মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা কি? বা মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা কাকে বলে?
মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা
Psychological Test
মানব বা কর্মী নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হল মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা। কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বহু সংখ্যক কর্মী বা প্রার্থী হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী বেছে নিবার জন্য অভীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। কর্মীদের মধ্যে যোগ্যতা,দক্ষতা, আচার ব্যবহার, প্রবণতা, ব্যক্তি সাফল্য ইত্যাদি যাচাইয়ের জন্য অভীক্ষার উপর নির্ভর করতে হয়। বস্তুত অভীক্ষা বলতে কোন বিষয় পরিমাপের পদ্ধতিকে বুঝায়। তাই প্রার্থীর মধ্যে উপরোক্ত বিষয়গুলো কি পরিমাণ বিদ্যমান তা যাচাই বা পরিমাপ করার জন্য অভীক্ষার ব্যবহার অত্যাবশ্যক। মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলির পরিমাণ যাচাইয়ের জন্য মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার সাহায্য গ্রহন করা হয়। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কর্মী নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সীমিত সংখ্যক শূন্য পদের জন্য বহুসংখ্যক পদপ্রার্থী আবেদন করে থাকে । এ পরিস্থিতির মধ্যে উপযুক্ত কর্মী বাছাই বরার জন্য বিভিন্ন প্রকার অভীক্ষার সাহায্য গ্রহণ করা হয়। অভীক্ষার সাহায্যে একজন প্রার্থী অন্য প্রার্থী অপেক্ষা কি পরিমাণ বেশী বিভিন্ন প্রকার মানবিক গুণাবলির অধিকারী তার তুলনামূলক যাচাই করা হয়। কর্মী কার্যক্ষেত্রে কিরূপ আচরণ করতে পারে তা যাচাই করে নির্ধারিত কাজের জন্য তার উপযুক্ততা বিচার করা হয়। ঝোঁক অভীক্ষার সাহায্যে কর্মীর সুপ্ত প্রতিভা পরিমাপ করা হয়। আর বুদ্ধিমত্ত্বা অভীক্ষার সাহায্যে কর্মীর কোন বিষয়ে বোধগম্যতা, বিচার শক্তি ইত্যাদি যাচাই করা হয়। কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে কর্মীকে স্বয়ংসিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে হয়। এ সমস্ত অভীক্ষার মাধ্যমে কর্মীর যোগ্যতা সম্বন্ধে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায় বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার অভীক্ষার সাহায্য গ্রহণ করে থাকে।
মনস্তাত্ত্বিক অভিক্ষার ধরণ/ প্রকারভেদ
Types of Psychological Tests
যে পদ্ধতির সাহায্যে প্রার্থীর ব্যবহার, আচার-আচরণ সম্পর্কিত সম্ভাব্য ও প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি জানা যায় তাকে অভীক্ষা বলা হয়। সুষ্ঠু কর্মী নির্বাচনে এবং কর্মীর যোগ্যতা নির্ধারণে বিভিন্ন ধরনের অভীক্ষার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। অভীক্ষাসমূহের মাধ্যমে মানুষের জটিল প্রকৃতিকে পুরোপুরি আবিস্কার করতে না পারলেও এ কথা নিঃসংকোচে বলা যায় যে, এরূপ অভীক্ষার মাধ্যমে কর্মীদের ভবিষ্যৎ আচরণ মোটামুটি অনুমান করা যায়। কর্মীদের যোগ্যতা নির্ধারণে বিভিন্ন ধরনের অভীক্ষার প্রচলন রয়েছে। এসবের আলোচনা নিচে দেওয়া হলোঃ
১. প্রবণতা বা ঝোঁক অভীক্ষা (Aptitude Test) : প্রবণতা বা ঝোঁক অভীক্ষা দ্বারা কোন ব্যক্তির বিশেষ পেশার জন্য বিশেষ ক্ষমতা আছে কি না তা নির্ধারণ করা হয়। এর দ্বারা কেন বিষয় শিক্ষণে প্রার্থীর বর্তমান অথবা সুপ্ত প্রতিভা পরিমাপ করা হয়। তাই অনেকে একে ভবিষ্যৎ শিক্ষণ ক্ষমতা বলে থাকেন। কোন ধরণের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে নির্বাচিত কর্মী কি পরিমাণ সফলতা অর্জন করতে পারবে তা প্রবণতা অভীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায়। কোন কোন সময় কর্মীর বৈশিষ্ট্য, জ্ঞান, বুদ্ধি ও দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য বিশেষ প্রবণতা অভীক্ষার ব্যবহার দেখা যায়।
২ . বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষা (Intelligence Test): বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষার উদ্দেশ্য হলো চাকুরী প্রার্থীরা কি পরিমাণ বুদ্ধির অধিকারী তা পমিাপ করা। এ অভীক্ষার দ্বারা প্রার্থীর মানসিক তৎপরতা বা ক্ষমতা, কারণ অনুধাবন ক্ষমতা, চিন্তার নমনীয়তা, বোধশক্তি প্রভৃতির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। Thurstone বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষা সম্পর্কে বলেন, “বুদ্ধিমত্তা ব্যক্তির বিচারশক্তি, বাকপটুতা, বোধশক্তির বিচার, স্মৃতিশক্তি প্রভৃতির মাধ্যমে পরিমাণ করা যায়।” প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ের মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার যে সকল পদ্ধতি রয়েছে তন্মধ্যে বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা বেশি ব্যবহৃত হয়।
৩. আগ্রহ বা কৌতূহল অভীক্ষা (Interest Test): কর্মীর সাফল্য কেবলমাত্র তার ঝোঁক বা প্রবণতার উপর নির্ভর করে না আগ্রহের উপর ও অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ জাতীয় অভীক্ষায় কোন প্রকার কাজের প্রতি প্রার্থী অধিক আগ্রহী তা নিরূপণ করা যায়। তাই কর্মী নিয়োগের পূর্বে সংশিষ্ট পেশায় প্রার্থীর আগ্রহ বা কৌতূহল যাচাই করা হয়। এ অভীক্ষায় প্রার্থীর কোন কাজের প্রতি কি পরিমাণ আগ্রহ তা জানা যায়।
৪. নৈপুণ্য অভীক্ষা (Efficiency test): নৈপুণ্য অভীক্ষায় প্রার্থীর প্রদত্ত কার্য সম্বন্ধে জ্ঞানের মাত্রা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করা হয়। এ জাতীয় অভীক্ষাকে দক্ষতা বা কৃতিত্ব অভীক্ষা ও বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় কর্মীর প্রকৃত কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যেমন, একজন কম্পিউটার অপারেটরকে এক পাতার একটি চিঠি কম্পিউটারে কম্পোজ করতে দিয়ে তার নৈপুণ্য পরীক্ষা করা যায়।
৫. ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা (Personality test): ব্যক্তিত্ব ব্যক্তির স্থায়ী ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া বিশেষ। এর দ্বরা তার বাহ্যিক কার্যাবলি ও গুণাবলি প্রকাশ পায়। ব্যক্তিত্ব অভীক্ষায় প্রার্থীর পছন্দ, অপছন্দ, অভ্যাস, প্রকৃতি উৎসাহ,বিচারবোধ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা হয়। আবেদনকারীর মধ্যে কি মাত্রায় উলিখিত গুণাবলি বিদ্যমান তা পরিমাপ করার জন্য ব্যক্তিগত অভীক্ষার প্রয়োজন হয়।
৬. পেশাগত প্রবণতা অভীক্ষা (Vocational Aptitude test) : পেশাগত প্রবণতা অভীক্ষায় দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির সাফল্য সম্পর্কে অনুমান করা যায়। তবে এ ধরনের অভীক্ষায় কোন সাধারণ বুদ্ধিমত্তার উপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না । কেবলমাত্র বিশেষ পেশায় ব্যক্তির প্রবণতা কিরূপ তা নিরূপণ করা হয়।
৭. কারিগরি প্রবণতা অভীক্ষা (Technological Aptitude test): বিভিন্ন কারিগরি কাজ যেমন মেশিনম্যান, ওয়ার্কশপ অপারেটর, ওয়েল্ডিংম্যান প্রভৃতি কাজের জন্য প্রার্থীদের কারিগরি ঝোঁক থাকা আবশ্যক। এরূপ অভীক্ষা দ্বারা ব্যক্তির কারিগরি বোধশক্তি ও ক্ষমতার পরিমাপ করা হয়। আর এ কারণেই বিশেষ ধরনের পেশায় প্রার্থীর প্রবণতা যাচায়ের জন্য উপযুক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
৮. সাফল্যার্জন অভীক্ষা (Achievement test) : সাফল্য অর্জন অভীক্ষা দ্বারা প্রার্থীর বর্তমান জ্ঞান ও যোগ্যাতা পরিমাপ করা যায়। সাধারণত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগে এ ধরনের অভীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, অভীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে এ অভীক্ষাকে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। এক বিশেষ গবেষণায় ৩৮৪টি প্রতিষ্ঠানের অভীক্ষা কর্মসূচি অনুমান করে যে চিত্র পাওয়া যায তা হলো ৯২% করণিক অভীক্ষা, ৭৬ যান্ত্রিক ঝোঁক অভীক্ষা, ৭৪% বুদ্ধিমত্তা অভীক্ষা, ৩৮% ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা, ৬০% আগ্রহ অভীক্ষার ব্যবহার করতে দেখা যায়। সুতরাং কারবারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর্মী নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের অভীক্ষার প্রচলন রয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions