Home » » ফিকহ শাস্ত্র কি? বা ফিকহ শাস্ত্র কাকে বলে?

ফিকহ শাস্ত্র কি? বা ফিকহ শাস্ত্র কাকে বলে?

ফিকহ শাস্ত্র কি? বা ফিকহ শাস্ত্র কাকে বলে?

ফিক্হ শব্দের আভিধানিক অর্থ বুদ্ধিবৃত্তি, প্রজ্ঞা, গভীর জ্ঞান ও সূক্ষ্মদর্শিতা। ইসলামি পরিভাষায় যে শাস্ত্রে মুসলমানদের ব্যবহারিক জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত শরীআতের বিধি-বিধান ইত্যাদি খুঁটিনাটি আলোচিত হয় তাকে 'ইলমুল ফিক্হ' বলে।

হিজরি প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে অনেক মুসলিম মনীষী কুরআন ও হাদিসের ওপর গবেষণা চালিয়ে তা থেকে জীবন যাপনের বাস্তব কর্মপন্থা বের করার চেষ্টা করেন। তাদের গবেষণার ফল হচ্ছে ফিক্হ শাস্ত্র


ফিক্হ শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা

ফিকহের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মহানবী (স) বলেন-

لِكُلِّ شَيْ عِمَادٌ وَعِمَادٌ هُذَا الدِّيْنِ الْفِقْه

“প্রত্যেক বস্তুর কতকগুলো স্তম্ভ আছে। এ দ্বীনের স্তম্ভ ফিক্হ” । (বায়হাকী)

কুরআন ও হাদিসের আলোকে ফক্বীহগণ বলেন, দৈনন্দিন জীবনে জরুরি মাসআলা শিক্ষা করা ফরযে আইন এবং এর চেয়ে বেশি শিক্ষা করা ফরযে কিফায়া।

কুরআন ও হাদিসে ইসলামি শরীআতের বিধি-বিধান বিন্যস্ত অবস্থায় নেই। আহকামে শরীআতকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা না হলে সাধারণ মানুষ দূরের কথা, শিক্ষিত ব্যক্তিদের পক্ষেও আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলা সম্ভব হত না। তাছাড়া নিত্য- নতুন সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশে কুরআন ও হাদিসের গবেষণামূলক ব্যাখ্যা দিয়ে মানব কল্যাণমূলক বিধান প্রস্তুত করা জনসাধারণের পক্ষে সহজ নয়। ইসলামের প্রাজ্ঞ মনীষীগণ অক্লান্ত সাধনার ফলে ফিক্হ শাস্ত্র প্রণয়নে এগিয়ে আসেন। এর উদ্ভাবন ও উৎপত্তির কারণসমূহ বিশ্লেষণ করলে এর প্রয়োজনীয়তা বুঝা যাবে।


ফিক্হ শাস্ত্রের বিষয়বস্তু

ফিক্হ শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শরীআতের হুকুম-আহকাম। শরীআতের অনুসারী তথা মুকাল্লাফ অর্থাৎ বালিগ ও জ্ঞানবান মানুষের কর্ম ও আমল নিয়ে আলোচনা। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মুস্তাহাসান, মুবাহ, জায়িয, নাজায়িয, হালাল, হারাম, মাকরূহ, তাহ্রীমী ও মাকরূহ তানযীহি ইত্যাদি নির্দেশ করা হয়। তাই শরীআতের অনুসারী মানুষের কর্ম ও আমলই হল ফিক্হ শাস্ত্রের বিষয়বস্তু।


ফিক্হ শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়কে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়-

১. ইবাদাত : আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর বান্দার মধ্যে গভীর সংযোগকারী বিষয় হল ইবাদাত।

২. মু'আমালাত : সামাজিক জীবনের লেন-দেন যেমন, অর্থনৈতিক নিয়ম-কানুন যা পরস্পর সাহায্য সহায়তা দান ও যৌথ কাজের জন্য নির্ধারিত। যেমন, বেচা-কেনা, লেন-দেন, ধার-কর্জ, আমানত ইত্যাদি।

৩. মুনাকিহাত : বৈবাহিক বিষয়াদি তথা মানব বংশ বজায় রাখা সম্বন্ধীয় আইন-কানুন। যেমন-বিবাহ, তালাক, ইদ্দত, বংশ, আধিপত্য, ওয়াসিয়াত, উত্তরাধিকার ইত্যাদি।

৪. উকূবাত : অপরাধ ও শাস্তি। যেমন- হত্যা, চুরি, যিনা, দুর্নাম-অপবাদ এর হূদূদ, কিসাস, দিয়াত ইত্যাদি বিষয়ক আইন-কানুন।

৫. মুখাসামাত : বিচার সংক্রান্ত বিষয়াদি।

৬. হুকুমাত ও খিলাফত : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি। লেন-দেন, সন্ধি ও যুদ্ধের নিয়ম-কানুন, রাষ্ট্রীয় উচ্চ পদমর্যাদার বিস্তারিত বিষয়াদি।


ফিক্হ শাস্ত্রের উৎপত্তির কারণ

মহানবীর (স) জীবদ্দশায় শরী'আহর যাবতীয় ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি ওহীর আলোকে প্রদান করতেন। তাঁর তিরোধানের পর সাহাবীগণ কুরআন ও হাদিসের আলোকে যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিতেন। তাবি'ঈ ও তাবি-তাবি'ঈনের যুগেও এ ধারাই চলতে থাকে। তবে সাহাবী, তাবি'ঈ এবং তাবি-তাবি'ঈনের সময় কুরআন ও হাদীসের সাথে তাঁদের বুদ্ধি- বৃত্তি এবং অভিজ্ঞান দ্বারাও কিছু নতুন সমস্যার সমাধান দিতেন। তখন থেকেই ফিক্হ শাস্ত্রের ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে শুরু করে। নব নব যুগ সমস্যা

গতিশীল জীবনের প্রয়োজনে জটিলতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেসব সমস্যার সমাধান দিতে কেবল কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান থাকাই যথেষ্ট নয় বরং গবেষণা, প্রজ্ঞা ও উদ্ভাবনী অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। সাহাবী, তাবি'ঈ ও তাঁদের অনুগামীগণের মধ্যে যারা এরূপ গুণে গুণান্বিত ছিলেন-মুসলিম জগৎ তাঁদের গবেষণা, ইজতিহাদ ও ফয়সালার ওপর নির্ভর করত। তাঁরা কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের সমাধান বহাল রেখে নতুন সমস্যার ব্যাপারে সমাধান দিয়েছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে আরো যে সকল নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে সেগুলো সমাধানের মূলনীতি ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ফলে উসূলুল ফিক্হ নামক এক নতুন বিজ্ঞানের উদ্ভব হয়।


আইন সুসংবদ্ধকরণ

কুরআন ও হাদিস থেকে হুকুম-আহকাম খুঁজে বের করে সাধারণের পক্ষে আমল করা সহজ ছিল না। এমতাবস্থায় ইসলাম একটি দুর্বোধ্য নীতি নিয়ে এসেছে- এ ধারণা দূরীভূত করার জন্য ইসলামি আইন-বিধান সুসংবদ্ধ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এসব প্রয়োজনে সাহাবীদের যুগেই ফিক্হ শাস্ত্রের উদ্ভব হয়। তবে তাবি'ঈনের যুগে শাস্ত্রাকারে এর সংকলন শুরু হয়। এরপর তাবি-তাবি'ঈনের যুগে তথা আব্বাসীয় খিলাফতকালে বিধিবদ্ধ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফিক্হ শাস্ত্রের ব্যাপক সংকলন ও সম্পাদনা সম্পন্ন হয় ।


ফিক্হ শাস্ত্র পাঠের উপকারিতা

ফিক্হ শাস্ত্র পাঠ করলে ইসলামি আইন-কানুন তথা শরীআতের যাবতীয় বিধি-বিধান জানা যায়। অর্থাৎ ফিক্হ শাস্ত্র পাঠে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সম্পর্কে শরীআতের বিধানসমূহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় ।


ফিক্হ শাস্ত্রের মূল উৎস বা ভিত্তি

ফিক্হ শাস্ত্রের মূল উৎস বা ভিত্তি চারটি। (ক) কুরআন, (খ) হাদিস, (গ) ইজমা ও (ঘ) কিয়াস। প্রথম দুটির ওপর পরবর্তী দুটি নির্ভরশীল।

(ক) কুরআন

শরীআতের প্রধান উৎস কুরআন মাজীদ। এটি শরীআতের অকাট্য দলিল। এর ওপরই শরীআতের মূল কাঠামো দণ্ডায়মান। কুরআনে শরীআতের উৎস হিসেবে প্রায় পাঁচ শতাধিক আয়াত রয়েছে।

(খ) হাদিস

শরীআতের উৎস হিসেবে সুন্নাহ বা হাদিসের স্থান দ্বিতীয়। আল-কুরআন হচ্ছে শরীআতের মূল; আর হাদিস এর ব্যাখ্যা । কুরআন মাজীদে শরীআতের সকল বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। আর হাদিস ঐ সব বিষয়ের বিশ্লেষণ। যেমন সালাত আদায় করা ফরয। তবে কিভাবে আদায় করতে হবে কুরআনে তার উল্লেখ নেই। হাদিসে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

(গ) ইজমা

শরীআতের তৃতীয় উৎস ইজমা। কুরআন ও হাদিস সম্পর্কে গভীর জ্ঞানসম্পন্ন আলিমগণের শরীআতের কোন সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে একমত হওয়াকে ইজমা বলে। বহু নতুন প্রশ্নের মীমাংসা প্রসঙ্গে সাহাবী, তাবিঈ ও তাবিঈ-তাবিঈনদের এরূপ একমত হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়। যে সকল বিধানে ঐকমত্য স্থাপিত হয়েছে, বিশেষত সাহাবীদের ঐকমত্যযুক্ত বিধানসমূহ মুসলমানদের পক্ষে অবশ্য পালনীয়।

(ঘ) কিয়াস

শরীআতের চতুর্থ উৎস কিয়াস। যে বিষয় সম্পর্কে কুরআন, হদিস ও ইজমায় সুস্পষ্ট বিধি-বিধান পাওয়া যায় না, সে ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের মধ্যে প্রদত্ত অনুরূপ প্রশ্নের মীমাংসাকে ভিত্তি করে যুক্তি প্রয়োগে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, এ ধরনের যুক্তি প্রয়োগকে কিয়াস বলা হয়। সাহাবী, তাবিঈ ও তাবি-তাবিঈগণ এ পদ্ধতিতে শরীআতের বহু নতুন নতুন প্রশ্নের সমাধান দিয়েছেন। এটি কুরআন ও হাদিসের সমতুল্য নয়; বরং সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান ।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *