যাকাতের নিসাব কি
সারা বছর যার কাছে নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য থাকে অথবা এর সমপরিমাণ টাকা থাকে এরূপ প্রত্যেক মুসলমানদের ওপর যাকাত ফরয। ধনীর সম্পদের ওপরে বছরে শতকরা আড়াই ভাগ যাকাতের হার নির্ধারিত হয়েছে। মজুদকৃত অর্থ নিসাব পরিমাণ না হলে যাকাত দিতে হয় না। কেবল নগদ টাকার ওপরই যাকাত ফরয নয়, মুসলমানদের অনেক সম্পদের ওপরই যাকাত ফরয। খেতের ফসল, গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা এবং সোনা, রুপা প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু ও ব্যবসায়িক পণ্যদ্রব্যেরও যাকাত দিতে হয়। যে সমস্ত জিনিসের যাকাত দিতে হবে, সে সমস্ত জিনিসের মূল্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি থাকতে হবে। কারও সঞ্চয়ের পরিমাণ রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা ও সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ হলে অথবা অনুরূপ অর্থ থাকলে যাকাত দিতে হয়। সকল প্রকার পণ্যের বেলায় রূপার মান হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করে নিসাব বা পরিমাণ হিসাব ঠিক করা হয় ।
যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাত
যাকাত ধনবান মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরয। ইসলামে যাকাত রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎস। যাকাত আদায় ও বণ্টনের জন্য রাষ্ট্রীয় বিভাগ ছিল। কোন লোক ব্যক্তিগতভাবে এটি আদায় ও ব্যয় করলে এর পুরোপুরি হক আদায় হয় না। কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক এটি আদায় ও খরচ করতে হবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে : “যাকাত কেবল মিসকীন ও অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং যাকাত সংগ্রহে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের এবং যাদের অন্তরকে (আল্লাহর দিকে) আকৃষ্ট করা প্রয়োজন তাদের জন্য এবং বন্দিদের মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য আল্লাহর পথে- এবং মুসাফিরের জন্য এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তাওবা ৯ : ৬০)
কুরআনে উল্লিখিত এ আটটি খাতেই যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। যথা-
- ফকির অর্থাৎ যারা একেবারে নিঃস্ব নয়; কিন্তু যাদের মালের পরিমাণ নিসাবের কম, তাদের এ শ্রেণীতে গণ্য করা হয়।
- মিসকীন বা বিত্তহীন লোক যার কিছুই নেই। মিসকীন শব্দের অর্থ অচল বা অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, অন্ধ ও বিকলাঙ্গ ব্যক্তিরা এ পর্যায়ভুক্ত।
- যাকাত সংগ্রহকারী কর্মচারীবৃন্দ। এ সকল কর্মচারীর জন্য যাকাত তহবিল থেকে ব্যয় করা যাবে ।
- সত্যের সন্ধানী ব্যক্তিগণ। যে সমস্ত ব্যক্তি ইসলামের প্রতি অনুরাগী, কিন্তু অর্থের অভাবে সেই সত্যতা প্রকাশ করতে সক্ষম নয়, তাদের যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য প্রদান করা যায়। ইসলাম গ্রহণ করার ফলে যারা নিজস্ব বিষয়-সম্পত্তি হারিয়েছে তাদেরও যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে।
- বন্দিদের মুক্তিদানের ব্যাপারে তাদের মালিকদের যাকাত তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করা যায়।
- ঋণ পরিশোধে অসমর্থ লোক। সমাজে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গকে ঋণমুক্ত করার জন্য এক-অষ্টমাংশ ব্যয় করা যেতে পারে। কিন্তু এ অর্থ এমনভাবে প্রদান করতে হবে যাতে অলসতার প্রশ্রয় দেওয়া না হয়।
- বিপদগ্রস্ত ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছবার জন্য সাহায্যের মুখাপেক্ষী প্রথিক। প্রবাসে অবস্থানকালে অর্থের অভাবের কারণে মুসাফিরগণ বিপন্ন হয়ে পড়লে তাদের যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য করা যায়।
- ইসলামের রক্ষা ব্যবস্থা। অর্থাৎ ফি-সাবিলিল্লাহি বা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা যেতে পারে। জিহাদে যোগদানকারীকেও যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।
যাকাত ফরয হওয়ার শর্ত
নিম্নলিখিত শর্তে একজন মুসলমানের প্রতি যাকাত ফরয। যেমন-
- যাকাতদাতাকে মুসলমান হতে হবে;
- যাকাত প্রদানকারীকে বুদ্ধিমান হতে হবে;
- যাকাত প্রদানকারীকে স্বাধীন হতে হবে, পরাধীন ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয নয়;
- যাকাত প্রদানকারীকে বালেগ হতে হবে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয নয়;
- নিসাবের মালিক হতে হবে। নিসাবের কম হলে যাকাত ফরয নয়;
- ঋণমুক্ত হতে হবে । ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তির ওপর যাকাত দেওয়া ফরয নয়;
- নিসাবের মালিক থাকা অবস্থায় সম্পদ পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হতে হবে; পাগল, অমুসলমানের ওপর যাকাত ফরয নয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions