Home » » হাজিব আল মনসুর

হাজিব আল মনসুর

হাজিব আল মনসুর

তৃতীয় আব্দুর রহমানের পর স্পেনের শাসন ক্ষমতায় বসেন খলিফা দ্বিতীয় হাকাম (৯৬১-৭৬)। দ্বিতীয় হাকামের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হিশাম (৯৭৬-১০০৯) ১২ বছর বয়সে সিংহাসন লাভ করেন। রাজমাতা সুলতানা সুবাহ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী আল-মুশাফি ও রাষ্ট্রাধ্যক্ষ আবু আমির মুহম্মদের উপর। আবু আমির মুহম্মদ পরবর্তীতে হাজিব বা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ‘আল-মনসুর’ উপাধি ধারণ করেন এবং স্পেনের ইতিহাসে তিনি ‘হাজীব আল-মনসুর’ নামেই অধিক পরিচিত। হিশাম খলিফা হলেও প্রকৃত ক্ষমতা আল-মনসুরের হাতেই চলে গিয়েছিল। তিনি রাজবংশে জন্ম গ্রহণ না করেও এবং রাজা বা শাসক না হয়েও ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।


আল-মনসুরের পরিচয় ও প্রাথমিক জীবন : 

আল-মনসুর ৯৪২ সালে কর্ডোভায় অতি সাধারণ এক আরব পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেন। এরপর বিচারপতি মুহম্মদ আল-সলিমের অধীনে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি তাঁর সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে অতি শীঘ্রই সুলতানা সুবাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ৯৬৭ সালে তিনি তাঁকে বালক খলিফা হিশামের তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেন। এরপর তিনি তাঁর দক্ষতা ও মেধার মাধ্যমে বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেন।


‘হাজিব’ পদ লাভ : 

সে সময়ে খলিফা হিশামের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মুশাফি। কিন্তু তার বদমেজাজ ও রুক্ষ আচরণের কারণে আমত্যবর্গ ক্ষুব্ধ হয়। অন্যদিকে আবু আমীর মুহম্মদ তার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা, ভালবাসা ও খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি সেনাপতি গালিবের কন্যাকে বিবাহ করেন এবং রাজকীয় তত্ত্বাবধানে এই বিবাহ সম্পন্ন হয়। এতে তাঁর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায় এবং সুলতানা সুবাহর অনুমােদন নিয়ে আল-মুশাফিকে অপসারণ করে গালিবকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেন। ৯৮১ সালে গালিব ও আবু আমির মুহম্মদ একত্রে লিওনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে গালিব নিহত হন। এরপর আবু আমির রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করে ‘আল-মনসুর’ (বিজয়ী) উপাধি গ্রহণ করে ‘হাজিব' বা প্রধানমন্ত্রী পদ লাভ করেন। হিশামের অভিভাবক হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় সকল কার্য সম্পাদন করেন। খলিফার নামের সঙ্গে মুদ্রা, খুতবা ও রাজকীয় ফরমানে নিজের নাম সংযুক্ত করেন। এভাবে তিনি হাজিব হলেও স্পেনের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।


আলিমদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা : 

সুলতানা সুবাহর সাথে কথিত সম্পর্ক নিয়ে তিনি সমালোচনার শিকার হন। ফকীহগণ তাঁকে ধর্মদ্রোহী বলে আখ্যা দেয় এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করে। ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে গেলে ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁসি ও নির্বাসন দেয়া হয়। পরে তিনি বিচারক ও আলিমদের খুশী রাখার জন্য আল-হাকামের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক দর্শনের গ্রন্থসমূহ জ্বালিয়ে দেন। এছাড়া তিনি তাদের সমর্থন লাভের জন্য স্বহস্তে কুরআনের অনুলিপি করেন। 


সেনা সংস্কার : 

সে সময় সেনাবাহিনীতে বহু জাতির লোকদের সংমিশ্রণ থাকায় সেনাবাহিনীতে গোত্ৰ-কলহ দেখা দেয়। তিনি গোত্ৰ-কলহপ্রিয় সেনাদের অপসারণ করেন। আফ্রিকান, সিউটার বার্বার, সুদানী ও উত্তর অঞ্চলের খ্রিস্টানদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগদানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করেন। সেনাদের পর্যাপ্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতেন। এভাবে তিনি সেনাবাহিনীতে শৃংখলা আনয়ন করেন। 


সমরাভিযান : 

ইবনে খালদুনের মতে, তিনি খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ৫২টি অভিযান প্রেরণ করেন এবং এর একটিতেও পরাজিত হননি। তিনি লিওনের রাজা তৃতীয় রামিরো ও নাভারের রাজা সাঞ্চোকে পরাজিত করে লিওন ও নাভারেকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন। পরে তৃতীয় রামিরোর উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় বারমুডো বিদ্রোহ করলে তাকেও পরাজিত করা হয়। তিনি গ্যালিসিয়ানদেরকেও পরাজিত করেন। কাউন্ট বোরেলকে বিতাড়িত করে বার্সিলোনা জয় করেন। তিনি উত্তর আফ্রিকাতেও কয়েকটি স্বার্থক অভিযান চালান। এসব অভিযানের ফলে সাম্রাজ্যের সীমানা পিরেনীজের উত্তর অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। 


উত্তর আফ্রিকায় অভিযান : 

৯৮৫ সালে আল-মনসুরের সেনাপতি ইদ্রিসিয় শাসক হাসান ইবনে গানের রাজ্য অবরোধ করেন এবং তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। তিনি কর্ডেভায় প্রেরিত হন এবং সেখানে তাঁকে হত্যা করা হয়। ৯৯৭ সালে জিরি বিন আতিয়া আল-মাগরিবি কর্ডোভার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাঁকে হত্যা করা হয় এবং এর মধ্য দিয়ে সমগ্র মরক্কো ও পশ্চিম আফ্রিকায় আল-মনসুরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। জিরি বিন আতিয়ার উত্তরাধিকারী আল-মুইযও কর্ডোভার কঠোর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। আল-মনসুর খ্রিস্টান স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য জানাতা ও সিন্‌হাজাহ গোত্রের নেতাদের স্পেনে নিয়ে আসেন। এছাড়া তাদের মধ্য থেকে অসংখ্য সৈন্য তার বাহিনীতে ভর্তি করা হয়। এক সময়কার ফাতিমীয় অনুগত সেনাবাহিনী উমাইয়া সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার কারণে তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং তারা আল-মনসুরের পরবর্তী সময়ে স্পেনের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে থাকে।


কৃতিত্ব :

তৃতীয় আব্দুর রহমানের পর তিনিই ছিলেন দশম শতাব্দীর ইউরোপের শ্রেষ্ঠ সমরনায়ক ও রাজনীতিবিদ। সে। সময় উত্তর অঞ্চলের খ্রিস্টানগণ তাঁকে ছাড়া অন্য কোন নরপতিকে এত বেশি ভয় করত না। তিনি কৃষি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য ও যাতায়াতের উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি বংশগত আভিজাত্য ও কৌলিন্য প্রথা রহিত করেন। সামন্ত প্রথা ও জায়গীর প্রথা মূলোৎপাটন করেন। রাস্তাঘাট ও পুল নির্মাণ ও সংস্কার সাধন করেন। বহু হাসপাতাল, সেনানিবাস, অট্টালিকা ও মসজিদ নির্মাণ করেন। কর্ডোভা মসজিদের পুন:সংস্কার সাধন করেন। তিনি মদিনাত আল-যাহিরা নির্মাণ করেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করেন। ডোজি বলেন যে, আল-মনসুর মুসলিম স্পেনে যে শক্তি ও সমৃদ্ধি আনেন মহামতি তৃতীয় আব্দুর রহমানের পক্ষেও তা সম্ভব হয়নি। তাঁকে বলা হয় দশম শতাব্দীর বিসমার্ক। বিসমার্ক (১৮৭০-৯০) যেভাবে যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে জার্মানীকে একত্রিত করেন (১৮৭১) হাজিব আল-মনসুরও তেমনি যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে মুসলিম স্পেনের সংহতি বজায় রাখেন। ১০০২ সালে তার মৃত্যু হয় এবং মদিনা-তুস-সলিমে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর যোগ্য শাসক বা প্রশাসকের অভাবে উমাইয়াদের পতন রোধ করা যায়নি।


পরিশেষে বলা যায়, খলিফা দ্বিতীয় হিশাম (৯৭৬-১০০৯) ১২ বছর বয়সে সিংহাসন লাভ করেন। তার শাসনকালে প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় আল-মনসুরের হাতে। আল-মনসুর ৯৪২ সালে কর্ডোভায় অতি সাধারণ এক আরব পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেন। আল-মনসুর তাঁর দক্ষতা ও মেধার মাধ্যমে বিভিন্ন। রাজকীয় পদ অলংকৃত করার পর সবশেষে হাজিব পদে আসীন হন। খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ৫২টি অভিযান প্রেরণ করে প্রত্যেকটিতেই তিনি বিজয়ী হন। তিনি মদিনাত আল-যাহিরা নির্মাণ করেন। তাঁকে বলা হয় দশম শতাব্দীর বিসমার্ক। ১০০২ সালে তাঁর মৃত্যু হয় এবং মদিনা-তুস-সলিমে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,৫০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,০০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,০০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১৫,০০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

৭৯৬, হাজী টাওয়ার,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *