সংস্কৃতির উপাদান গুলো কি কি
কোনো একক বিষয় সংস্কৃতির উপাদান নয় বরং অনেকগুলো বিষয় বা উপাদান নিয়ে সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এসব সাংস্কৃতিক উপাদান আমাদের সমাজেরই অংশ। নিম্নে সংস্কৃতির কয়েকটি উপাদান আলোচনা করা হলো:
(১) প্রতীক বা সংকেতসমূহ (Symbols): প্রত্যেক সংস্কৃতিই কিছু প্রতীক বা সংকেত দ্বারা সন্নিবেশিত যা ইশারা, অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়াকে নির্দেশ করে থাকে। আদিম কাল থেকেই এগুলো সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে পরিচিত।
(২) ভাষা (Language): ভাষাই সম্ভবত প্রতীকসমূহের পূর্ণাঙ্গ সারণি যা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে। গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভাষা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
(৩) আচরণবিধি (Norms): সংস্কৃতির পৃথকীকরণ সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয় আচরণবিধি বা আদর্শ আচরণ। দুই ধরনের আচরণবিধি সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে পরিচিত। যথা- (ক) আনুষ্ঠানিক আচরণবিধি এবং (খ) অনানুষ্ঠানিক আচরণবিধি ।
(৪) আচার-অনুষ্ঠান (Rituals): ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির অনুষ্ঠানের মাত্রা, অনুষ্ঠান পালনের পদ্ধতি, বিশেষ অনুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান থাকলেও এগুলো সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
(৫) পরিবর্তিত আচরণবিধি ও বিশ্বাস (Changing Norms and Beliefs) : সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের আচার- আচরণ এবং বিশ্বাসের ধরনেরও পরিবর্তন ঘটে থাকে। এসব পরিবর্তিত আচার আচরণএবং বিশ্বাস সংস্কৃতির উপাদান।
(৬) মূল্যবোধ (Values) : মূল্যবোধ সংস্কৃতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা মানুষকে ভাল ও মন্দের পার্থক্য শেখায় ।
(৭) নৈতিকতা (Ethics): নৈতিকতা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম। কর্মঠ, নিরলস পরিশ্রমী, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা অনেক সংস্কৃতিরই অংশ।
(৮) হস্তশিল্প (Artifacts): হস্তনির্মিত জিনিসপত্র সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। কোনো সামজের কৃষ্টি, শিল্পকলা ইত্যাদি হস্তশিল্পের মাধ্যমে ফুটে উঠে যা সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে পরিচিত।
নৃবিজ্ঞানী ক্লার্ক উইজলার সংস্কৃতির কতকগুলো উপাদানের কথা বলেছেন। যথা:
(১) ভাষা: প্রত্যেক সমাজেই ভাবের আদান-প্রদান হয় ভাষার মাধ্যমে। ভাষা একটি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধি দান করে। ভাষার মাধ্যমে সংস্কৃতির অন্যান্য উপাদানসমূহের মধ্যেও যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
(২) বস্তুগত বৈশিষ্ট্য: মানুষের বাসস্থান, পোষাক পরিচ্ছদ, আসবাবপত্র এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য অন্যান্য জিনিসপত্র সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
(৩) শিল্পকলা: শিল্পকলার মাধ্যমে একটি সমাজের হাজার বছরের ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ঐহিত্যগত উপাদান, কারুকার্যমণ্ডিত জিনিসপত্র, লোকগান, নৃত্য ইত্যাদি যা শিল্পকলার অংশ তা সংস্কৃতির উপাদান ।
(৪) পৌরাণিক কাহিনী ও বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান: কোনো জাতিগোষ্ঠীর পৌরাণিক কাহিনী, যুদ্ধের বিজয়গাথা, মহাপুরুষের আগমন, দার্শনিক সত্য, বিজ্ঞানের আবিষ্কার ইত্যাদি বিষয় সংস্কৃতির উপাদান ।
(৫) ধর্মীয় আচার-আচরণ: ধর্মীয় আচার-আচরণ সামাজিক আচার-আচরণকে প্রভাবিত করে। তাই কোনো সংস্কৃতির অনেক উপাদানই সে সংস্কৃতির ধর্মীয় রীতিনীতির মাধ্যমে প্রবেশ করে থাকে। আমাদের দেশে অনেক ধর্মীয় আচার- আচরণ সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
(৬) পরিবার এবং সামাজিক ব্যবস্থা: সাধারণত পরিবার এবং সামাজিক অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আচার আচরণসমূহ পালন করা হয়ে থাকে। তাই বলা যায়, পরিবার এবং সামাজিক ব্যবস্থা সংস্কৃতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
(৭) সম্পত্তি: সম্পত্তিও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়।
(৮) সরকার: সরকার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সংস্কৃতির অপরিহার্য উপাদান।
(৯) যুদ্ধ: যুদ্ধবিগ্রহ, যুদ্ধের কলা-কৌশল, জয়-পরাজয় ইত্যাদি সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে স্বীকৃত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions