দারিদ্র্য কাকে বলে
দারিদ্র্যের সংজ্ঞা (Definition of poverty)
দারিদ্র হচ্ছে অর্থনীতির একটি নেতিবাচক অবস্থা। মানুষের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, অসচ্ছলতা ও অক্ষমতা হলো দারিদ্র্য। আভিধানিক অর্থে, দারিদ্র্য' বলতে অভাব বা অনটনকেই বুঝায়। দারিদ্র মানে মৌলিক সামর্থ্যের অভাব। ন্যূনতম খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। আয়ের স্বল্পতা, জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থতা, নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগের অভাবের মাধ্যমে দারিদ্রের প্রকাশ ঘটে।
দারিদ্র্য পরিমাপে এবং এর স্বরূপ বিশ্লেষণে ‘দারিদ্র সীমা' ধারণাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বব্যংকের Poverty and Shared Prosperity 2016: Taking on Inequality প্রতিবেদনে দৈনিক যাদের উপার্জন ১.৯ মার্কিন ডলারের (১৫২ টাকা) কম তাদেরকে দরিদ্র বলে অভিহিত করা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী গিলিনের মতে, “দারিদ্র এমন একটি অবস্থা যাতে কোনো ব্যক্তি তার সমাজের অন্যদের সমমানে জীবন যাপন করতে পারে না এবং সে কারণে কার্যকর সামাজিক ভূমিকা পালনের জন্য দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতা এবং দক্ষতা অর্জনে অক্ষম।”
একটি দারিদ্র পীড়িত সমাজে কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন: ক্ষুধার্ত মানুষ আছে, তাদের পর্যাপ্ত খাদ্য নেই; মানুষের প্রয়োজনীয় বস্ত্র, মানসম্মত বাসস্থান নেই; রোগাক্রান্ত মানুষ আছে, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা/সক্ষমতা নেই; কর্মক্ষম মানুষ আছে, তাদের কর্মসংস্থান নেই; বাজার আছে, ব্যবসায়ের পুঁজি নেই; দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যবস্থা নেই, কথা বলার মানুষ আছে, বাকস্বাধীনতা নেই; দেশে সম্পদ আছে কিন্তু এর যথাযথ ব্যবহার নেই। সার্বিক বিচারে সম্পদ, শিক্ষা, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, এবং স্বাধীনতা থেকে বঞ্চনা ও বিচ্ছিন্নতা হচ্ছে দারিদ্র। বস্তুত দারিদ্র্য কেবল আর্থিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত নয়। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনগ্রসরতা হচ্ছে দারিদ্র।
দারিদ্রের ধরন (Types of poverty)
সংজ্ঞা অনুসারে দারিদ্রকে তিনটি প্রধান স্তরে বিভক্ত করা যায়। এগুলো হচ্ছে: (১) সাধারণ অর্থে দারিদ্র্য, (২) আপেক্ষিক দারিদ্র্য এবং (৩) চরম দারিদ্র।
১। সাধারণ অর্থে দারিদ্র (General poverty): সাধারণ অর্থে দারিদ্র হচ্ছে অর্থনীতির এমন একটি পর্যায় বা অবস্থা যেখানে ব্যক্তি বা পরিবার কোনোমতে তাদের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করতে সক্ষম হয়। দৈনন্দিন জীবনের ন্যূনতম চাহিদার অতিরিক্ত কিছু তারা মেটাতে পারে না বা সচ্ছল জীবনযাপন করতে সক্ষম হয় না।
২। আপেক্ষিক দারিদ্র (Relative poverty): সমাজের অন্যদের অপেক্ষা অনগ্রসর বা নিম্নতর আর্থিক অবস্থাকে আপেক্ষিক দারিদ্র্য বলা হয়। উন্নত জীবনযাপনের উপকরণ সংগ্রহের আর্থিক ক্ষমতার তারতম্য হল আপেক্ষিক দারিদ্র্য। যেমন: একজন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বাস করে; অপরজনের ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা আছে, এর বেশি তার সঙ্গতি নেই। এখানে দ্বিতীয়জন প্রথমজন অপেক্ষা দরিদ্র। আবার পঞ্চাশ বছর আগে বাংলাদেশের দারিদ্র্য এবং বর্তমানের দারিদ্র্যের রূপ এক নয়। তেমনি কোনো উন্নত দেশের দারিদ্র্য আর বাংলাদেশের দারিদ্রেও ভিন্নতা রয়েছে। এটিও আপেক্ষিক দারিদ্র।
৩। চরম দারিদ্র্য (Absolute poverty): চরম দারিদ্র বলতে এমন একটি আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে বোঝায় যেখানে মানুষ মৌলিক চাহিদাসমূহ সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে না। চরম দরিদ্র মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়েজানীয় সম্পদ, সক্ষমতা ও স্বাধীনতা থাকে না। এমনকি চরম দরিদ্র মানুষ দৈনিক ১৫০ টাকা উপার্জন করতে পারে না। চরম দারিদ্রের পরবর্তী স্তর হল নিঃস্বতা। নিঃস্ব মানুষের অবলম্বন ভিক্ষাবৃত্তি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions