয় এবং অর্থের কোন পার্থক্য নির্দেশ না করে যদি একটির পরিবর্তে অন্যটিকে রদবদল করা যায় তাহলে উভয়ধ্বনির ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তনশীলতা হিসেবে গৃহীত হবে।

ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তনশীলতা দু'টি মৌল আদর্শের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করা যায়: প্রথমত ভাষার আদর্শগত কাঠামোয় সেগুলির সম্পর্ক অনুযায়ী। দ্বিতীয়ত সেগুলির নির্দেশক ক্রিয়া অনুযায়ী।

যেমন:

বাংলায় তালব্য /শ/ এবং দন্ত /স/ ব্যক্তিবিশেষের উচ্চারণের ক্ষেত্রে স্টাইলগত বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিবর্তনশীলতা লাভ করে।

বাংলায় ব্যক্তি বিশেষের উচ্চারণের জন্য জিভের কম্পন বা কোন ক্ষেত্রে জিভ পেছনের দিক বেঁকিয়ে উচ্চারণ করায় /র/ ও /ড়/ পরিবর্তনশীলতা লাভ করতে পারে ।

সুত্র: ২

যদি দু'টি ধ্বনি একই ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবেশে ব্যবহৃত এবং অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের পরস্পরকে রদবদল করা না যায়, তাহলে উভয় ধ্বনির স্বতন্ত্র ধ্বনিতাত্ত্বিক উপলব্ধির জন্য সেগুলো স্বতন্ত্রধ্বনি হিসেবে গৃহীত হবে ।

সাধারণত ন্যূনতম জোড়ের সাহায্যে বিভিন্ন মূলধ্বনির স্বাতন্ত্র ও অর্থগত পার্থক্য নির্দেশিত হয়। যেমন: বাংলায় তান, যান, দান, ধান— এই শব্দগুলিতে একটি ধ্বনির জন্য শব্দটির পুরো অর্থ পাল্টে যাচ্ছে, কাজেই এখানকার বিভিন্ন ধ্বনি / ত, থ, ফ, ঠ/ শব্দের মধ্যেকার ভিন্নতাকে বৈপরীত্যের দ্বারা নির্দেশিত করা যায়। এজন্যই এগুলো বাংলা ভাষার স্বাতন্ত্র্যিক ধ্বনি। প্রত্যেক ভাষাতেই এমনি স্বাতন্ত্রিক ধ্বনি থাকে, আর এরকম স্বাতন্ত্র্যিক ধ্বনি গুলোই হলো ভাষার মৌলিক ধ্বনি-একক।

সুত্রঃ ৩

যদি শব্দগত বা উচ্চারণের দিক থেকে দুটি সম্পর্কিত ধ্বনি কখনো একই ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবেশে ব্যবহৃত না হয় তাহলে তাদের একই ধ্বনির মিলিত পরিবর্তনশীলতা হিসেবে ধরা যায়। যেমন: ইংরেজি ভাষায় তিনটি ধ্বনি (A, a, aæ) আছে এবং সেগুলো কেবল একটি বিশেষ অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই তিনটি ধ্বনি শব্দীয় ও উচ্চারণীয় দিক থেকে পরস্পর সম্পর্কিত। অর্থাৎ এই তিনটি ধ্বনির উচ্চারণ স্থান এক।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *