জনসংখ্যা সমস্যা কি
যে কোনো রাষ্ট্রের বা দেশের জন্য জনসংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান মানবসম্পদ। দেশের সম্পদকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী ও সেবাসমূহ উৎপাদনের ক্ষেত্রে মানবসম্পদই মূল চালিকাশক্তি। সাধারণভাবে জনসংখ্যা বলতে সেই সমস্ত জনগণকে বুঝায় যারা কোনো নির্দিষ্ট এলাকা, শহর বা দেশে বসবাস করে। দক্ষ ও কুশলী জনসংখ্যা হলো উৎপাদনের অপরিহার্য উপাদান কি পরিমাণ উৎপাদন করা হবে, তা নির্ভর করে কর্মক্ষম জনসংখ্যার উৎপাদনশীলতার উপর এবং উৎপাদনশীলতা নির্ভরকরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং দক্ষতার উপর। কিন্তু যখন কোনো দেশের জনসংখ্যা প্রাপ্ত সম্পদের তুলনায় কম বা বেশি হয় এবং তা জাতীয় কল্যাণ ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে তখন তা সমস্যায় পরিণত হয়। জনসংখ্যা দেশের প্রাপ্ত সম্পদ ও সম্ভাব্য সম্পদের তুলনায় অধিক হলে তাকে জনসংখ্যাস্ফীতি বলা হয়। জনসংখ্যাস্ফীতিরই একটি সম্প্রসারিত রূপ হচ্ছে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস বলেন, “যদি কোনো দেশের জনসংখ্যা সে দেশের মোট খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে অধিক হয় তবে জনসংখ্যার সেই পরিস্থিতিকে জনসংখ্যা স্ফীতি বলে।” অর্থাৎ বলা যায়, কোনো দেশের জনসংখ্যা যখন আকস্মিকভাবে অতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে দেশের সামাগ্রিক আর্থ-সামাজিক জীবনে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে তখন তাকে জনবিস্ফোরণ বলা হয় এবং এরূপ অবস্থাকে জনসংখ্যা সমস্যা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার কারণ
বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃতি জনাধিক্য। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের আদমশুমারির তথ্যানুযায়ী তৎকালীন বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল ৭,৬৩,৯৮,০০০ জন। কিন্তু ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী তৎকালীন বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ১৪,২৩,১৯,০০০ জন যা বাংলাদেশের সম্পদ ও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং বাংলাদেশের জনসংখ্যার আধিক্য একটি বড় সমস্যা। এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পশ্চাতে অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিষয়ের ক্রিয়াশীলতা লক্ষ্য করা যায়।
নিম্নে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো:
১. উচ্চ জন্মহার: বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উচ্চ জন্মহার। ২০১১ সালের আদমশুমারীর তথ্যানুযায়ী এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা হার ১.৩৭। এই উচ্চ জন্মহার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে।
২. তুলনামূলক নিম্ন মৃত্যুহার: বর্তমানে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে মৃত্যুহার অনেকাংশে কমে এসেছে এবং জন্ম ও মৃত্যুহারের মধ্যে ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। তুলনামূলক নিম্ন মৃত্যুহার জনসংখ্যার আধিক্য সৃষ্টি করছে।
৩. অধিক শিশু মৃত্যুহার: এদেশের শিশু মৃত্যুহার অধিক হওয়ার কারণে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা পিতামাতাকে অধিক সন্তান গ্রহণে আগ্রহী করে তোলে। অধিক সন্তান গ্রহণও জনসংখ্যাধিক্যের জন্য দায়ী।
৪. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ: বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বহুল প্রচলন রয়েছে। বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রত্যক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। UNFPA-এর তথ্যানুযায়ী এদেশের ৫০ ভাগেরও বেশি নারী ১৯ বছর বয়সের পূর্বেই প্রথম সন্তানের জন্ম দেয় এবং সমগ্র জীবনব্যাপী তাদের বহুবিধ সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা থাকে ।
৫. উচ্চ প্রজনন ক্ষমতা: অনেকে মনে করেন ভৌগোলিক অবস্থান, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনপ্রণালী প্রভৃতি কারণে এদেশের নারীদের প্রজনন ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি যা অধিক সন্তান জন্মদানে ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. অনিয়ন্ত্রিত সন্তান জন্মদানঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত সন্তান জন্মদান । সরকারি ও বেসরকারি ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও জন্ম নিরোধক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রভাবে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা অধিক।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions