কার্য বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য
কার্য বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যাবলি (Purposes/objectives of job analysis)
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য মানবীয় উপাদান বা কর্মী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কর্মী সামগ্রীক প্রতিষ্ঠানকে সচল ও গতিশীল রাখে। এই কর্মীর কাজের উপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। একজন কর্মী কি কাজ করবে, কিভাবে ও কখন করবে এবং উক্ত কাজ সম্পাদনে কর্মীর দক্ষতা, যোগ্যতা ও কি রকম অভিজ্ঞতার প্রয়োজন তা নির্ধারণ করাই মূলত কার্য বিশ্লেষণের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও আরো যে সকল উদ্দেশ্যাবলি অর্জনে কার্য বিশ্লেষণ করা হয় সেগুলো নিম্নরুপ:
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জন (Achievement of organizational goals): প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গড়ে উঠে। আর এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট কাজ নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। কাজেই প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক লক্ষ্য অর্জনের বিভিন্ন ধরনের তথ্যের প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে কার্য বিশ্লেণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে সংগ্রহ করা হয়।
কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন (Recruitment & Selection): প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে মানব সম্পদ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। মানব সম্পদ বা কর্মী ছাড়া প্রতিষ্ঠান একেবারে অচল। যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী বাহিনী যত দক্ষ ও কর্মঠ সে প্রতিষ্ঠান তত উন্নত। এজন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজের বিপরীতে সঠিক মানের ও পরিমানের কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন করতে হয়। একাজ সম্পাদনে বিভিন্ন ধরনের যেসকল তথ্যের প্রয়োজন হয় কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা পাওয়া যায়।
সংগঠন কাঠামো (Organization Structure): কার্য বিশ্লেষণের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল সংগঠন কাঠামো ঠিক করা। কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্যান্য ক্ষেত্রের মত শ্রম বিভাগ সম্পর্কেও সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায় । শ্রম বিভাগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য সময়মত পাওয়া যায় বলে সংগঠন কাঠামো
নির্ধারণ করা সহজ হয়। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা (Training arrangement): কর্মরত পুরাতন কর্মীদের কার্য সম্পাদনের পদ্ধতি ও কৌশল উন্নয়ন এবং নতুন কর্মীদের কার্য সম্পর্কে জ্ঞান দানের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী তার কাজের ধরণ, বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি, কার্য পরিবেশ এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর এজন্য যে সকল তথ্যের প্রয়োজন হয় কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা সহজে পাওয়া যায়।
কার্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ (Comparative analysis of job): কার্য বিশ্লেষণের আর একটি উদ্দেশ্য হলো কার্যের মধ্যে পারস্পরিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা। একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কর্মী বিভিন্ন পদে থেকে নানা মুখী কর্ম সম্পাদন করে থাকে। কাজেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন পদ ও পদের আওতাভুক্ত কর্ম সম্পাদনের জন্য অধিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নিরুপণ করার জন্য কার্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরী।
কর্ম সম্পাদন মূল্যায়ন (Performance appraisal): প্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা যাচাই করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিকে কর্ম সম্পাদন মূল্যায়ন বলে। কর্মরত কর্মীদের কার্য মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত। এ কাজটি যথাযথ ও সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য কার্য বিশ্লেষণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
নির্দিষ্ট পদের লক্ষ্য নির্ধারণ (Determining the objective of particular job): প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্ৰীক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে বিভিন্ন বিভাগ ও উপ-বিভাগের উপর। কাজেই বিভাজিত বিভিন্ন বিভাগ ও উপ-বিভাগ এবং কর্মরত বিভিন্ন কর্মী কখন, কি পরিমাণ কাজ করবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কার্য বিশ্লেষণে প্রাপ্য নির্যাস তথ্য দ্বারা সহজে বিভিন্ন পদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা যায়।
কর্মীদের বদলি ও পদোন্নতি (Transfer & Promotion): মাঝাড়ী ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের অফিসে বিভিন্ন বিভাগ ও শাখা অফিস থাকে- যেখানে বিভিন্ন যোগ্যতার কর্মী বিভিন্ন পদে নিয়োজিত থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর কর্মীদের কার্য সন্তুষ্টি ও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে কর্মীদের কর্মস্থল পরিবর্তন এবং বর্তমান পদ থেকে অধিকতর সুযোগসুবিধার পদে প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। কার্য বিশ্লেষণ দ্বারা এ কাজটি নিয়মমাফিক সম্পাদন করা যায়।
বেতন ও মজুরি পদ্ধতি নির্ধারণ (Method of Salary & Wage Payment): প্রতিষ্ঠানের বেতন ও মজুরি পদ্ধতি নির্ধারণ কার্য বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয়। এটি প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয় বিধায় একাজে সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে কার্য বিশ্লেষণ অত্যাবশ্যক।
ভুল বুঝাবুঝি নিরসন (Reducing misunderstanding): প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক অবস্থা সম্পর্কে অথবা কার্য সম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারণার অভাবে কর্মরত কর্মীদের মাঝে অথবা কর্মীদের সাথে মালিক পক্ষের ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এ ধরণের অনাকাঙ্খিত অবস্থা যাতে না ঘটে সে জন্য কার্য বিশ্লেষণ করা হয়।
কার্য পরিবেশ উন্নয়ন (Development of Working environment): প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের কার্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন পড়ে। কার্য বিশ্লেষণ কর্মীদের সমস্যাবলি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরে এবং কর্মীদের বিভিন্নমূখী সুযোগ-সুবিধাসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারনের জন্য কার্য বিশ্লেষণ উত্তম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত।
কাৰ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে উল্লেখিত উদ্দেশ্যসমূহ অতি সহজে অর্জন করা যায়। মোট কথা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক উন্নয়নে কার্য বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions